ইরানের সংখ্যালঘু বাহাই সম্প্রদায়ের সদস্য ফার্ভারদিন দালিরি অভিবাসনের সঙ্গে অপরিচিত নন। ইরান থেকে তিনি ভারতে অভিবাসন করেন। তার নিজ দেশে সরকার পরিবর্তনের ফলে তার ইরানি পাসপোর্ট অকার্যকর হয়ে যায়। এরপর তিনি মেলবোর্নে চলে যান।
প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি টাউন্সভিলে বসবাস করছেন। সেখানে তিনি টাউন্সভিল ইন্টারকালচারাল সেন্টার পরিচালনা করেন এবং শহরটির বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন।
অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়ার অবদান শতকরা ৪০ ভাগ এবং প্রতি তিন জনে একজন রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করেন।
রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে রয়েছে সমস্ত শহর, ছোট ছোট নগর এবং সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, পার্থ, অ্যাডিলেইড এবং ক্যানবেরার বাইরের এলাকাগুলো।
বহু রিজিওনাল এলাকায় জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ফার্মার স্টুয়ার্ট ম্যাক-আল্পাইন নিজের চোখে দেখেছেন Shire of Dalwallinu এর লোক-সংখ্যা কীভাবে কমে গেছে। সেই এলাকা ভেড়া এবং ফার্মিংয়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।
২০১০ সালে সেই অঞ্চলের জনসংখ্যা পুনরায় বাড়ানোর জন্য তিনি একটি প্রস্তাব নিয়ে আসেন যা স্থানীয় কাউন্সিল জোরালোভাবে সমর্থন করে।
পার্থের উত্তরে ২৬৩ কিলোমিটার দূরবর্তী অঞ্চলে অভিবাসীদেরকে আকৃষ্ট করার বিষয়টি সহজ কাজ ছিল না। স্থানীয় স্কুলটি বন্ধ হওয়া ঠেকাতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারেন নি ম্যাক আল্পাইন।
রিজিওনাল রিপপুলেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান ম্যাক আল্পাইন। সেখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে এই কমিটির বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছ।
সেজন্য তাদেরকে ভাষাগত বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। তারা ইংরেজি ক্লাসের আয়োজন করেছেন। এছাড়া তারা আবাসন সমস্যারও সমাধান করেছেন।
এসব কর্মকাণ্ডের ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক।
Regional Opportunities Australia (ROA) একটি অলাভজনক সংগঠন। রিজিওনাল এলাকায় অভিবাসীদের কর্মসংস্থান এবং পুনর্বাসনের কাজ করে এটি। সংগঠনটি পরিচালনা করেন মাইক্রো-ফাইন্যান্স বিশেষজ্ঞ মাহির মোম্যান্ড। তিনি বলেন, রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়ায় নবাগতদেরকে স্থানীয় সমাজের লোকেরা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে থাকে।
মেট্রোপলিটান এলাকার বাইরে প্রতিযোগিতা কম। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, মানুষ বড় বড় নগর থেকে যত দূরে সরে যাবে, তাদের কর্ম-সংস্থানের সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে।
যেমন, সে-বছর নগরগুলোর ৬১.৩ শতাংশ অভিবাসী কাজ করতো। এর বিপরীতে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৭৮ শতাংশ কর্মী কাজ করতো, যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে জন্মগ্রহণ করেছে।
নাইজেরিয়ায় জন্ম-নেওয়া Suraj Adebayo Opatokun একটি নিয়মিত কাজের খোঁজে বেশ কয়েক বছর সংগ্রাম করেছেন। ম্যাকোয়েরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে তিনি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়াতে তিনি প্রথম উদ্যোগেই মিট ইন্সপেক্টরের কাজ পান। সিডনিতে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে কঠিন সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তার তুলনায় রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়াতে তিনি খুব সহজেই কাজ পেয়েছেন।
Regional Opportunities Australia (ROA) এর বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই অভিবাসী এবং সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করা ব্যক্তি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক। তাদের অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব রয়েছে তবে তারা বড় নগরগুলোতে যথোপযুক্ত কাজ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ডেমোগ্রাফির একটি রিপোর্টে দেখা যায়, কোনো কোনো রিজিওনাল এলাকার শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি নতুনভাবে পুনর্বাসিত অভিবাসী ৫ বছরের মধ্যেই বড় বড় নগরে চলে যায়। গত ৩৫ বছরের তথ্য-উপাত্ত থেকে এ কথা জানা গেছে।
তবে এই প্রবণতা উল্টে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ফার্ভারদিন দালিরি।
তিনি যে ইয়ুথ লিডারশিপ প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন, তাতে তিনি টাউন্সভিলে জন্ম-নেওয়া ব্যক্তিদেরকে এবং অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে আগত ব্যক্তিদেরকে একত্রিত করেন।
দালিরি মনে করেন, সফল একত্রীকরণের মাধ্যমে গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রচারণার কুফল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস রিয়েলিটি সিরিজ Struggle Street দেখুন। রিজিওনাল অস্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো অনগ্রসর সম্প্রদায়ের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানুন।
আগামী ৯ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটায় এসবিএস এ চোখ রাখুন Struggle Street এর সিজন থ্রি-র জন্য।
এরপর প্রতি বুধবার এটি দেখতে পাবেন। টিভিতে সম্প্রচারের পরও দেখতে পাবেন এসবিএস অন-ডিমান্ড-এ।