সাম্প্রতিককালে বর্ণবাদী আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ফেডারেল বিরোধী দল লেবার মরিসন সরকারের প্রতি বর্ণবাদবিরোধী প্রচারণার জন্য অর্থ বরাদ্দের আহবান জানিয়েছে যা গত সাত বছরের মধ্যে এই প্রথম।
অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে যারা সরাসরি বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন তারা লেবারের এই আহবানকে স্বাগত জানিয়েছেন - তবে আলোচনা যাতে গুরুতর হয়, শুধু যেন টিকবক্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে।
সোশ্যাল কোহেসন বা সামাজিক সম্প্রীতি বিষয়ে স্ক্যানলন ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল ধারণার প্রতি ব্যাপক সমর্থন থাকলেও বর্ণবাদী মনোভাব রয়েই গেছে।
লেখক-শিক্ষাবিদ ডঃ রায়ান আল - নাতূর সেপ্টেম্বর ইলেভেন কাণ্ডের পরের দিনের এক ঘটনার কথা মনে করে বলেন, তিনি তখন কিশোর বয়সী ছিলেন এবং পেনরিথ ট্রেন স্টেশন দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে সেদিন 'সন্ত্রাসবাদী' বলা হয়েছিল।
তিনি এসবিএস নিউজকে বলেন, অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে, মানুষের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং ধর্ম বর্ণবাদের ন্যারেটিভে রূপান্তর লাভ করেছে।
"যে বিষয়টা প্রথমেই আপনাকে মনে করিয়ে দেবে তা হলো যে বা যারা বর্ণবাদী তারা আপনার দোষ ধরবে। আপনাকে ভিন্ন কেউ ভেবে বলবে তুমি এই ভূমিতে বাসের যোগ্য নও। এটা চরম অমানবিক। "যদিও স্ক্যানলন ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা মাল্টিকালচারালিজমের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে, কিন্তু ৪০ ভাগ উত্তরদাতা স্বীকার করেছে মুসলিমদের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাব আছে। একইসাথে অস্ট্রেলিয়ায় এন্টি-সেমিটিক বা ইহুদিবিদ্বেষী আক্রমণ বেড়েছে ৩০ ভাগ।
Academic and author Dr Ryan Al-Natour is concerned racism is morphing into narratives around people's identity, culture and religion. Source: SBS News
সাম্প্রতিক সময়ে বর্ণ বিদ্বেষী আক্রমণের প্রেক্ষিতে লেবার পার্টি ফেডারেল অর্থায়নে নতুন বর্ণবাদ বিরোধী প্রচারণার ডাক দিয়েছে। লেবারের মাল্টিকাচারাল বিষয়ক মুখপাত্র অ্যান্ড্রু জাইলস এসবিএস নিউজকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার এমন সরকার প্রয়োজন যারা বর্ণবাদকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করবে।
"অস্ট্রেলিয়ার সকলপর্যায়ের রাজনীতিবিদদের এটা পরিষ্কার করতে হবে যে বর্ণবাদের বিষয়ে তাদের জিরো টলারেন্স বা শূন্য-সহনশীলতা আছে, আমরা বর্ণবাদেড় আগুনকে উস্কে দেব না, যেখানেই দেখবো তার নিন্দা করবো।"
কিন্তু ডঃ আল-নাতূর বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতিবিদদের আচরণই মূল সমস্যা।
তিনি বলেন, এর সমাধান কমুনিটির মধ্যে থেকে করতে হবে, ক্যানবেরাতে নয়।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি না এই বর্ণবাদের সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদদের ওপর ভরসা করা যাবে।"
"বর্ণবাদ বিরোধিতা হচ্ছে ছকে বাধা চিন্তাকে দূর করা, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই দেশে এতে মূলধারার অস্ট্রেলিয়ানদের ভালো বোধ করানো হয়, অথচ এটা নিয়ে গুরুতর এবং অস্বস্তিকর কথাবার্তা হওয়া উচিত ছিল।"সাত বছর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড 'রেসিজম - ইট স্টপস উইথ মি' বা 'বর্ণবাদ - আমার থেকেই বন্ধ হোক ' নামক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিলেন।
Adam Goodes of the Swans in 2015. Source: AAP
এখন, লেবার পার্টি চাইছে বর্ণবাদের হুমকি মোকাবেলায় নতুন করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে মরিসন সরকার অর্থায়ন করুক।
মিঃ জাইলস বলেন, "আমরা প্রায়শঃই দেখি ছোট ছোট হুমকিও সমাজে মানুষের ভূমিকা রাখতে পারার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।"
"এটা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি ভালো আচরণ করছে তার ওপরেই সীমাবদ্ধ নয়, এটা জাতীয় নেতৃত্বের বিষয়।"
মিঃ আল-নাতূর বর্ণবাদকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে সেটা নিয়ে যে দ্বিধা আছে সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, "দুৰ্ভাগ্যবশতঃ মূলধারায় যেভাবে বর্ণবাদকে বোঝানো হয়েছে, সেই সংজ্ঞাকে ভীষণভাবে বিকৃত করা হয়েছে।"
"অনেকে ভাবে সপ্তাহান্তে চাইনিজ খাবার বা কাবাব খাওয়ার মানেই হলো তারা বর্ণবাদী নয়, বাস্তুবে বিষয়টি আরো জটিল।"
এটর্নি জেনারেলের একজন মুখপাত্র এসবিএস নিউজকে বলেন, "মরিসন সরকারের সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার নীতি আছে, বিশেষ করে বর্ণবাদ।"
"সরকার এটাও স্বীকার করছে যে সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম এবং ইহুদিদের প্রতি অসহিষ্ণুতা দুঃখজনকভাবে বেড়েছে।"
"কিন্তু লেবার জানে যে মুসলিমসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলো রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন এক্ট বা বর্ণ বৈষম্য আইন দ্বারা সুরক্ষিত নয়, কারণ তাদেরকে 'বর্ণের' ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় না।"
মুখপাত্র লেবারকে 'পলিটিকাল পয়েন্ট-স্কোরিং' না করে বরং সরকারের নতুন রিলিজিয়াস ডিসক্রিমিনেশন বিলের প্রতি সমর্থন দিতে আহবান জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন: