ডঃ মোস্তফা শাফি লক্ষ করেছেন যে ২০১৬ সালের আগে বাংলাদেশের মধ্য বা উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে 'ইসলামী চরমপন্থায়' জড়িত হওয়ার রেকর্ড তেমন ছিল না, এর আগে মূলত দরিদ্র কিংবা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা ব্যক্তিরাই মৌলবাদী ভাবাদর্শে আকৃষ্ট হতো।
২০১৬ সালের হোলি আর্টিসান আক্রমণের ঘটনায় এই ধারণায় চিড় ধরে, যেখানে দেখা যায় অনেক স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরাও চরমপন্থায় জড়িত হয়েছিল, যেটিকে ডঃ শাফি বর্ণনা করেছেন 'ওয়ারিং ট্রেন্ড' বা উদ্বেগজনক প্রবণতা।
তিনি বলেন, সহিংস চরমপন্থী প্রবণতা নিয়ে একাডেমিক গবেষণা করতে গিয়ে অনেক সময়েই 'আইডিওলজি' বা 'আদর্শিক' বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। যে কারণেই তারা বিশেষ ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হোক না কেন তার শীর্ষে থাকে 'আদর্শিক' ব্যাপারটি, যেটি তার ভাষায় 'পিরামিড রুট কজ মডেল'-এর অংশ এবং এটি লক্ষে পৌঁছুতে বড় ভূমিকা রাখে।আর 'ইসলামী চরমপন্থার' ক্ষেত্রেও এই 'আদর্শিক' বিষয় বড় ভূমিকা রাখে, যার জন্য আন্তর্জাতিক চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো তৎপরতা চালিয়ে আসছে।
Dr. Mostofa Shafi has researched on Islamic extremism. Source: Dr. Mostofa Shafi
ডঃ শাফি বলেন, "স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরণের ইস্যু মুসলমানদের হতাশ বা ক্ষুব্দ্ধ করে, যেমন পাশ্চাত্যে 'ইসলামোফোবিয়া' বা 'ইসলাম ভীতি' যার ফলে মুসলমানদের 'আইডেন্টিটি ক্রাইসিস' বা 'পরিচয় সংকট তৈরী হওয়া', কাশ্মীর, মিয়ানমারে মুসলিমদের প্রতি আচরণ, ইরাক-সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়গুলোর কারণে শিক্ষিত মুসলিম তরুণ-যুবকরা নিজেদের নিপীড়িত বা নির্যাতিত ভাবতে শুরু করে।"
এই বিষয়গুলোকে তার গবেষণায় বলা হয়েছে 'ম্যাক্রো ফ্যাক্টর' বা বৃহৎ পরিসরে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এছাড়াও নিজ দেশে দুর্নীতি, বিচার বহির্ভুত হত্যা, সর্বোপরি নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণে সরকারের ব্যর্থতাও এর অংশ বলে মনে করেন ডঃ শাফি।
"এর বাইরে 'মাইক্রো ফ্যাক্টর' বা ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা যেমন 'প্রেমে ব্যর্থতা', আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা সম্পত্তি দখল, এসব বিষয়গুলোও তাদের হতাশ করে তোলে এবং তারা সেই শূন্যতা পূরণ করতে গিয়ে ধর্মীয় চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়।"
তিনি বলেন, মূলত এইসব বিষয়গুলোর কারণে শিক্ষিত তরুণ-যুবক মুসলমানরা মনে করতে থাকে যে তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে।
ডঃ শাফি বলেন, এই ধারণাগুলো নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তারা নিজেদের অবস্থা এভাবেই বিবেচনা করে, নিজেদেরকে 'অবস্থার শিকার' বলে ভাবতে থাকে।
ডঃ মোস্তফা শাফির পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আরও দেখুন: