কোভিড ১৯: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহায়তা করার প্রতি জোর দিলেন ডঃ নীরা রহমান

University of Melbourne has retained its position as the highest-ranked Australian university.

A student at the University of Melbourne Source: AAP

অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হলেও কোভিড মহামারীর এই সময়ে তারা, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা, একটি সংকটময় সময় পার করছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কথাগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শোনা জরুরী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ আর্টসের শিক্ষকতার সুত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা বলবার সুযোগ ঘটেছে ডঃ নীরা রহমানের। সম্প্রতি এখানকার দৈনিক পত্র পত্রিকাতেও এ নিয়ে লিখেছেন তিনি। সেই সূত্র ধরেই এ প্রসঙ্গে তিনি এসবিএস বাংলার সাথে কথা বলেছেন।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

  • অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও, শিক্ষালাভের সাথে অন্যান্য অনুষঙ্গগুলো বাধাগ্রস্ত হয়েছে
  • প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইউনিভার্সিটিগুলোর কিছু কিছু ক্ষেত্রে খামতি রয়ে গেছে, এজন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও ভাবছে তারা বেশ উপেক্ষিত
  • আর্থিক সংকট এবং একাকীত্ব শিক্ষার্থীদের ওয়েলবিয়িং বা মানসিক বা শারীরিক কল্যাণের ওপর প্রভাব ফেলছে

ডঃ নীরা রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কি উপেক্ষিত? 

উত্তরে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে তারা উপেক্ষিত এটা বলা যাবে না, তবে এটাও বলা যাবে না যে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং এই সময়টি বিবেচনায় রেখে কার্যকর কোন ভূমিকা নিতে পেরেছি। 

ডঃ নীরা রহমান বলেন, "একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন, তখন শুধু ডিগ্রী লাভটাই তো একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, এই প্রক্রিয়ায় তারা নানা অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন, যেমন ক্যাম্পাসের নানাবিধ অভিজ্ঞতা, বন্ধুত্ব বা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নতুন একটা দেশে এসে সেই দেশ, মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা।"
ডঃ নীরা রহমান মনে করেন ভাইরাস মহামারির সময়ে আর্থিক সংকট এবং একাকীত্ব শিক্ষার্থীদের মানসিক বা শারীরিক কল্যাণের ওপর প্রভাব ফেলছে।
ডঃ নীরা রহমান মনে করেন ভাইরাস মহামারির সময়ে আর্থিক সংকট এবং একাকীত্ব শিক্ষার্থীদের মানসিক বা শারীরিক কল্যাণের ওপর প্রভাব ফেলছে। Source: সুবীর কুমার দাস
তিনি বলেন, অতিমারীর কারণে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও, শিক্ষালাভের সাথে অন্যান্য অনুষঙ্গগুলো বাধাগ্রস্ত হয়েছে।  

ডঃ নীরা রহমান বলেন, "এই সংকটের সময় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সার্বিক মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য বা ওভারঅল ওয়েলবিয়িং আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এড্রেস করতে পারিনি, আমার মনে হয় এই জায়গাটায় কাজ করবার সুযোগ রয়েছে।" 

ডঃ নীরা রহমান মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে 'স্টুডেন্ট ভয়েস'-এর প্রকল্পটি পরিচালনা করেন। সেই সুবাদে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পান। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা বলা হলেও তাদের কাছ থেকে কথাগুলো শোনা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্টুডেন্ট ভয়েস বা ওদের কাছ থেকে শুনতে হবে, ওদেরকে জানতে হবে, ওরা আসলে কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এটা যদি আমরা আমাদের মত ভেবে নেই, তার চেয়ে বেশি কার্যকর হবে যদি ওদের কাছ থেকে শুনতে চাই, আসলে ওরা কিসের মুখোমুখি হচ্ছে, বিশেষ করে কোন জিনিসগুলো ওরা চ্যালেঞ্জ মনে করছে। 

"সেখানে আমার মনে হয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইউনিভার্সিটিগুলোর কিছু কিছু ক্ষেত্রে খামতি রয়ে গেছে। এজন্য শিক্ষার্থীরাও ভাবছে তারা বেশ উপেক্ষিত, ওদের আমরা কতটুকু জানতে চাইছি, ওটা আসলে খুব বেশি করে বোঝাতে পারছি না ওদেরকে।"
International students on a university campus in Australia
Source: Getty Images
দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দখল করে আছে। ডঃ নীরা রহমান মনে করেন এই শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা জরুরী।  

তিনি বলেন, "আর্থিক দিকটি ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়াসহ এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভীষণ পরিবারমুখী সংস্কৃতি থেকে আসা। ....আমাদের চিন্তাগুলো কালেকটিভ বা কমিউনিটি ভিত্তিক, অনেকে দীর্ঘসময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, এই যে একটা একাকিত্ব, এটা তাদের পড়াশোনাতেও ভীষণভাবে প্রভাব ফেলছে।"
"তারা অনেকেই পার্টটাইম কাজ করে থাকা-খাওয়ার খরচ মেটাতে পারতো, এখন অনেকের কাজ বন্ধ। সুতরাং সেই আর্থিক যোগানটাও বন্ধ আছে। ...তাই এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের ওয়েলবিয়িং বা মানসিক বা শারীরিক অবস্থার কল্যাণের ওপর প্রভাব ফেলছে।" 

এই মহামারীর প্রভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের 'সাপোর্ট নেটওয়ার্ক' হারিয়েছে বা একজন আরেকজনকে সহায়তার পরিস্থিতি থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে এটি প্রভাব ফেলছে তাদের পড়াশোনায়। 

ডঃ নীরা রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসে তখন তারা একটি বড় স্বপ্ন নিয়ে বা পেশাগত উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে আসে। যখন তারা তাদের ফলাফল খারাপ করছে তখন আবারো সেটি আবারো তাদের মানসিক বা শারীরিক কল্যাণের ওপর প্রভাব ফেলছে। 

ডঃ নীরা রহমানের পুরো সাক্ষাতকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন। 

আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সাহায্যের জন্য ভিজিট করুন বা ফোন দিন 1300 22 4636 নাম্বারে। 

এসবিএস বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজটি ভিজিট করুন।

আরো দেখুন:



 

   


Share