গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- সাবমেরিন চুক্তি বাতিল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন অব্যাহত
- প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইঙ্গিত করেছেন যে তাদের সামরিক জোটের শিকড় অনেক গভীরে
- স্কট মরিসন এবং ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই সপ্তাহের শুরুতে জি ২০-তে কিছুক্ষনের জন্য মুখোমুখি হয়েছিলেন
জি ২০ (G20) আলোচনায় অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকরা চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সাথে সরাসরি কথা বলতে পেরেছেন।
ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত আছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জি ২০-তে ভাষণ দেওয়ার পর তা আরো নাটকীয় হয়েছে।
মুহূর্তটি এসবিএস নিউজ ধারণ করেছিল, সেসময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকদের কূটনৈতিক ক্ষতির গভীরতা প্রকাশ করছিলেন।
তিনি বলেন, "AUKUS চুক্তিটি ফ্রান্সের জন্য খুব খারাপ খবর ছিল, তবে শুধু ফ্রান্সের জন্য নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য খুব খারাপ খবর এবং এটি অস্ট্রেলিয়ার অংশীদারদের আস্থায় প্রভাব ফেলবে। তাই আমি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মরিসনের সাথে খুব সরাসরি আলোচনা করেছি।"
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইঙ্গিত করেন যে তাদের সামরিক জোটের শিকড় অনেক গভীরে।
তিনি বলেন, আপনার দেশ যুদ্ধের সময় আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল, আমাদের স্বাধীনতা যখন ঝুঁকির মধ্যে ছিল তখন আপনারা সাড়া দিয়েছেন - আপনাদের আর আমাদের একই মূল্যবোধ রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যখন তার কঠোর সমালোচনা করেন তখন চারপাশে সাংবাদিকদের একটি জটলা তৈরী হয়েছিল।
একজন রিপোর্টার তাকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি মনে করেন কিনা, প্রধানমন্ত্রী মরিসন তাকে মিথ্যা বলেছেন!
উত্তরে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, আমি মনে করছি না, আমি জানি।
তবে তার এই দাবি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন দ্রুত খণ্ডন করেছিলেন।
একজন রিপোর্টার মিঃ মরিসনকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেছেন যে তিনি মনে করেন না আপনি তাকে মিথ্যা বলেছেন, তিনি জানেন আপনি তাকে মিথ্যা বলেছেন।
মিঃ মরিসন উত্তর দেন, আমি এর সাথে একমত নই।
তিনি সাবমেরিন চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেগুলো আমার সরকার নিয়েছে, তা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বার্থের জন্য। আমি এজন্য এক সেকেন্ডের জন্যও বিচলিত নই। এই সিদ্ধান্তগুলো কঠিন।
প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে একটি আন্তঃমহাদেশীয় সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ হয় যে ৯০ বিলিয়ন ডলারের সাবমেরিন চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।
সরকার ওই দুটি পশ্চিমা দেশের সাথে একটি পারমাণবিক শক্তি চালিত জোট করতে তাদের বেছে নিয়েছিল।
স্কট মরিসন এবং ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই সপ্তাহের শুরুতে জি ২০-তে কিছুক্ষনের জন্য মুখোমুখি হয়েছিলেন, তবে এটি স্পষ্ট যে ফ্রান্স রাগান্বিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মরিসন বলেছেন যে তিনি এই বছরের শুরুর দিকে প্যারিস সফরের সময় সাবমেরিন সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা পরিষ্কার করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমি খুব স্পষ্ট ছিলাম যে আমাদের যা সরবরাহ করা হবে তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থ পূরণ করতে যাচ্ছে না, এবং তখনও বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল এবং তারপরের মাসগুলিতে আমরা আলোচনা চালিয়ে গেছি এবং তারপরে আমরা তাকে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম।
জি ২০-তে স্কট মরিসনের এজেন্ডা ইতিমধ্যে ফ্রান্সের সাথে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্কের কারণে ম্লান হয়ে গেছে।
কিন্তু একটি দেশের প্রেসিডেন্ট অপর এক দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন অস্বাভাবিক ব্যক্তিগত অভিযোগ কূটনৈতিক সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যাবে তা পরিষ্কার নয়।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বার্নাবি জয়েস তার মতামত প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা কোনো দ্বীপ চুরি করিনি। আমরা আইফেল টাওয়ারকে বিকৃত করিনি। এটি একটি চুক্তি ছিল এবং চুক্তির শর্ত রয়েছে এবং সেই শর্তাবলী এবং প্রস্তাবগুলির মধ্যে আছে যে আপনি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আমরা সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছি।
বিরোধীদলীয় নেতা অ্যান্থনি আলবানিজি এই বিষয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্কট মরিসন তাকে যা বলেছেন সে বিষয়ে অত্যন্ত গুরুতর বিবৃতি দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ানদের এমন একজন নেতা দরকার যাকে বিশ্বাস করা যায়। আর বিশ্বকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখতে হবে।
তবে সংলাপ আবার শুরু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী আশাবাদী।
তিনি বলছিলেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি, আমি নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার আগে আমরা আরও কিছু কথা বলব।
আর সম্পর্কটা কখনো মেরামত হবে কি না, সে বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন- কোন কিছুই অসম্ভব না।
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আরও দেখুন: