বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরীসহ পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। আড়াইশ বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও পানিবন্দি। পানি বাড়ছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়। নগরীর অনেক এলাকা এখন পানির নিচে।
ভয়াবহ বন্যার মধ্যে রানওয়ের কাছে বন্যার পানি আসার পর সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সুরমা উপচানো বন্যা চরম দুর্বিপাকে ফেলেছে সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের। একতলা কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই, বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ। বন্যাদুর্গত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সেনা সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে।
দুই জেলার ৮ উপজেলায় সেনাবাহিনীর ১০ প্লাটুন এবং ৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঁচটি কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা, স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা।
সিলেট বিভাগের বন্যা দেশের আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। উজান থেকে আসা ঢলে এই বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল। কিন্তু এর পর বেশির ভাগ বন্যা মূলত হাওর ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।
২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ ও সিলেট শহরে দুই তিন দিনের জন্য হঠাৎ বন্যা হয়। কিন্তু পুরো সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হওয়ার মতো বন্যা হয়নি। এবার গ্রাম, শহর ও উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। আর সোমবারের আগে এই পানি নামার সম্ভাবনা কম। কারণ, উজানে আগামী দুই দিন অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
ওদিকে পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কায় ’নির্ঘুম রাত’ কাটাচ্ছেন রংপুরের তিস্তাপারের মানুষ। শুক্রবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে নদীর পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বিকালে তা বেড়ে দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
নেত্রকোণার তিনটি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জেলার সবকয়টি নদ নদীর পানি হু হু করে বেড়ে চলেছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় স্থানীয় প্রশাসন পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।
আরও দেখুন: