সেটেলমেন্ট গাইড: ভবিষ্যতে যে সব পেশার চাহিদা বাড়বে

একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচটি চাকরির মধ্যে অন্তত তিনটিতেই এডভান্সড ডিজিটাল স্কিলের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সম্প্রতি আরএমআইটি'র একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ডিজিটালাইজড কর্ম পরিবেশে কাজ করার উপযুক্ত নয়। এই বিষয়টি অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান অটোমেশনের মধ্যে বড় ধরণের দক্ষতার ঘাটতিকেই তুলে ধরে।

Young woman uses visual tablet at night

Source: Getty Images

২০৩০ সালের মধ্যে তরুণদের মধ্যে যাদের ডিজিটাল স্কীল উচ্চতর তাদের আয় প্রায় ৫০০ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স এবং স্ন্যাপচ্যাটের প্যারেন্ট কোম্পানী স্ন্যাপ ইনকরপোরেশনের  এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো 

  • ভবিষ্যতে প্রতি পাঁচটি কাজের মধ্যে তিনটিতেই উচ্চতর ডিজিটাল স্কীলের প্রয়োজন হবে।  
  • অগমেন্টেড এন্ড ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, রোবোটিক্স, অ্যানিমেশন ডিজাইন, এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি পেশায় কারো যদি উচ্চতর দক্ষতা থাকে তবে সে যথেষ্ট ভালো সম্মানী প্রত্যাশা করতে পারে।  
  • যেসব বিষয়ে দক্ষতার সংকট আছে সেসব জব-রেডি পেশা যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি, এবং কম্পিউটিং ইত্যাদি বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে।

 

স্ন্যাপ ইনকরপোরেশনের অস্ট্রেলিয়ান জেনারেল ম্যানেজার ক্যাথরিন কার্টার বলেন, ভবিষ্যতে প্রতি পাঁচটি কাজের মধ্যে তিনটিতেই উচ্চতর ডিজিটাল স্কীলের প্রয়োজন হবে।  

তিনি বলেন, অগমেন্টেড এন্ড ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, রোবোটিক্স, অ্যানিমেশন ডিজাইন, এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি পেশায় কারো যদি উচ্চতর দক্ষতা থাকে তবে সে যথেষ্ট ভালো সম্মানী প্রত্যাশা করতে পারে।
ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অফ ইনোভেশন গিসেল রামপ্রসাদ বলেন, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তির স্কীলগুলোর ভালো চাহিদা থাকবে, যেমন অ্যাডভান্সড রোবোটিক্স, অটোমেশন, থ্রী ডি প্রিন্টিং, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, অগমেন্টেড রিয়ালিটি, এন্ড ডিজিটাল টুইনস এসব পেশার চাহিদা ভবিষ্যতে অনেক বাড়বে। 

তিনি বলেন, "আমরা আমাদের প্রোডাক্ট ডিজাইনগুলো অপটিমাইজ করতে পারবো, দূর থেকে পারফরম্যান্স মনিটর করতে পারবো, মেইনটেনেন্সের প্রয়োজনে কি কি লাগবে তা অনুমান করতে পারবো, এবং স্মার্ট প্রোডাক্টগুলো তৈরী করতে পারবো।"
Factory automation
A report forecasts that three in five jobs will require advanced digital skills by 2030. Source: Getty Images/Sitthinan Saengsanga / EyeEm
ক্যাথরিন কার্টার বলেন, স্ন্যাপ চ্যাট মনে করে অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তির সবচেয়ে প্রধান বিষয় যা বর্তমানে বা ভবিষ্যতে অটোমেশনকে এগিয়ে নেবে। 

তিনি বলেন, "ভিক্টরিয়ান সরকার অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটির পাশাপাশি রোবোটিক্স, অ্যানিমেশন ডিজাইন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শিক্ষার জন্য জন্য প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।  আমরা মনে করি এইসব প্রযুক্তি কর্মশক্তিকে সংকুচিত করবে, নিয়োগকর্তারা যাদের ডিজিটাল শিক্ষা আছে, সৃষ্টিশীল এবং সমস্যা-নিরসনের মত উচ্চতর দক্ষতা আছে তাদের জন্য ব্যয় করতে চাইবে।" 

তবে প্রফেসর রামপ্রসাদ মনে করেন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন পেশাগুলোর জন্য তরুণ অস্ট্রেলিয়ানদের প্রস্তুত করতে একটি শূন্যতা রয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, "প্রাইমারি থেকে হাই স্কুল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics ) বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে, এবং যেসব বিষয়ে দক্ষতার সংকট আছে সেসব জব-রেডি পেশা যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি, এবং কম্পিউটিং ইত্যাদি বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে।"   

কুইন্সল্যান্ড ভিত্তিক মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার কাশুন কালহারা বলেন এই স্কীল গ্যাপ একটি সুযোগ। অটোমোশনের প্রভাবে ভবিষ্যতে সব চাকরী হারিয়ে যাবে এজন্য চিন্তিত না হয়ে তরুণ অস্ট্রেলিয়ানদের উচিত তাদের শিল্পে নতুন কিছু উদ্ভাবনী সুযোগ খোঁজা। 

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য এই ব্যবস্থার ভেতর থেকে নতুন ধারণা উদ্ভাবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই পরিধি ঠেলে আরো প্রসারিত করতে হবে, তবেই তারা নতুন ব্যবস্থায় টিকতে পারবে, কারণ আগামী দশ বছর তাদের অটোমেটেড মেশিন এবং সিস্টেমের মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে।" 

প্রফেসর রামপ্রসাদ বলেন, ক্রমবর্ধমান অটোমেশনের যুগে বেঁচে থাকতে এবং সফল হতে হলে ক্রিটিকাল থিংকিং, দ্রুত কর্ম সম্পাদনের ক্ষমতা, আগ্রহ এবং সৃজনশীলতার মত বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা থাকতে হবে।
Elephant virtual reality
Augmented and virtual reality skills are among those that are predicted to be in high demand in the near future. Source: Getty Images/Bernhard Lang
তিনি বলেন,"অটোমেশনের জন্য কোন পরিস্থিতি দরকারি তা বুঝতে এবং প্রযুক্তির ওপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতার সঠিক মাত্রাটি কি হবে নির্ণয় করতে এবং কোন পরিস্থিতিতে মনুষ্য সহায়তা কার্যকর তা নিরুপন করতে এই স্কীলগুলো প্রয়োজন।" 

কাশুন কালহারা লাইফ ইঞ্জিনিয়ার্স অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং যেসব কমিউনিটি শিক্ষা, পেশা এবং জীবনে সার্বিক সফলতা পেতে পিছিয়ে পড়েছে তাদের জন্য এটি কাজ করে।

সেই প্রেক্ষিতে কাশুন কালহারা বলেন, বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির অভিবাসীরা  তাদের যোগাযোগ দক্ষতার দুর্বলতার কারণে পিছিয়ে পড়বে। 

তিনি বলেন, "তাদের অবশ্যই জ্ঞান আছে, কিন্তু তারা সেটি প্রকাশ করতে ভিন্ন বিশেষণ বা কৌশল ব্যবহার করে যা তারা তাদের নিজ দেশে করে এসেছে। এটা অনেকটা অনুবাদ করার মত, তাই অনেক অভিবাসীই তাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান অস্ট্রেলিয়ান ওয়ার্কফোর্সে প্রয়োগ করতে পারেন না। "
শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত সাবেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মিঃ কালহারার  অস্ট্রেলিয়ান ভাষা এবং সংস্কৃতিতে খাপ খাইয়ে নিতে কয়েক বছর লেগেছিলো। 

তিনি এখন উদ্যমী প্রেরণাদায়ী বক্তা, উদ্যোক্তা, এবং শিক্ষক। যারা ইংরেজিতে অদক্ষ, অস্ট্রেলিয়ায় টিকে থাকতে হলে তাদের তিনি যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে কাজ করতে বলেন, সেটা ব্যক্তিগত বা পেশাগত যেই ক্ষেত্রেই হোক।  

তিনি বলেন, "তাদের উচিত কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসা, তাদের হয়তো প্রথমে কেউ স্বাগত জানাবে না, হয়তো তাদের মনে হবে আমি ঠিকমত বার্তাটি দিতে পারলাম না, কিন্তু আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে।  হয়তো বার বার।  আপনাকে একই বার্তা কয়েকবারে ভিন্নভাবে দিতে হবে। " 

অস্ট্রেলিয়া তার অর্থিনীতিকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে প্রস্তুত কিনা তা বুঝতে কোভিড ১৯ কে টেস্ট কেইস হিসেবে ধরতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি চার জনের একজন কর্মী প্রাদুর্ভাবের সময় তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো করতে যে স্কীলগুলো প্রয়োজন তা নেই, আর এই চিত্র উঠে এসেছে আরএমআইটি'র একটি প্রতিবেদনে।
•	Young man using VR in apartment
A recent RMIT University report found that one in four workers in Australia don’t believe that they have the skills needed to complete their day-to-day job. Source: Getty Images/ Westend61
প্রফেসর রামপ্রসাদ বলেন, প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মাইক্রো-ক্রেডেনশিয়াল কোর্সগুলো করে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরী করা।  

তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখেছেন অনেক উচ্চ শিক্ষা নেই এমন অনেক ট্রেড-কাজে যুক্ত ব্যক্তিরাও কয়েক মাসের মধ্যে ডিজিটাল স্কীল অর্জন করেছেন। 

তিনি বলেন, "গত বছর আমরা ৫১ জন শিপ বিল্ডারকে ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম ডিম্পলমা অফ ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে, তারা পরবর্তী শিপবিল্ডিং প্রোগ্রামের জন্য রিডান্ডেন্ট বা কাজে অনাবশ্যক হয়ে পড়েছিলেন। তারা ওই সময়টাকে শিপবিল্ডিংয়ের জন্য অনাবশ্যক হয়ে পড়ে, তাই ডিপ্লোমা করানো হয়েছে কর্মীদের যাতে হারাতে না হয়, তবে তারা আবারো শিপবিল্ডিংয়ে কাজে যুক্ত হয়েগেছে।" 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অফ জবস রিপোর্টে দেখা যায় যে ৯৪ শতাংশ ব্যবসায়ীরা চান কর্মীরা তাদের কাজে নতুন স্কীল অর্জন করবে। 

অন্যদিকে ৪০ শতাংশ কর্মীদের ছয় মাস বা তার কম সময়ের মধ্যে নতুন স্কীলের প্রয়োজন হবে।   

তারা মনে করেন ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং এনালিটিক্যাল স্কীল, প্রব্লেম সলভিং, এবং সেলফ-ম্যানেজমেন্ট স্কীল, যেমন সক্রিয়ভাবে শেখা, কঠিন অবস্থাকে জয় করা, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা, পরিবর্তনের জন্য তৈরী থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো আগামী পাঁচ বছরে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। 

প্রফেসর রামপ্রসাদ বলেন, আগামীতে যেকোন পেশার জন্য উদ্ভাবনী ক্ষমতা আবশ্যক হয়ে উঠবে। 

তিনি বলেন, "আমি মনে করি বয়স্ক সেবা এবং স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের ক্ষেত্রে, যেখানে আমি কিছু উদ্ভাবনী কাজে যুক্ত, সেখানে স্বাস্থ্য-প্রযুক্তি এবং প্রোডাক্ট দিয়ে কর্মীদের নিরাপত্তা এবং রোগীদের পূর্ণবাসনে কাজ করি। কিন্তু আমি তখনি কোন ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে পারবো, যখন আমি সমস্যাটা বুঝতে পারবো। তাই আমি মনে করি কর্মীরা যে পেশা থেকেই আসুক না কেন তারা অবশ্যই ভবিষ্যতে অবদান রাখতে পারবে।" 

এসবিএস বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজটি ভিজিট করুন।

Follow SBS Bangla on .

আরো দেখুন:



 

 


Share
Published 18 May 2021 8:25pm
Updated 22 May 2021 1:50pm
By Amy Chien-Yu Wang
Presented by Shahan Alam

Share this with family and friends