গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- স্থাবর সম্পত্তি, শেয়ার, ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো সম্পদ বিক্রি করে অর্জিত মুনাফার উপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স (সিজিটি) প্রদান করতে হয়।
- নিজস্ব থাকার বাড়ি বিক্রি থেকে অর্জিত মুনাফার জন্যে সাধারণত সিজিটি দেওয়ার দরকার হয় না।
- প্রযোজ্য সিজিটি পরিশোধ না করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার করদাতা অধিবাসীরা তাদের আয়কর রিটার্নের মধ্যে মূলধন বা ক্যাপিটাল বিক্রি থেকে লাভ এবং ক্ষতি উভয়ই ঘোষণা করতে বাধ্য এবং পরবর্তীকালে এর সাথে সম্পর্কিত কর বিষয়ক বাধ্যবাধকতাগুলিও তাদেরকে পূরণ করতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্সেশন অফিস বা এ-টি-ও অস্ট্রেলিয়ায় সমস্ত কর এবং রাজস্ব সংগ্রহের দিকগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।
বেশিরভাগ মানুষই তাদের বার্ষিক ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য অ্যাকাউনটেন্ট বা হিসাবরক্ষকদের নিযুক্ত করে থাকে।
মনোজ গুপ্তা মেলবোর্নে অনুশীলনরত একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তিনি সিজিটি কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, করদাতাদের বেতন, মজুরি বা ব্যবসায়িক আয় এবং কোনও সম্পত্তি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত লাভ বা মুনাফাসহ সংশ্লিষ্ট অর্থ-বছরের জন্য করযোগ্য আয়ের সাথে এই আয় যোগ করা হয়।
কী পরিমাণ সিজিটি পরিশোধ করতে হবে সেটি মূলত একটি সম্পদ বিক্রয়ের উপর বকেয়া করের পরিমাণ এবং করদাতার ব্যক্তিগত আয়কর হারের উপর নির্ভর করে হিসেব করা হয়।
Close up of female accountant or banker making calculations. Savings, finances and economy concept Source: Moment RF / Prapass Pulsub/Getty Images
এ-টি-ওর সহকারী কমিশনার টিম লোও এই কর হিসাবের পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেন,
ধরা যাক মিজ নূরি ৫০০ ডলারে কিছু শেয়ার কিনেছেন, এবং ছয় মাস সেটি রেখে তিনি ছয় মাস পরে ৫৫০০ ডলারে সেগুলি বিক্রি করে দিলেন। যদি ধরে নেওয়া হয় যে তার অন্য কোনও মূলধন লাভ বা ক্ষতি নেই, সেক্ষেত্রে মিজ নূরিকে তার ট্যাক্স রিটার্নে ৫০০ ডলারের মূলধন লাভ ঘোষণা করতে হবে এবং তার ব্যক্তিগত আয়কর হারে এই লাভের উপর কর দিতে হবে।
যদিও বেশিরভাগ রিয়েল এস্টেট বিক্রয় থেকে অর্জিত মুনাফার উপর সিজিটি আরোপ করা হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার নিয়মও রয়েছে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে, প্রদেয় সিজিটিতে কিছু ছাড় পাওয়া সম্ভবপর হতে পারে।
আপনার বিক্রয়কৃত সম্পত্তির মালিকানা যদি কমপক্ষে এক বছর হয় এবং আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ার ট্যাক্স রেসিডেন্ট হন, সে ক্ষেত্রে সিজিটির পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়।
Wooden cubes with word 'Tax' on australian dollars Source: iStockphoto / alfexe/Getty Images
মি. লোও ব্যাখ্যা করে বলেন যে কীভাবে এ-টি-ও সন্দেহজনক আর্থিক আচরণ এবং অঘোষিত ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের উপর নজর রাখার জন্য ডাটা-ম্যাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
তিনি বলেন,
সবাই সঠিক নিয়ম মানছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য, আমরা ব্যাংক, স্টেট রেভিনিউ অফিস, ভূমি মালিকানা অফিস, বীমা সংস্থা, শেয়ার রেজিস্ট্রিগুলির মতো বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আয়ের ডাটা এবং অন্যান্য তথ্য পাই। আমরা উবার এবং এয়ারবিএনবির মতো শেয়ারিং ইকোনমি প্ল্যাটফর্মগুলি থেকেও তথ্য সংগ্রহ করি যেন মানুষ ট্যাক্স পরিশোধের সব নিয়ম মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়।
করদাতাদের কেউ তাদের ট্যাক্স রিটার্নে মূলধন লাভের কথা ঘোষণা না করলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য জরিমানা, অন্য আর যে কোনও করের মতোই, কর ঘাটতি এবং ব্যক্তিগত আচরণের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। ধরণ ও আচরণের উপর নির্ভর করে জরিমানার পরিমাণ বিভিন্ন হতে পারে।
জরিমানার পাশাপাশি, এ-টি-ও পরিশোধকৃত কর ঘাটতির উপর সুদও নেয়ার ক্ষমতা রাখে।
মি. লোও বলেন, কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে কর ঘাটতির ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে।
এটি জানা থাকা জরুরী যে ইচ্ছাকৃত এবং বারবার এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে আইন অনুযায়ী ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও অস্ট্রেলিয়া মূলত একটি ‘ক্যাশলেস’ অর্থনীতির দেশ, তবে অনেক করদাতাই নগদ মুদ্রায় তাদের আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে থাকেন, যা তাদের করযোগ্য আয়ের পরিমান কম দেখাতে এবং তার ফলে কর ফাঁকি দিতে সক্ষম করে তোলে।
কিন্তু সম্পত্তি বা শেয়ার বিক্রির সময় এরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা বিরল বলে জানান মি. গুপ্তা।
তবে কোনো করদাতা যদি মনে করেন যে তাদের ভুলভাবে জরিমানা করা হয়েছে তবে তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
যদি ট্যাক্স অফিস এই আবেদনে সন্তুষ্ট হয় তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা জরিমানা হ্রাস বা এমনকি মওকুফও করে দিতে পারে।
মি. লোও আরও বলেন যে সিজিটি সহ সমস্ত কর পরিশোধের নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনেকেই মনে করেন যে সিজিটি কেবল মুনাফার ক্ষেত্রেই প্রদান করতে হয়, কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক নয়। কিছু ক্ষেত্রে, মুনাফা না হলেও এটি প্রদান করতে হতে পারে।
তখন এটিকে বলা হয় ক্যাপিটাল লস।
happy African couple outside home with sold sign giving thumbs up Source: iStockphoto / michaeljung/Getty Images
তিনি বলেন, "তাসমানিয়ায় আমাদের একটি বিনিয়োগ সম্পত্তি ছিল। আমরা এটি ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলারে কিনেছিলাম এবং ব্রিসবেনে যাওয়ার আগে আমরা কয়েক বছর ধরে এটিতে বসবাস করেছি। ব্রিসবেনে চলে এলে আমরা কয়েক বছরের জন্য এটি ভাড়া দিয়েছিলাম, তারপরে আমরা এটি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ততদিনে এটির মূল্য ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলার থেকে কমে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হয়ে গিয়েছিল। আমরা যখন সেই বছরের জন্য আমাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিলাম, তখন এ-টি-ও আমাদের জানাল যে আমাদের তারপরেও ক্যাপিটাল গেইন হয়েছে।“
এমন পরিস্থিতি অনেক মানুষকেই হতবাক করে দিতে পারে। কোনও বিনিয়োগকৃত সম্পত্তির জন্য ব্যয় দেখানো হলে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তাঁর নিজের ক্ষেত্রে কীভাবে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, মি. সুব্রামানিয়াম তা ব্যাখ্যা করে বলেন, "আসলে যা ঘটেছিল তা হচ্ছে আমরা ট্যাক্সে মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বিনিয়োগ-সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, সুদের হারের মতো আরও বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দাবি করছিলাম, যা এ-টি-ওর হিসাবে সেই বাড়ির মূল্যকে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ডলারে নামিয়ে এনেছিল। সুতরাং, তারা আমাদের জানাল যে এখানে আসলে আমাদের ২৫ হাজার ডলার ক্যাপিটাল গেইন হয়েছে যার উপর আমাদের ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার ট্যাক্স দিতে হবে।“
১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতি অর্থ-বছরের জন্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সাধারণত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে করদাতারা নিজে অথবা কোনো ট্যাক্স এজেন্টের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।