গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে যুব ভোটারদের তালিকাভুক্তির হার ৮৮ শতাংশেরও বেশি
- মহামারীতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা বাড়লেও অনেক তরুণ অভিবাসী এবং রিফিউজিরা এখনও তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে না
- বহুসংস্কৃতির তরুণ নাগরিকদের চাহিদাকে স্বীকৃতি দিতে জাতীয় যুব নীতির বিকাশের আহ্বান
অভিবাসী এবং রিফিউজি ব্যাকগ্রাউন্ডের তরুণ নাগরিকরা বলছেন নির্বাচনে যেই সরকারই আসুক তারা যাতে দেশের প্রথম জাতীয় যুব নীতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়। যে পাঁচটি নীতির ক্ষেত্রে তারা জোর দিতে আহবান জানাচ্ছে সেগুলো হলো: মানসিক স্বাস্থ্য, যুব প্রতিনিধিত্ব, মানবিক ও অভিবাসন কর্মসূচি, শিক্ষা; এবং কর্মসংস্থান এবং আয় সহায়তা।
২১ এপ্রিল, ২০২২ পর্যন্ত এই ফেডারেল নির্বাচনে যুব ভোটারদের তালিকাভুক্তির হার ৮৮ শতাংশেরও বেশি যা ২০১৯ সালের নির্বাচনকালীন সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।
একুশ বছর বয়সী রহিম মোহাম্মাদি বলছেন যে তিনি হতাশ কারণ প্রার্থীরা তরুণদের, বিশেষ করে অভিবাসীদের আকৃষ্ট করতে খুব বেশি কিছু প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না।
তিনি বলছেন, আপনি কোন সমর্থন অনুভব করেন না, নিজেকে সবসময় একজন বহিরাগতের মতো অনুভব করেন। আমাদের কথাগুলো শোনা দরকার।
রহিম ২০০৩ সালে আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, ব্রিসবেনে তার পরিবারের সাথে বসবাস করেন।
ইংরেজি বলতে না পারায় এবং সেখানে কোনো সহায়তা নেটওয়ার্ক না থাকায়, তাদের সেখানে থিতু হতে পাঁচ-ছয় বছর সময় লেগেছিলো।রহিম একজন নার্সিং এবং মনোবিজ্ঞানের ছাত্র, কখনও ভাবেননি যে তিনি মাল্টিকালচারাল ইয়ুথ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কের সাথে অ্যাডভোকেসি ভূমিকায় কাজ করবেন৷ কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বহুসংস্কৃতির তরুণদের উপর করোনা মহামারীর প্রভাব পরলে তিনি কথা বলতে বাধ্য হন।
Rahim Mohammadi Source: Supplied by Rahim Mohammadi
তিনি বলছেন, সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সবসময়ই লজ্জাস্কর বিষয় হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে যারা সদ্য অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন তাদের জন্য সমস্যাটি আরো প্রকট।
মায়ান (MYAN) নামের নেটওয়ার্কটি গত ছয় মাসে রিজিওনাল এলাকাসহ সারা দেশে নিয়মিত রাউন্ড-টেবিল বৈঠক আয়োজন করেছে, যেখানে কয়েকশত বহুসংস্কৃতির তরুণ নাগরিকরা জড়িত।
মহামারীর দুই বছরে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি বড় থিম হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল।
মিজ কারমেল গুয়েরা গত ১২ বছর ধরে মায়ান (MYAN)-এর চেয়ারপারসন হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বলছেন যে মহামারীতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা বাড়লেও অনেক তরুণ অভিবাসী এবং রিফিউজিরা এখনও তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে না।
সংলাপ শেষে গ্রুপটি একটি পাঁচ-দফা নির্বাচনী নীতির প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যৎ সরকার এবং নীতিনির্ধারকদেরকে আরও চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে: যেমন যুব প্রতিনিধিত্ব, মানবিক সাহায্য এবং অভিবাসন কর্মসূচীতে তরুণদের জন্য সহায়তা বাড়ানো, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বাধা অপসারণ এবং অস্ট্রেলিয়ান মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত জাতীয় বর্ণবাদ বিরোধী ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণের মাধ্যমে বর্ণবাদের মোকাবিলা করা।
পার্থের ২১ বছর বয়সী জাহরা আল হিলালিও গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
তার পিতামাতা ফিলিস্তিনি-ইরাকি বংশোদ্ভূত এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জন্মেছেন। তিনি বলছেন বৈষম্য তার জন্য একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা - এবং এজন্যই তিনি আইন ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তিনি সমাজে নেতৃত্বের সকল স্তরে লিঙ্গ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত হবে এমন কিছু দেখতে চান।আর সে কারণেই তিনি বহুসংস্কৃতির তরুণ নাগরিকদের চাহিদাকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় যুব নীতির বিকাশের জন্য মায়ানের (MYAN ) আহ্বানকে সমর্থন করছেন।
Zahra Al Hilaly Source: Supplied
তাদের প্রস্তাবে আছে যে এই নীতি মন্ত্রিসভায় একজন ফেডারেল ইয়ুথ মিনিস্টার দ্বারা পরিচালিত হবে; এবং একটি ফেডারেল ইয়ুথ এডভাইজরি কাউন্সিল গঠন করা হবে, যেখানে ৩০ বছরের কম বয়সী বহুসংস্কৃতির তরুণরা থাকবে।
এই নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজনীতিবিদদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে জাহরা বলছেন যে তার মত যারা একদিন রাজনীতিতে প্রবেশ করার কথা ভাবছে তারা তাদের এই আচরণে হতাশ।
১৯৭৩ সালে হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া নীতির অবসানের পর থেকে কয়েক দশক ধরে অ-ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে অভিবাসীরা এসেছে। যাদের অনেকেই এসেছে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা থেকে।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সংসদে এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তা প্রতিফলিত করে না - এবং এই হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার চেয়ে পিছিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার কমিশনের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ অ-ইউরোপীয়, সে তুলনায় তাদের মাত্র চার শতাংশ অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে।
জনসংখ্যা এবং সংসদে এশীয়দের প্রতিনিধিত্ব বিবেচনা করলে বৈষম্যটি আরো প্রকট।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্তবয়স্ক এশিয়ান অভিবাসীর সংখ্যা আনুমানিক ১৪.৭ শতাংশ - যার হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার প্রায় সমান ।
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টের ২২৭ জন সদস্যের মধ্যে ২.২ শতাংশ - বা মাত্র পাঁচজন সাংসদ - যারা এশিয়ান বা দক্ষিণ-এশীয় অভিবাসী।
অথচ নিউজিল্যান্ডে এশিয়ান এমপিদের অনুপাত ৫ শতাংশের বেশি, কানাডায় এটি ১২.৮ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি ৩.৮ শতাংশ।
তরুণ অভিবাসী রহিম মনে করেন তিনি শেষ পর্যন্ত তার অগ্রগতি অর্জন করছেন।
তার প্রত্যাশা নার্সিং এবং মনোবিজ্ঞানে তার পড়াশোনার ফলে তিনি যাদের সাথে কাজ করেন তাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা দুটিই দেখাশোনা করতে পারবেন।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।
আরও দেখুন: