করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আর্থিক সমস্যাসহ অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। অনেকেই দৈনন্দিন খরচের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করতেন, তাদের অনেকেই হারিয়েছেন কাজ। এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করছেন এ নিয়ে এসবিএস বাংলার সাথে কথা বলেছেন তারা।

international students rental issues

International students are facing many issues. Source: Getty Images

গত দু'দশক ধরে অস্ট্রেলিয়া পড়াশোনার জন্য অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের মত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার টিউশন ফি এবং থাকা-খাওয়ার খরচ অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষাকালীন সময়ে অনেক ছাত্রছাত্রীরা পার্ট-টাইম কাজ করে থাকেন যাতে তাদের খরচ কিছুটা মেটানো যায়। 

কিন্তু বর্তমানে চলমান করোনার প্রকোপে অনেক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের মত কাজ হারিয়েছেন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরাও। 

মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান অমিত বলেন, "অনেক রেস্টুরেন্ট-বার বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তাদের কাজের সুযোগ কমে গেছে। এখানে অনেক ছাত্রছাত্রীরা পার্ট-টাইম বা ক্যাজুয়াল কাজ করে লিভিং এক্সপেন্স মেটাতে পারতো।"

তবে তার ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি দিতে দু'মাস সময় বাড়িয়েছে।  এটুকুই যা স্বস্তি।
Bangladeshi Students in Australia
আসিফুর রহমান অমিত Source: Supplied
মি: অমিত অসমর্থিত সূত্রে শুনেছেন যে কোন কোন ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের কিছু সুবিধা দিচ্ছে যেমন, টিউশন ফি কমানে বা গ্রান্ট দেয়া, ল্যাপটপ-ইন্টারনেট ফ্রি দেয়া ইত্যাদি। 

কিন্তু এরপরেও আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, "এখন তো বাংলাদেশেও সব কিছু বন্ধ, দেশ থেকেও বাবা-মা কিছু পাঠাতে পারছে না। বাসা ভাড়া-বিল এইসব নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।"

করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে মি: অমিত বলেন,"পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বুঝতে পারছি না।"

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্র আইনুন নিশাত তাজওয়ার ব্যাচেলর অফ সাইন্স নিয়ে পড়ছেন। তিনি বাবা মায়ের কাছ থেকে পড়াশোনার খরচ পেলেও ক্যাজুয়াল জব করতেন। এখন করোনার শংকায় বাইরে বের হতে পারছেন না। তাছাড়া তার এজমার সমস্যাও আছে। 

মিঃ তাজওয়ার বলেন, "ডাক্তাররা বলেছেন করোনা আমার জন্য বেশ ক্ষতিকারক হবে।"

বাংলাদেশেও লকডাউন হয়ে যাওয়ার জন্য দেশ থেকে অর্থ আনা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

"বাবা-মা বলছিলো যে আর তো টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না, এখন তোমাদের কি করণীয় ?"
Bangladeshi Students in Australia
আইনুন নিশাত তাজওয়ার Source: Supplied


ইউনিভার্সিটি তাদের কোন সাহায্য করতে পারে কিনা এ বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন বলে জানান তাজওয়ার।

"তারা ( ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ) যদি এই সেমিস্টারের টিউশন ফি কমিয়ে দিতো এবং বাকিটা ফিরিয়ে দিতো, তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে। এগুলো নিয়ে আমাদের স্টুডেন্ট বডি আলাপ আলোচনা করছে। তাছাড়া আমরা এখন অনলাইন ক্লাস করছি, কিন্তু পে করেছি ইন্টারেক্টিভ স্টাডির জন্য। " 

তবে তাজওয়ার তার সিটির বাইরে শহরতলি এলাকাগুলোতে থাকা বন্ধুদের জন্য বিশেষ চিন্তিত।

"সাবারব এলাকায় যারা থাকছে তাদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হবে, সেখানে সিটির মতো অনেক কোলজ, উলওয়ার্থের মতো সুপারমার্কেট নেই, তাছাড়া শুনেছি মেট্রো ট্রেন চলাচলও নাকি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কাজ ও কেনাকাটার জন্য ওরা সমস্যায় পড়বে বেশি।" 

মেলবোর্নের হোমস কলেজে এমবিএ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশী ছাত্রী। তিনি এসবিএস বাংলাকে জানান, করোনার কারণে তিনি তার পার্ট-টাইম কাজটি হারিয়েছেন।  তার স্বামী একটি কুরিয়ার কোম্পানিতে কাজ করলেও তিনি যা আয় করেন তাতে তাদের বাসা ভাড়া এবং অন্যান্য বিল দিতেই শেষ হয়ে যায়। 

ওই ছাত্রী বলেন, "যেহেতু আমাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি নেই, তাই আমরা সরকারের কাছ থেকে কোন আর্থিক সহায়তায় পাবো না। আমাদের সুপার এনুয়েশনে কিছু টাকা জমেছে, কিন্তু জানিনা এটা কিভাবে পাবো।"

বেশ হতাশা নিয়ে ওই ছাত্রী বলেন, "এই অবস্থা আমরা কিভাবে সামলাবো কিছু  উপদেশ দিন, প্লিজ।"

ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের মাস্টার্স অফ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন সাজিদ হাসান।

তিনি জানান, "যারা পার্ট-টাইম বা ক্যাজুয়াল জব করছিলো তারা এখন বাসা থেকে বের হতে পারছে না। তাই তাদের আয়ের পথ বন্ধ।  বাংলাদেশেও তাদের বাবা-মা টাকা পাঠাতে পারছে না। অনেকে সেনসাস ডেটের মধ্যে টিউশন ফি দেবে,  কিন্তু এই এই পরিস্থিতিতে তারা টাকা আনতে পারছে না। ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার বন্ধ।"
Bangladeshi Students in Australia
সাজিদ হাসান Source: Supplied
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সম্পর্কে মিঃ হাসান বলেন, "অস্ট্রেলিয়াতে টিউশন ফি অনেক বেশি, মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে যা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ডলার।   তাছাড়া লিভিং এক্সপেন্স, রেন্ট সবই অনেক বেশি। তো এগুলো সবই ঠিক ছিল, বিশেষ করে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কাজ করে অন্তত লিভিং এক্সপেন্সটা উঠিয়ে ফেলতে পারতো। এখন দেশ থেকে টাকাও আন্তে পারছে না আবার অনেকে কাজ করতে পারছে না। অনেকে যাদের সেভিংস আছে তাই দিয়ে চলছে। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন তাদের সেভিংস শেষ হয়ে যাবে তখন তারা কি করবে এটা নিয়ে সবার মধ্যে বেশ হতাশা আছে।"

বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মিঃ সাজিদ হাসান বলেন যে, তারা চাচ্ছেন যে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ যাতে তাদের টিউশন ফি অন্তত ৪০ ভাগ ফিরিয়ে দেয়, কারণ তারা এখন অনলাইনে ক্লাস করছেন। তাই এই মুহূর্তে টিউশন ফি কমিয়ে দিলে তারা অন্তত তাদের লিভিং এক্সপেন্সটা চালিয়ে নিতে পারবেন।

আরো পড়ুন:

Share
Published 27 March 2020 6:07pm
By Shahan Alam
Presented by Shahan Alam

Share this with family and friends