সম্প্রতি ঘোষিত পরিবর্তনগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে করোনাভাইরাস সহায়তা উদ্যোগগুলোর অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস সঙ্কটে আর্থিক সংগ্রামের কারণে এখন তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে যেতে বাধ্য হবেন।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং ট্রেজারার জশ ফ্রাইডেনবার্গ সেপ্টেম্বরের পরও কম হারে করেছেন।
এই প্রোগ্রামের উপযুক্ততা লাভের শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে ফেডারাল সরকার। এর মানে হলো, ১.১ মিলিয়ন অস্থায়ী ভিসাধারী এখনও এই সহায়তাগুলো লাভের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না।করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে হাজার হাজার লোক কাজ হারিয়েছেন। তাদেরই একজন হলেন ব্রিসবেন-ভিত্তিক ডেন্টাল টেকনিশিয়ান অ্যাঞ্জেলো ডি ফ্রাঙ্কো।
Angelo Di Franco spoke to SBS News. Source: Supplied
সাবক্লাস-৪৮২ ভিসাধারী ইতালীয় এই ব্যক্তিকে তার নিয়োগদাতা জানিয়েছে, ডি ফ্রাঙ্কো যেহেতু জবকিপার প্রোগ্রামের জন্য উপযুক্ত নন, তাই তার নিয়োগদাতা তাকে আর কাজে বহাল রাখতে পারবে না।
এসবিএস নিউজকে মিস্টার ডি ফ্রাঙ্কো বলেন,
“এ দেশে যারাই কাজ ও সহায়তা করতে আসেন তাদের প্রতি সবার মতো একই রকম আচরণ করা উচিত।”
মাস্টার ডিগ্রিধারী মিস্টার ডি ফ্রাঙ্কো স্ত্রী ও সাত বছর বয়সী এক মেয়ে নিয়ে গত তিন বছর ধরে কুইন্সল্যান্ডে বসবাস করছেন।
৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, তিনি এখন চিন্তা করছেন এই দেশ ছেড়ে চলে যাবেন কিনা। তিনি তার নিজের ও তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন,
“এই সময়টিতে আমি খুবই হতাশ।”
“আমি আদৌ ঘুমাতে পারছি না ... এখন আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমার স্ত্রী, সে জানে না কী করবে। সে বলছে, ‘চলো আমরা চলে যাই; কারণ, আমরা এভাবে বাস করতে পারি না’।”আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত জবকিপার চালু রাখা হবে। আর, এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত করোনাভাইরাস সাপ্লিমেন্ট-সহ জবসিকার চলবে।
Prime Minister Scott Morrison has announced changes to the JobKeeper and JobSeeker payments. Source: AAP
লক্ষ লক্ষ লোক এতে উপকৃত হলেও অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে এর বাইরে রাখায় অভিবাসী সমর্থক-গোষ্ঠীগুলো হতাশ হয়েছে। তারা এসব অস্থায়ী ভিসাধারীকে এতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করে আসছে।
মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স সেন্টারের ডাইরেক্টর ম্যাট কাঙ্কেল বলেন,
“এই সরকার দৃশ্যত অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে দারিদ্র্য-কবলিত হতে বাধ্য করছে।”
“আমরা দেখছি, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করছে। শত শত লোক আমাদের সেন্টারে আসছে তাদের প্রয়োজন মেটানোর উপায় সম্পর্কে জানতে।”
যে-সব অস্থায়ী ভিসাধারী নিজেরা নিজেদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না, তাদেরকে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বিবেচনা করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছিল ফেডারাল সরকার।
গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার অবশ্যই উচিত তার নাগরিক ও বাসিন্দাদেরকে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা।
অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে সুপারঅ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এই সুযোগ ১ জুলাই পর্যন্ত ছিল, এখন এটি বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য স্পেশাল বেনিফিট স্কিমের অধীনে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করতে পারেন।
মিস্টার কাঙ্কেল বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে সরকার যে-সব উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তাতে তারা অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে এসব সুবিধার বাইরে রাখছে। তিনি বলেন,
“ফেডারাল সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে উপার্জন-সহায়তা প্রদান করা না হলে এই সঙ্কট ক্রমান্বয়ে আরও গভীর হবে।”
জবকিপার প্রোগ্রাম নিয়ে একটি ট্রেজারি রিভিউয়ে দেখা গেছে, এই স্কিমটি এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করেছে এবং এর মাধ্যমে চাকুরি ও ব্যবসাগুলো রক্ষা পেয়েছে ও জীবনযাত্রা সুরক্ষা পেয়েছে।
এই সঙ্কটের সময়ে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন কর্মী বেতন-ভর্তুকি পেয়েছেন।
তবে, ফেডারাল বিরোধী দলীয় নেতা রিপোর্টারদেরকে বলেন, জবকিপার চালু করার পরে এই পরিকল্পনার সমস্যাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন,
“ক্যাজুয়াল কর্মী এবং ভিসাধারী ব্যক্তিরা-সহ কম উপার্জনকারী বহু অস্ট্রেলিয়ান কিছুই পাচ্ছেন না।”
কম হারে জবকিপার এবং জবসিকার সহায়তা প্রোগ্রাম ২৭ সেপ্টেম্বরের পরও চালিয়ে যাওয়া হলে এর জন্য খরচ হবে আনুমানিক ১০৩ বিলিয়ন ডলার।
কমপক্ষে ১.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ইতোমধ্যে জবসিকার পেমেন্ট পেয়েছেন।
মিস্টার মরিসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ানদের বুঝতে হবে যে, এই প্রোগ্রাম অস্থায়ী এবং বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য।