কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারি ‘ওয়েলফেয়ার সাপোর্ট’ না পেলে আর্থিকভাবে তারা অসহায় হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় কয়েক লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ও বসবাস করেন। ইউনিভার্সিটির টিউশন ফিজ এবং আয়কর প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছর তারা এ দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখেন।
তবে, তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। সোশাল ডিসটেন্সিং নির্দেশনার কারণে বিভিন্ন খাতে কর্ম-সংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ায় এবং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর্থিক চাপের মধ্যে পড়ে গেছেন। ক্যাজুয়াল ওয়ার্কফোর্সের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন।
নর্দার্ন টেরিটোরির চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটির ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইয়ালভিন নুকচেডি এই অর্থনৈতিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“কোভিড-১৯ নজির বিহীন, কেউ এর জন্য কোনো পরিকল্পনা করতে পারে না।”
“পৃথিবীর সবাই এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। আমি যদি কাজ খুঁজে না পাই এবং আমার বাবা-মা যদি আমার জন্য অর্থ পাঠাতে না পারে, তাহলে আমার সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে যাবে।”
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘ইনকাম সাপোর্ট’ প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়ে ফেডারাল সরকারের প্রতি লিখেছেন গ্রিনস সিনেটর মেহরিন ফারুকী।
তাদেরকে পাক্ষিক ৫৫০ ডলারের করোনাভাইরাস সাপ্লিমেন্ট প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“শিক্ষার্থীরা তাদের ভাড়া ও বিল কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। এ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে, তাদের ইউনিয়ন এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের কাছ থেকে আমি অবিশ্বাস্য ও উদ্বেগময় সব ঘটনা শুনছি।”
“অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূরে থাকার কষ্ট তো আছেই, তদুপরি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ইনকাম সাপোর্ট পেমেন্টের জন্য যোগ্য নয় এবং তাদেরকে সরকারের করোনাভাইরাসের প্যাকেজের অন্তর্ভুক্তও করা হয় নি।”
করোনাভাইরাস সাপ্লিমেন্ট বিস্তৃত করার ঘোষণা করেছে ফেডারাল সরকার। ২৩০,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী ইয়ুথ অ্যালাওয়েন্স, অস্টাডি এবং অ্যাবস্টাডির মাধ্যমে এই আর্থিক সহায়তা পাবে। এর পরই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি ওঠে।
এসব পেমেন্ট লাভের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত নয়। এসবিএস নিউজকে তারা বলেন, আর্থিক অনটনে পড়লে তারা কোন ধরনের সহায়তা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত তা নিয়ে তারা বিভ্রান্ত।
মরিশাস থেকে আসা মিস্টার নুকচেডি বলেন, তিনি মানুষের ঘর-বাড়ি এবং বিভিন্ন অফিস পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতেন। এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে তার কাজ কমে গেছে।
“আপনি যে-দেশেই থাকুন না কেন, বেঁচে থাকার জন্য আপনার কোনো না কোনো সহায়তা পাওয়া উচিত।”
দ্য ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ স্টুডেন্টস এবং কাউন্সিল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অস্ট্রেলিয়া উভয়েই সরকারকে চাপ দিচ্ছে ওয়েলফেয়ার সাপোর্ট বাড়ানোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে অধিকতর সহায়তা প্রদানের জন্য।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এসবিএস নিউজকে বলেন একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, বিদেশে বসবাস এবং পড়াশোনার খরচ মেটাতে তারা তাদের বাবা-মায়ের উপরই নির্ভর করেন।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার আগে ঘরে ঘরে গিয়ে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন ভারতীয় শিক্ষার্থী বরুণ কেল। তিনি মেলবোর্নের সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজির মাস্টার্স করছেন। তিনি বলেন,
“আমাদের বাবা-মা আমাদেরকে সহায়তা করার জন্য অবশ্যই আছেন। তবে, কতো দিন আমরা তাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করবো?”
“আমরা এসব বিল কীভাবে পরিশোধ করবো? আমরা কীভাবে ভাড়া পরিশোধ করবো?”
International student Varun Kale. Source: Supplied
কুইন্সল্যান্ডের একটি রিজিওনাল ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী, ২৩ বছর বয়সী জিৎ মুখার্জীরও কাজ কমে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা স্মরণে রেখে সরকারের উচিত তাদেরকে ওয়েলফেয়ার সাপোর্ট প্রদান করার বিষয়টি বিবেচনা করা।
“আমার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি নিয়ে আমি অনেক চিন্তিত।”
“[কিন্তু] আমরাও আমাদের পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত, যারা ঘরে আছে।”
“এটি শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।”
St Vincent's Hospital in Sydney. Source: Getty
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পাক্ষিক ৪০ ঘণ্টা কাজের যে শর্ত রয়েছে তা তুলে নেওয়া হয়েছে সেসব খাত থেকে যেগুলোতে এখন তীব্রভাবে কর্মী-সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
তবে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ওয়েলফেয়ার সাপোর্ট পাবে কিনা এ রকম প্রশ্ন করা হলে ডিপার্টমেন্ট অফ সোশাল সার্ভিসেস এর একজন মুখপাত্র সরাসরি কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন,
“সংসদে পাশ হওয়া প্যাকেজটিতে ... নবাগত রেসিডেন্টদের জন্য অপেক্ষাকাল বাদ দিয়েছে সরকার।”
“এর মানে হলো, করোনাভাইরাসের কারণে এই অর্থনৈতিক মন্দায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট অভিবাসীরা অচিরেই ইনকাম সাপোর্ট পেমেন্ট পাবেন।”
“আরও কিছু অস্থায়ী ভিসাধারীর জন্য স্পেশাল বেনিফিট পেমেন্টের অধীনে ওয়েলফেয়ার সহায়তা প্রদান করা হতে পারে যদি তারা গুরুতর আর্থিক সমস্যার সম্মুখিন হয়।”
ফেডারাল সরকারের টোটাল অর্থনৈতিক রেসকিউ প্যাকেজ এখন ১৮৯ বিলিয়ন ডলারে উপনীত হয়েছে যা কিনা অস্ট্রেলিয়ার জিডিপি-র প্রায় দশগুণের সমান।
সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস-এর ২১ বছর বয়সী নয়নিকা ভট্টাচার্য বলেন, তার কাজও অনেক কমে গেছে।
মিজ ভট্টাচার্য বলেন, এই অনিশ্চিত সময়ের প্রভাব পড়েছে মানুষের আবেগের উপরে। তার পরিবার ওমানে বাস করছেন। তিনি তাদের থেকে দূরে আটকে রয়েছেন।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“এটি অনেক ভয়ঙ্কর, কারণ, আপনার কোনো সাপোর্ট সিস্টেম নেই।”
“এটি একটি রোলার কোস্টার যার মধ্য দিয়ে সবাই যাচ্ছেন, আপনি নিজেকে খুবই বিচ্ছিন্ন অনুভব করবেন।”
অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই অন্যের সঙ্গে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ইনডোর বা অভ্যন্তরে, প্রতি চার বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসে এক জনের বেশি লোক থাকা যাবে না।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন:
READ MORE
ভারতে ৩ সপ্তাহ লকডাউন ঘোষণা