নাগরিকত্ব নিয়ে অটল মোদী, শপথ আম আদমির মুখ্যমন্ত্রীর

ভারতে অধিকাংশ বিরোধী শাসিত রাজ্যে চলেছে সিএএ-এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভ। কিন্তু, তারপরেও যে কেন্দ্র সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়, তা জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিকে, আগের দু’দফার শপথগ্রহণের সময় তা-ও আন্না হাজারকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এ বার সেই রীতি বদলে গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ থাকলেও তিনি আসেন নি। ফলে একেবারে আম আদমি’র মাঝেই শপথ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

AAP Chief Arvind Kejriwal (Photo: AP/Altaf Qadri)

AAP Chief Arvind Kejriwal. Source: AP/Altaf Qadri

 

বারাণসীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সারা দুনিয়া থেকে চাপ সত্বেও সিএএ ও ৩৭০ ধারা নিয়ে অনড় সরকার। এই অবস্থানে অনড়ই থাকবে সরকার। এতদিন শাসক দল বিজেপি নেতারা সিএএ নিয়ে সুর চড়ালেও এনআরসি নিয়ে বারবার বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। বিভিন্ন সভার পাশাপাশি সংসদেও লিখিত বিবৃতি দিয়ে সরকার জানিয়ে দিয়েছে এনআরসি নিয়ে এখনও কোনও চিন্তা ভাবনা করছে না সরকার।

এর মধ্যেই দিল্লি উত্তপ্ত একদিকে ভীম আর্মি এবং অন্যদিকে শাহীনবাগের আন্দোলনকারীদের পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে। একদিকে, চন্দ্রশেখর আজাদের নেতৃত্বে ভীম আর্মির সদস্যরা মান্ডি হাউস থেকে সংসদ পর্যন্ত যাত্রা শুরু করে। অন্যদিকে, অন্তত পাঁচ হাজার শাহীনবাগ-আন্দোলনকারী অমিত শাহ-এর বাসভবন পর্যন্ত মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কয়েকদিন ধরেই খবর ছিল শাহীনবাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে চান অমিত শাহ। কিন্তু শনিবার জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন কোনও পরিকল্পনা নেই।
Indian Prime Minister Narendra Modi speaks during the unveiling of a museum at the old currency building in Kolkata, Eastern India, 11 January 2020.
Indian Prime Minister Narendra Modi. Source: AAP Image/EPA/PIYAL ADHIKARY
শনিবার শাহীনবাগের আন্দোলনকারীরা দিল্লি পুলিসের কাছে মিছিল করার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই মিছিল করে এগিয়ে যান হাজার পাঁচেক আন্দোলনকারী। পুলিসের কথা না শুনেই আন্দোলনকারীরা অমিত শাহ-এর বাড়ির কাছে পৌছে যান। কৃষ্ণ মেনন মার্গে অমিত শাহর বাড়ির আগেই পুলিস ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। ব্যারিকেড পর্যন্ত পৌঁছে যান আন্দোলনকারীরা। পুলিসের সঙ্গে কথা বলেন অন্দোলনকারীরা। তাদের বলা হয় মিছিলেন অনুমতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত আসতে। শেষপর্যন্ত ফিরতে বাধ্য হন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে, রাম মন্দির তৈরির পথে আর বাধা নেই। এবার মন্দির তৈরির গঠিত ট্রাস্টের কাজকর্ম নিয়ে আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার বারাণসীতে শ্রী জগৎগুরু বিশ্বরাধ্য গুরুকুলের এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই তিনি বলেছেন, রামমন্দির তৈরির জন্য শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। সেই ট্রাস্ট দ্রুত কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অযোধ্যর ৬৭ একর জমি রাম মন্দির ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ওই জমি সমস্যা সম্পূর্ণ না মেটা পর্যন্ত কেন্দ্রের হাতেই থাকবে। মন্দির তৈরি হলে ওই জমির মর্যাদা অনেকটাই বেড়ে যাবে।

আর অন্যদিকে ন’বছর আগে লড়াইয়ের শুরু, যেখান থেকে করেছিলেন সেখানে অবশ্য পুরোনো সহযোদ্ধাদের অনেকে আর পাশে নেই। আগের দু’দফার শপথগ্রহণের সময় তা-ও আন্না হাজারকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এ বার সেই রীতি বদলে গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ থাকলেও তিনি আসেন নি। ফলে একেবারে আম আদমি’র মাঝেই শপথ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেই চিরাচরিত শার্ট, প্যান্ট আর অবশ্যই মাফলার। একেবারে চিরচেনা অরবিন্দ জানিয়ে দিয়েছেন, উন্নয়নই কেবল তাঁর রাজনীতির অংশ। তাই নির্বাচন জিততে বিজেপি নেতারা দেশদ্রোহী বা যে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন, সেইসব কিছু তিনি ভুলে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। দিল্লিবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ভারতবর্ষে এক নতুন ধারার রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন। যেখানে কাজের নিরিখে রাজনীতি হবে, ধর্মীয় ভেদাভেদ-হিংসার রাজনীতি নয়। শুধু তাই নয়, দিল্লির যত ভোটার বিজেপি, কংগ্রেস বা অন্যান্য দলগুলিকে ভোট দিয়েছেন তিনি তাঁদেরও মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেছেন কেজরিওয়াল। বলেছেন, আম আদমি পার্টির মতো, বিজেপি-কংগ্রেসের কর্মীদেরও মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কোনও দল বা রং দেখেন না, সবার জন্য, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান।

অনুষ্ঠানে অন্য রাজ্যের কোনও রাজনীতিবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। তবে, রাজনৈতিক সৌজন্যে ত্রুটি রাখেন নি কেজরিওয়াল। নিজের দলের ৬২ জন বিধায়ক তো বটেই, বিজেপির ৮ বিধায়ককেও নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। নিমন্ত্রণ ছিল দিল্লির বিজেপি সাত সাংসদের কাছেও। প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে বারাণসীতে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে পূর্বনির্ধারিত কাজ থাকায় তিনি থাকতে পারেন নি। রবিবার তাই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে একান্তই আম আদমির শপথ।লাখ জনতার উপস্থিতি রামলীলা ময়দানে। শিশুরাও এসেছিল মাফলার ম্যান সেজে। উপস্থিত ছিল সাফাইকর্মী, বাস চালক, অশিক্ষক কর্মী, দোকানদারের মতো একেবারে আম দিল্লি।
Indian Home Minister Amit Shah (C) arrives at Parliament House.
Indian Home Minister Amit Shah (C) arrives at Parliament House. Source: AAP
এর মধ্যেই আসলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে যে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি তিনি, দু’দিন আগে বলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই দাবিকে হাতিয়ার করেই সিএএ এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে আলোচনার জন্য রবিবার দুপুরে অমিত শাহের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় শাহীন বাগের প্রতিবাদীরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের প্রস্তাব ছিল, কেউ তাঁর অফিসে যোগাযোগ করলে তিন দিনের মধ্যে দেখা করার সময় দেবেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে সেই দেখা হয় নি। পুলিশি বাধায় আটকে গিয়েছেন শাহীন বাগের প্রতিবাদীরা। দুপুরে শাহীন বাগের প্রায় ৫,০০০ প্রতিবাদ-মিছিল করে এগিয়ে যান অমিত শাহের বাড়ির দিকে। কিন্তু এত মানুষকে বেশিদূর এগিয়ে যেতে দেন নি পুলিশ অফিসাররা। অনুমতিও মেলে নি। পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে তাঁদের আটকে পড়তে হয়।

Follow SBS Bangla on .



Share
Published 17 February 2020 1:16pm
Updated 17 February 2020 1:21pm
By Partha Mukhopadhyay
Presented by Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends