গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- বাংলাদেশের পটুয়াখালীর উপকূল অঞ্চলে ভ্রমণ করেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, সেই অভিজ্ঞতা থেকে জেলেপল্লীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন
- ছবিতে পেশাদার শিল্পীরা ছাড়াও অনেক অপেশাদার শিল্পীরা অভিনয় করেছেন
- এ বছরের শেষদিকে ছবিটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে পারবেন বলে নির্মাতার প্রত্যাশা
'নোনা জলের কাব্য' নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ডেব্যু ফিল্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির টিস্ স্কুল অফ আর্টসে চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
মিঃ সুমিত এসবিএস বাংলাকে তার ছবির থীম সম্পর্কে বলেন, টিস্ স্কুল অফ আর্টসে পড়ার সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ ছবির বিষয় নিজ দেশ বা সংস্কৃতি থেকে নিতে বলা হয়।রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত বলেন, এর আগে ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত উপকূল অঞ্চলে বন্ধুদের সাথে যান পর্যটক হিসেবে । সেখানকার জেলেপল্লীতে লোকজনের সাথে কথা বলে তাদের জীবন সংগ্রামের কাহিনী শোনেন।
Rezwan Shahriar Sumit is the Director of 'The Salt in Our Waters' ('নোনা জলের কাব্য') Source: Rezwan Shahriar Sumit
তিনি বলেন, তখন থেকেই তার এ বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ জাগে, বিশেষ করে তাদের প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা।
"...তারপর মনে হলো প্রান্তিক যে জনগোষ্ঠী, তারা যে অঞ্চলটাতে থাকেন, সেখানকার মাটি এবং পানির, বর্তমান ও অতীতের সংঘাত - এ ব্যাপারগুলো ওখানে একদম পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলোচ্ছ্বাস হয়, লবণাক্ততা বাড়ে, এ ব্যাপারগুলো তারা সরাসরি প্রত্যক্ষ করছে, কিন্তু এর আসল কারণগুলো তাদের জানা নেই।"
"তাদের মধ্যে ধর্মীয় কুসংস্কারের মত বিষয় যেমন আছে, পাশাপাশি তাদের জীবনে রং আছে, স্বপ্ন আছে,....সে ব্যাপারগুলো কখনো আমরা দেখতে পাই না। ...আমি এমন একটা সিনেমা বানাতে চেয়েছিলাম যেখানে আমরা আমাদের অদেখা বিষয়গুলো তুলে আনবো," বলেন মি: সুমিত।
'নোনা জলের কাব্য' নির্মাণ করতে গবেষণার কাজে পাঁচ বছর উপকূলে জেলেদের সাথে কাজ করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। ছবিতে পেশাদার শিল্পীরা ছাড়াও অনেক অপেশাদার শিল্পীরা অভিনয় করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এসময় তাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়,....এই নিবিড় সম্পর্কের সূত্রে আমার মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ কাজ করেছে যে সিনেমাটা আমি বাস্তবানুগ করার চেষ্টা করবো। তাই আমাকে ওদের নিয়েই কাজ করতে হয়েছে .... ওরা ক্যামেরার সামনে যেমন কাজ করেছে, পেছনেও কাজ করেছে।"এই ছবিতে পেশাদার শিল্পীদের মধ্যে প্রখ্যাত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এছাড়া আরও চার-পাঁচ জন প্রশিক্ষিত শিল্পী অভিনয় করেছেন।
Titas Zia and Tasnuva Tamanna acted in main roles in "The Salt in Our Waters'. Source: My Pixel Story
পেশাদার নন এমন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জ ছিল এ সম্পর্কে মিঃ সুমিত বলেন, তারা অনেকেই ক্যামেরার শুটিং আগে দেখেনি, তাই তাদের সেই ভীতি কাটিয়ে ওঠার একটি বিষয় ছিলো।
"...শুটিংয়ের সময় চরিত্রগুলোর মুভমেন্ট বা ব্লকিং সেই অর্থে করা হয়নি, তাদের অনেককেই চরিত্র দেয়া হয়েছে তাদের পেশার ভিত্তিতে যেমন, যিনি জাল বুনছেন তাকে সেই চরিত্রটি দেয়া, তাই সেটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল না, কিন্তু ক্যামেরার সামনে অভিনয় করানোটা ছিলো চ্যালেঞ্জিং। যেমন, একই শট একাধিকবার নেয়া, এগুলো প্রথমদিকে তাদের বুঝতে সময় লেগেছে।"ছবিতে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য যেমন সমুদ্রে মাছ ধরার দৃশ্য, ঝড়, গ্রামবাসীকে সাইক্লোন সেন্টারে নেয়া ইত্যাদি এই দৃশ্যগুলো করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান মিঃ সুমিত।
Fazlur Rahman Babu acted in an important role in 'The Salt in Our Waters' Source: My Pixel Story
"তবে সমুদ্রে মাছ ধরার দৃশ্যগুলোতে স্থানীয় জেলেরাই অভিনয় করেছেন, দুজন বাইরের শিল্পী ছিলেন যাদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।...সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার দৃশ্যে 'ক্রাউড কন্ট্রোল' করা বেশ কঠিন ছিল, কিছু কিছু জায়গায় 'মুভি ম্যাজিক' বা ভিএফএক্সের ব্যবহার, ছোটখাটো কিছু জিনিস যোগ করেছি।"
ছবির একটি অংশে একটি বিশাল জাহাজ দেখা যায়, সেটি কোন এক সাইক্লোনে উপকূলে আটকে গিয়েছিলো, কিন্তু পরে আর সেটি উদ্ধার করা যায়নি।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত জানান, জাহাজের ওই দৃশ্যগুলোতেও ভিএফএক্সের কিছু কাজ ব্যবহার করা হয়েছে।
"জলবায়ু পরিবর্তন বা কিংবা যে কোন কারণে মানব সভ্যতা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে এমন ধারণার ভিত্তিতে জাহাজটির এভাবে সমুদ্র তীরে আটকে পড়ে থাকার বিষয়টি ছবিতে প্রতীকী হিসেবে এসেছে।"'নোনা জলের কাব্য' বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলিচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে, যেমন ২০২০ সালে লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়, এরপর বুসান, গুটেনবার্গ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ বেশ কয়েকটি দেশে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোভিড লকডাউনের কারণে ছবিটি এখনো বাংলাদেশের দর্শকরা এখনো দেখার সুযোগ পায়নি।
'The Salt in Our Waters' is the story of struggle of the people of remote coastal area of Patuakhali, Bangladesh. Source: My Pixel Story
মিঃ সুমিত প্রত্যাশা করছেন, এ বছরের শেষদিকে ছবিটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে পারবেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বাংলাভাষী দর্শকরা যাতে ছবিটি দেখার সুযোগ পান সেই প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত এসবিএস বাংলাকে তার পরবর্তী প্রকল্প সম্পর্কে বলেন যে তিনি একটি সায়েন্স ফিকশন গল্পের থীম নিয়ে ফিল্ম তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং একই সাথে আশা করছেন যে আগামী বছরের কোন এক সময়ে ছবির শুটিং হবে।
'নোনা জলের কাব্যে'র চিত্রনাট্য ও পরিচালনা ছাড়াও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন ইলান জিরার্ডের সাথে।
ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিতাস জিয়া, তাসনুভা তামান্না, ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, অশোক ব্যাপারি, আমিনুর রহমান মুকুল, রোজি সিদ্দিকী এবং দুলারি তাহিম।
ছবিতে সুর দিয়েছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব, চিত্রগ্রাহক ছিলেন চানানুন চতরুংগ্রোজ, সম্পাদনা করেছেন ক্রিস্টেন স্প্রাগ, লুইজা পারভ্যু এবং শঙ্খজিৎ বিশ্বাস।
যে কোম্পানিগুলো ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে সেগুলো হচ্ছে আরসাম ইন্টারন্যাশনাল (ফ্রান্স), মাই পিক্সেল স্টোরি (বাংলাদেশ) এবং হাফ স্টপ ডাউন (বাংলাদেশ), এবং এর আন্তর্জাতিক পরিবেশক ফিল্ম রিপাবলিক।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আরও দেখুন: