‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন’, এ কথা বলে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন জেনিফার রবিনসন, যিনি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা আইনজীবী। উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার সদ্য পাওয়া মুক্তি উদযাপন করছিলেন তিনি।
যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক মি. অ্যাসাঞ্জকে মুক্ত ঘোষণা করে ১৪ বছরের আইনী লড়াইয়ের সমাপ্তি টানেন।
নতুন এক চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের গোপন সামরিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের একটি গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে অ্যাসাঞ্জ নিজের দোষ স্বীকার করে নিলে আদালত এই রায় দেয়।
আদালতের সঙ্গে করা চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাসাঞ্জকে ৬২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তবে যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন একই সময় তিনি কারাবন্দী থাকায় নতুন করে এই সাজা তাকে ভোগ করতে হবে না।
তিনি এখন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসছেন, যেখানে তার পরিবার তাকে স্বাগত জানাবে।
তার স্ত্রী এবং তার দুই সন্তানের মা স্টেলা অ্যাসাঞ্জ বলেন যে তার এখনও এই খবর বিশ্বাস হচ্ছে না। জুলিয়ানের লিগাল ডিফেন্সের সদস্য থাকাকালীন দুজনের প্রথম দেখা হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রীয় কমনওয়েলথভুক্ত উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী সাইপানের একটি ফেডারেল আদালতে এই সাজা ঘোষণা করা হয়।
৫২ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর করা অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করে দেয়ার পরে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে অনেক বছর ধরে লড়াই করেছেন।
শুরুতে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয়েছিল, যেগুলোর বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাজা হতে পারত।
তবে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী জেনিফার রবিনসন বলছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজির কূটনীতির কারণেই অবশেষে অ্যাসাঞ্জ মুক্তি পেয়েছেন।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির খবরে সংসদে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজি। তিনি বলেন,
এভাবেই পৃথিবীর যে কোনো স্থানে অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের দেশের মানুষের অধিকারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাবে।
অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যারোলাইন কেনেডি এক বিবৃতিতে বলেছেন যে একটি "দীর্ঘ ও জটিল মামলা" সমাপ্ত হলো এবং “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়া জুড়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং সহায়তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।“
ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার আইন বিভাগের অ্যাজাঙ্কট প্রফেসর হলি কালেন বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকারের এই চাপ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিচারের কৌশলের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
সাইপানের আদালত কক্ষের ভেতরে অ্যাসাঞ্জ বিচারকের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তাকে চুক্তির বিস্তারিত শর্তাবলী মনোযোগ দিয়ে শুনতে দেখা যায়।
আদালতে অ্যাসাঞ্জ বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে এসপিওনাজ অ্যাক্টের অধীনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেটি ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক। তবে তিনি স্বীকার করেন যে গোপন তথ্য প্রকাশের জন্য কাউকে উত্সাহিত করা অবৈধ হতে পারে।
মিজ কালেন বলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিচার প্রক্রিয়া সফল হওয়ার অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যতেও বিতর্কিত এই গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে সাংবাদিকরা অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
এদিকে স্টেলা অ্যাসাঞ্জ বলেন যে তিনি, জুলিয়ান এবং তাদের সন্তানেরা এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে এখন বিশ্রাম এবং পরিবার পুনর্নির্মাণের সুযোগ উপভোগ করবেন।
জুলিয়ানের বাবা জন শিপটন বলেন,
তিনি আশা করেন তার ছেলে মুক্ত জীবনের সহজ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পাবে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন।