ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২৯ অক্টোবর আইসিসির নিজস্ব সাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি টুইট বার্তা দেয় । আইসিসির কোড অব কনডাক্টের তিনটি ধারা ভাঙায় সাকিব আল হাসানকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। সাকিব তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মেনে নিয়ে ভুল স্বীকার করায় সাজার মেয়াদ দুই বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ৩টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাজা দিয়েছে আইসিসি। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট আকসুর তদন্ত দল সাকিবের বিরুদ্ধে এই ৩টি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে। তবে তদন্তে সহযোগিতা করায় ২ বছরের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়েছে।
সাকিবের সাজা কমার ৬টি কারণ
আকসুর তাদের প্রতিবেদনে সাকিবের সাজা কমার ৬টি কারণের কথা উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো-
১. আইসিসির তদন্ত সাকিবের স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি ও সহযোগিতামূলক মনোভাব।
২. অভিযোগের নোটিশ পাওয়ার পর সাকিবের স্বীকারোক্তি।
৩.আইসিসির কাছে সাকিবের অনুশোচনা প্রকাশ ও অনুতপ্ত হওয়া।
৪. সাকিবের অতীত রেকর্ড ভালো থাকায় ।
৫.ওই অভিযোগগুলোর কারণে সংশ্লিষ্ট ম্যাচগুলোর বাণিজ্যিক মূল্য এবং জনস্বার্থ ব্যহত না হওয়া।
৬.একই কারণে ঐসব ম্যাচগুলোর ফলাফলে কোনও প্রভাব না পড়া।
বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ গঠন করেছে আইসিসি। ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুই বার জুয়াড়ির প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। ঐ সময় প্রস্তাবের কথা জানাননি আইসিসিকে। পরে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল আইপিএলে হায়দরাবাদ-পাঞ্জাব ম্যাচেও প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। তিনটি অভিযোগই মেনে নিয়েছেন সাকিব।
সাকিবের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায় সাকিব ভুলে গিয়েছিলেন এই সি সি কে জুয়াড়ির ফোনের বিষয়টি জানাতে। প্রথমবারএই সি সির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, এমন কিছু তার মনে পড়ছে না। পরে এই সি সার তদন্ত দলের কর্মকর্তারা জুয়াড়ির ফোন ট্র্যাক করা কললিস্ট তুলে ধরেন সাকিবের সামনে। তখন সাকিব বিষয়টি মনে করতে পেরেছেন। এবং নিজের ভুল স্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তাদের কাছে।
আশরাফুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পেলেন সাকিব। আশরাফুল নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বিপিএলে ফিক্সিংয়ের কারণে। সাকিব নিষিদ্ধ হলেন ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব এই সি সি কে না জানানোর কারণে।সাকিবকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া এই জুয়াড়ি আইসিসির কালো তালিকাভুক্ত।
সাকিবের প্রতিক্রিয়া
এই সি সি সাকিব আল হাসানকে যে শাস্তি দিয়েছে তা তিনি মেনে নিয়ে বলেছেন, সবার সমর্থন থাকলে এই সময়ের মধ্যে আগের থেকে শক্তিশালী হয়ে ফিরবেন।
আইসিসির রায় ঘোষণার পর ২৯ অক্টোবর রাতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন
"দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইসিসির যে অবস্থান এবং সেজন্য আমার বিরুদ্ধে যে শাস্তি তা আমি মাথা পেতে নিচ্ছি। সবার সমর্থন থাকলে নিষেধাজ্ঞা শেষে আগের থেকে শক্তিশালী হয়ে ফিরব।"
সাকিব আরো বলেন, তার ভালোবাসার খেলাটি থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি অত্যন্ত বিষণ্ণ। তবে (আইসিসিকে) রিপোর্ট না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটা সে মেনে নিয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যায় জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথন গোপন করার অপরাধে সাকিবের বিরুদ্ধে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রায় ঘোষণা করে আইসিসি। তবে ঘোষিত রায়ের এক বছরের শাস্তি স্থগিতও করা হয়েছে। একই অপরাধে না জড়ালে আগামী বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে মাঠে ফিরতে পারবেন তিনি।