বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের একটি রক্ষণশীল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
মহিলারা প্রায়শই সমাজের ঐতিহ্যগত ভূমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, প্রায়শই কেবল বাড়িতে কিংবা কম বেতনের চাকরিতে কাজ করে।
এখন জাতিসংঘের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প ৪০ জন বেকার তরুণীকে গাড়ি চালানো শিখিয়েছে।
তাদের একজন বাবলী আক্তার বলেন, “হ্যাঁ, মানুষ তাকিয়ে থাকে! যখন একজন মহিলা রাস্তায় গাড়ি চালায়, তখন লোকেরা অবিশ্বাসের চোখে তাকায় - এটি কীভাবে সম্ভব যে একজন মহিলা গাড়ি চালাচ্ছেন?"
মিজ বাবলী আক্তার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একদল তরুণ গ্রামীণ নারীর একজন, একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে একটি নতুন পেশায় ঢুকতে যাচ্ছেন যার মাধ্যমে সমাজে একটি পরিবর্তন ঘটছে।
মিজ আক্তার বলেন,“এটি ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে গাড়ি চালানো একজন পুরুষের কাজ, এবং মহিলাদের জন্য নয়। মহিলাদের রাতে গাড়ি চালানো উচিত নয়, মহিলাদের খুব বেশি গাড়ি চালানো উচিত নয়: অনেক সামাজিক বিধিনিষেধ রয়েছে।"
জাতিসংঘ বলেছে যে গ্রামীণ বাংলাদেশে, নারী জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও কম গাড়ি চালাতে পারে, কারণ এটি সামাজিক রীতিনীতির কারণে বাঁকা চোখে দেখা হয়।
তবে, বাবলির বাবা-মা তার নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে গর্বিত এবং তার অতিরিক্ত আয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
তার মা জাহেদা বেগম বলেন,“যতক্ষণ আমার মেয়ে দরকারী কিছু শেখে, এবং জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়, ততক্ষণ আমি এটা ভালো মনে করি। আমি চাই সে তার স্বপ্ন পূরণ করুক"।
আরেকজন ট্যাক্সি ড্রাইভার সুহেনা বেগম বলেন যে তিনি এ পেশায় একজন অগ্রদূত হতে পেরে গর্বিত।
তিনি বলেন,"আমি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথ দেখাতে চাই। আমরা মেয়েরা সবাই আমাদের উন্নতির নতুন পথ খুলে দিতে পারি, এবং আমরা প্রথম প্রজন্ম হিসাবে একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পেরে খুশি।"
বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি।
জাতিসংঘের তথ্য থেকে দেখা যায় যে সমস্ত গ্রামীণ শিশুর অর্ধেক দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপুষ্টির শিকার এবং ১৪ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ১৬০ মিলিয়ন লোকের ঘনবসতির বাংলাদেশ যেসব প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবেলা করছে তার মধ্যে আছে বন্যা, চরম আবহাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এতে কৃষিজমিগুলোও ঝুঁকির পড়েছে।
জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট বলছে যে গ্রামীণ জনগণকে কৃষি আয়ের উপর কম নির্ভরশীল করলে তাদের কৃষিজমি প্লাবিত হলেও অন্য উপায়ে অর্থ উপার্জনে সহায়তা করবে এবং পরিবারগুলিকে অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী করে তুলবে।
সংস্থার জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, এনডায়া বেলচিকা বলছেন যে তারা বাল্যবিবাহ থেকে মেয়েদের রক্ষা করতে চান ৷
তিনি বলেন, "প্রকল্পটি অন্তত আপাতত নারীদের উপর ফোকাস করছে, তাদের নতুন স্কিলের প্রশিক্ষণ দেওয়া, উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তোলা, তাদের ব্যবসায় যেতে সক্ষম করা, ট্যাক্সি চালকের কাজ দেয়া, সাধারণত যেসব কাজ পুরুষরা করে। সুতরাং এর মাধ্যমে তারা একটি আয় উপার্জনের সুযোগ পাবে, তাদের পরিবারের জন্য অর্থ জোগান দেবে এবং এতে তারা বাল্যবিবাহ থেকেও রক্ষা পাবে।"
বাংলাদেশি নারীদের প্রায় ৫০ শতাংশ ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন।
বাবলি আক্তার বলেন, বন্ধুবান্ধব ও পরিবার এখন তাকে ভিন্নভাবে দেখে।
তিনি বলেন,“কীভাবে ড্রাইভ করতে হয় তা শেখার পর, আমি অনুভব করি যে আমার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়রা আমাকে আরও সম্মান করেন।”
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: