গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- অস্ট্রেলিয়া-মুসলিম অধিকার গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে যে রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন বা বর্ণবাদী বৈষম্য আইন ১৯৭৫-এর সেকশন ৯ এবং ১৮-সি-এর অধীনে ফেসবুক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বৈষম্য এবং ঘৃণ্য বক্তব্য (হেইট স্পীচ) প্রচারে সহায়তার জন্য দায়বদ্ধ।
- “তবে এতে শুধু মুসলমানরাই ক্ষতিগ্রস্ত নয়। গবেষণায় স্পষ্টতই দেখা গেছে যে অনলাইন ডানপন্থী চরমপন্থার বৃদ্ধির পেছনে মুসলিমবিরোধী আন্দোলনই প্রধান শক্তি ছিল।”
- ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নির্ভরযোগ্য বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোন গোষ্ঠীকে আক্রমণ করার অনুমতি দেওয়া হয় না, তবে তারা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া-মুসলিম অধিকার গোষ্ঠী ফেসবুকের বিরুদ্ধে রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেয়া ঘৃণ্য বক্তব্য সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক দীর্ঘদিন ধরে ২০১৯ সালের ক্রাইস্টচর্চ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য এবং ইসলামফোবিয়া দূর করার জন্য আরও বেশি কিছু করার প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
অস্ট্রেলিয়ান মানবাধিকার কমিশনের কাছে এক অভিযোগে, দলটি অভিযোগ করেছে যে রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন বা বর্ণবাদী বৈষম্য আইন ১৯৭৫-এর সেকশন ৯ এবং ১৮-সি-এর অধীনে ফেসবুক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বৈষম্য এবং ঘৃণ্য বক্তব্য (হেইট স্পীচ) প্রচারে সহায়তার জন্য দায়বদ্ধ।
তারা ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তাদের বেশ কিছু পেইজ "অতিমাত্রায় নিজেদের ইসলামবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে" নিয়মিত ও বিপজ্জনকভাবে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকান, দক্ষিণ এশীয় এবং এশিয়ার লোকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করার পরেও কোন ব্যবস্থা নেয় না।
অভিযোগকারী গ্রুপটি এর আগে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন মন্তব্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের অভাবকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে আছে যেমন, "মুসলিম আর দা অনলি পিপল অন আর্থ হু উইল আর্ন দেয়ার জেনোসাইড", "ড্রাউন দেম এট বার্থ", এবং "ক্যান উই গো কিল দিস ফা**স ইয়েট"।
অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক বা AMAN-এর উপদেষ্টা রিতা জাবরি-মার্কওয়ে বৃহস্পতিবার বলেন, "আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো ফেসবুক কেবল তখনই পদক্ষেপ নেয় যখন কমিউনিটি অভিযোগ করে।"
"এই পদ্ধতি টেকসই নয় এবং এটি (কমিউনিটির জন্য) অযৌক্তিক বোঝা বাড়ায়।"
আমান (AMAN) ফেসবুককে মার্চ মাসে একটি আইনী চিঠি পাঠিয়েছিল তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে এবং সতর্ক করে দিয়েছিল যে এটি এন্টি-ডিসক্রিমিনেশন আইন অনুসারে দায়বদ্ধ। এ থেকে অনুমান করা যায় যে আমান গত এক বছর ধরে ফেসবুকের সাথে মতামত আদান-প্রদান করে চলেছে।
“অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে মূল্য দিয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আরো উদ্যোগ বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই,” মিজ জাবরি-মার্কওয়েল বলেছিলেন।
“আমাদের কমিউনিটি মসজিদগুলোতে আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং সেইসাথে ব্যক্তি এবং পরিবারগুলোও একই পরিস্থিতির শিকার।"
“তবে এতে শুধু মুসলমানরাই ক্ষতিগ্রস্ত নয়। গবেষণায় স্পষ্টতই দেখা গেছে যে অনলাইন ডানপন্থী চরমপন্থার বৃদ্ধির পেছনে মুসলিমবিরোধী আন্দোলনই প্রধান শক্তি ছিল।”
ক্রাইস্টচর্চ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ফেসবুকে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল, যেখানে ৫১ জন মুসলিম হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এরপর এই প্রযুক্তি জায়ান্টটি অনলাইনে চরমপন্থী বিষয়বস্তু অপসারণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এর মধ্যে শ্বেত জাতীয়তাবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থনকারী পোস্টগুলো অপসারণের বিধি বিধান অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল।
এসবিএস নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেছেন যে তারা এ-আই প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘৃণ্য বক্তব্য চিহ্নিত করতে বিনিয়োগ করেছে এবং ব্যবহারকারীরা তাদের অভিযোগ করার আগেই তারা অন্তত এ ধরণের পোস্টগুলির ৯৭ শতাংশ সনাক্ত করেছেন।
মুখপাত্র আরো বলেছেন, "আমরা ফেসবুকে ঘৃণ্য বক্তব্য অনুমোদন দেই না এবং বিশেষজ্ঞ, অলাভজনক, এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিতভাবে কাজ করছি যাতে ফেসবুককে সবার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে নিশ্চিত করা যায়, সেই সাথে আমরা জানি যে মুসলিমবিরোধী বক্তব্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ বিভিন্ন রূপ নিতে পারে"।
সাম্প্রতিকতম সময়ে ফেসবুক তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদনে বলেছে যে ডিসেম্বর ২০১৯ এবং ২০২০ সালের মধ্যে তারা ঘৃণ্য বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিমান বাড়িয়েছে ৪০০ শতাংশ।
প্ল্যাটফর্মের ঘৃণ্য বক্তব্যের নীতিটি (হেইট স্পীচ পলিসি) বর্ণ, জাতি, জাতিগত উৎস, প্রতিবন্ধীতা, ধর্মীয় অনুষঙ্গ, বর্ণ, যৌন প্রবণতা, লিঙ্গ, লিঙ্গ পরিচয় এবং গুরুতর রোগের ভিত্তিতে মানুষের উপর সরাসরি আক্রমণ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।
তবে এটি অভিবাসন নীতি এবং প্রতিষ্ঠান, ধারণা এবং ধর্মের মতো ধারণাগুলির ওপর "মন্তব্য ও সমালোচনা" করার অনুমতি দেয়। এর অর্থ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নির্ভরযোগ্য বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোন গোষ্ঠীকে আক্রমণ করার অনুমতি দেওয়া হয় না তবে তারা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করতে পারে।
শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আমাদের ভিজিট করুন।
আরও দেখুনঃ