বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়াও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমাতে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমানো হলে স্বাস্থ্য সেবাগুলো কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদেরকে সহজে সেবা দিতে পারবে।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, যেমন, হাত ধোওয়া ও কারও সঙ্গে করমর্দন না করা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এখন ঘরের বাইরে, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া, ৫০০ লোকের বেশি জন-সমাগম এবং ইনডোরে বা অভ্যন্তরীণভাবে ১০০ লোকের বেশি জন-সমাগম নিষিদ্ধ করেছে।
এ ছাড়া, সোশাল ডিস্টেন্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। এর মানে হলো, পরস্পরের মধ্যে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মানুষের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় দেখা-সাক্ষাৎ পরিহার করতে হবে, গণ-পরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ১.৫ মিটার সামাজিক দূরত্ব রাখার কথা মনে রাখতে হবে।
এ ছাড়া, যাদের জন্য দরকার, সেল্ফ-আইসোলেশনে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি চিফ হেলথ অফিসার প্রফেসর পল কেলি এ সম্পর্কে বলেন, দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এ ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে।
সংক্রমণের হার কমাতে স্টেট ও টেরিটোরিগুলো চেষ্ট করছে অন্যান্য দেশে যেমনটি ঘটেছে সে-রকম যেন এখানে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে। যেমন, ইটালিতে হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ছে। যাদের দরকার তাদের সবাইকে তারা সেবা দিতে পারছে না।
যারা সুনিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা সন্দেহ করছেন যে, আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য সেল্ফ-আইসোলেশন বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া, বিদেশ থেকে আগত সবাইকে সেল্ফ-আইসোলেশনে যেতে হবে। শুধুমাত্র বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের এটা করা লাগবে না। তাদেরকে অবশ্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আগেই বলা হয়েছে।
এর আগে, বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদেরকে বলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায় এয়ারপোর্টে নামার পর তারা যেন নিজের গাড়িতে করেই বাড়িতে বা গন্তব্যে যান। এভাবে তারা অন্য লোকদের সংস্পর্শে আসা এড়াতে পারেন। যখন তারা বাড়িতে কিংবা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন, এরপর তাদেরকে অবশ্যই আইন অনুসারে সেখানে অবস্থান করতে হবে।
ব্রিসবেনের জিপি ওয়েন্ডি বার্টন বলেন, এর মানে হলো তারা দোকানে, পার্কে কিংবা অন্য কোথাও জন-গণের সংস্পর্শে যেতে পারবেন না এবং কোনো দর্শনার্থী তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। আর, পারিবারিক কোনো জমায়েতেও তারা যেতে পারবেন না। ড. বার্টন বলেন, তাদেরকে খাদ্য এবং অন্যান্য সেবা প্রদান করা হবে। তারা সেগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন ডেলিভারি ম্যান চলে যাওয়ার পর।
এসব আইন ভঙ্গ করা হলে কাউকে ৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে এবং এমনকি জেলেও পাঠানো হতে পারে।নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিক্লিয়ান আশা করেন, মানুষ এসব মেনে চলবে এবং যদি কেউ তা না মানে, সেক্ষেত্রে তিনি বাকি সবাইকে অনুরোধ করেন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য।
ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ বলছে, বাড়ির উঠানে কিংবা বাগানে তারা যেতে পারবেন। তবে, যারা এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে বাস করেন, তাদেরকে শেয়ার্ড স্পেসে যাওয়ার সময়ে মাস্ক পরিধান করতে হবে।মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি হেরফের করে। বিদেশ-ফেরত যারা নিজেকে সুস্থ্য মনে করেন, তাদের সম্পর্কে ডিপার্টমেন্ট বলছে, তাদের জন্য সার্জিকাল মাস্ক পরিধানের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে, সন্দেহভাজন এবং সুনিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি হলো মাস্ক পরিধান করা।
ঘরে একাধিক ব্যক্তি থাকলে, বলা হচ্ছে, যতোটা সম্ভব দূরত্ব রেখে বাস করতে। যেমন, সম্ভব হলে আলাদা রুমে থাকা এবং আলাদা বাথরুম ব্যবহার করা। দরজার হাতল, পানির ট্যাপ ও বেঞ্চ প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। ড. বার্টন বলেন, যাদের ঘরে শিশু রয়েছে, তাদের জন্য সেল্ফ-আইসোলেশন আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। তখন পরিবারকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, যাদেরকে সেল্ফ-আইসোলেশনে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাদের সবাইকে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমন, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি