মারা গেলেন কলকাতার প্রথম বাঙালি ক্যাবারে ড্যান্সার মিস শেফালি

প্রয়াত সত্তরের সেনসেশন মিস শেফালি। আসল নাম ছিল আরতি দাস।তিনি-ই ছিলেন কলকাতার প্রথম বাঙালি ক্যাবারে ড্যান্সার।সাতের দশক থেকে মঞ্চ মাতিয়ে এসেছেন মিস শেফালি।তাঁর গুণমুগ্ধরা তাঁকে ,রাতপরী আখ্যা দিয়েছিলেন।বলিউড হোক বা টলিউড,সেসময়ে মিস শেফালির নাম শোনেননি, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দায়।যাঁর রূপের ছটায় মুগ্ধ হতেন একাধিক ব্যক্তিত্ব।

Kolkata's first cabaret dancer Miss Shefali (Arati Das)

Kolkata's first cabaret dancer Miss Shefali (Arati Das) Source: indiatoday.in

একটা সময় ছিল যখন রাতের কলকাতা মাতিয়ে রাখার একটাই নাম ছিল মিস শেফালি। মধ্য কলকাতার ফিরপো’জ হোটেল থেকে পার্ক স্ট্রিট, গ্র্যান্ড হোটেলে গানের সুরে নাচতে নাচতে আরতি দাস হয়ে উঠে ছিলেন মিস শেফালি।খুব ছোট বয়স থেকেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই পর্দার আড়ালে থাকতেন মিস শেফালি।কাজ না থাকায় আর্থিক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে।শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্যেও অর্থাভাব দেখা দিয়েছিল।

বিভিন্ন নাটক ও ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মিস শেফালি অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০) এবং সীমাবদ্ধ (১৯৭১) ছবিতে। বহ্নিশিখা (১৯৭৬), পেন্নাম কলকাতা (১৯৯২)-র মতো ছবিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।বড় পর্দার পাশাপাশি একাধিক নাটকেও দেখা গেছে মিস শেফালিকে। সেখানেও নাচের ঝড় তুলেছেন তিনি।কথিত আছে, একটা সময সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে নাকি প্রায়ই তাঁর নাচ দেখতে গ্র্যান্ড হোটেলে যেতেন উত্তমকুমার।একবার মহানায়ককে হোটেলের মঞ্চে তুলে নাচের সঙ্গী করেছিলেন মিস শেফালি।তাঁর বায়োপিক বানাতে পারেন কঙ্কনা সেনশর্মাও। বছর খানের আগে শোনা গেছে এমন খবরও।

সত্তরের দশকে কলকাতা এবং বাঙালি তখনও ক্যাবারে কালচারের সঙ্গে পরিচিত নয়, সমাজ আরও রক্ষণশীল,সেই সময় সাতের দশকে নিতান্ত পেটের দায়ে তিলোত্তমায় উল্কার মতো আছড়ে পড়েছিলেন আরতি দাস।তিনিই হোটেল ফিরপো-র ক্যাবারে ক্যুইন মিস শেফালি। পরে পার্ক স্ট্রিট, গ্র্যান্ড হোটেল বুঁদ হয়েছিল তাঁর নাচের নেশায়।কালের নিয়ম মেনে একটা সময় ভাটার টান আসে তাঁর জনপ্রিয়তাতেও।শেষের দিকে অর্থাভাবে ঠিক মতো চিকিৎসাও হচ্ছিল না তাঁর। সেই সময় তাঁর দেখভাল করেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর বায়োপিকে অভিনয়ের কথা ছিল ঋতুপর্ণার।বয়স হয়েছিল ৭৪ ।দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।মৃত্যুর কিছুদিন আগে কিডনির সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে।দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছিল তাঁর।শেষের দিকে প্রায়ই নাকি বলতেন, আর বেশি সময় নেই হাতে। এবার তিনি ছুটি নেবেন। হাসপাতাল থেকে সোদপুরে নিজের বাড়িতে ফেরার পরেও বেশ সুস্থই ছিলেন। আচমকাই মিস শেফালি চলে গেলেন চিরকালের মত।

সমাজ তাঁকে প্রান্তবাসী করলেও বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁকে ডেকে নিয়েছিলেন তাঁর দু'টি ছবি প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সীমাবদ্ধ ছবিতে। মিস শেফালি নেই,জানার পরে শোকের ছায়া সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায়ের গলাতেও।বলেছেন, ১৯৭০ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী, ১৯৭১-এ সীমাবদ্ধ-য় কাজ করেছিলেন সেই সময় , সেই প্রজন্মের হার্টথ্রব মিস শেফালি।প্রথম ছবিতে সেই যুগে সাহসী দৃশ্যে তাঁর সহজ অভিনয় আজও প্রচুর চর্চা হয়।সমাজ তাঁকে প্রান্তবাসী করলেও মিস শেফালি কিন্তু খুব ভালো মানুষ ছিলেন। প্রচণ্ড নিয়ম মেনে চলতেন। মিস শেফালির চলে যাওয়ার খবরে শোক জানিয়েছেন অরিন্দম শীলও। বলেছেন,মিস শেফালিকে দেখা পর্দায়, সত্যজিৎ রায়ের ছবি দিয়ে।কলকাতায় তাঁর মতো এমন সাহসী পদক্ষেপ সেই সময় কেন এখনও কোনও বাঙালিনী নিতে ভয় পেতেন, দু'বার ভাবতেন।মিস শেফালি সেই দিক থেকে ব্যতিক্রম। আজীবন ওঁকে ঘিরে বরাবরই মারাত্মক ক্রেজ, কৌতুহল সবার মনে। কলকাতায় ক্যাবারে কালচারের পথিকৃৎ মিস শেফালি, সেই জায়গা আর পূর্ণ হবে না।

জানা যাচ্ছে,মিস শেফালির বায়োপিকে তাঁর অভিনয় করার কথা ছিল, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-র। এবং শেষ জীবনে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিলোত্তমার প্রথম নতর্কীকে।বলেছেন,একটা সময় যাঁকে সামনে থেকে দেখার জন্য, একটু ছোঁয়া পেতে পাগল হত সাতের কলকাতা,তখনকার তথাকথিত বিশিষ্টরা,তাঁর শেষ জীবন সত্যিই কষ্টের।অর্থাভাবে ভালো করে চিকিৎসাও হয়নি তাঁর।সংসারের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনও নিন্দা,কোনও অপবাদ গায়ে মাখেননি মিস শেফালি।সত্যিই লার্জার দ্যান লাইফ মিস শেফালি। তাঁকে অবশ্যই বড় পর্দায় তুলে ধরা হবে।খুব ভালো স্মৃতি রয়ে গিয়েছে ঋতুপর্ণার মিস শেফালির সঙ্গে।


Share
Published 7 February 2020 10:28am
By Partha Mukhopadhyay
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends