৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ফাইজার ভ্যাকসিনের সাময়িক অনুমোদন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের জন্য জুলাই মাসে এর অনুমোদন দিয়েছিল দ্য থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা টিজিএ। অস্ট্রেলিয়ার ভ্যাকসিন অ্যাডভাইজোরি বডি, দ্য অস্ট্রেলিয়ান টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজোরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন, যা ATAGI (আটাগি) নামে পরিচিত, তারা যদি এর অনুমোদন দেয়, তাহলে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর বয়সীদের জন্য এই টিকাদান কর্মসূচি এই জানুয়ারিতে শুরু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হেলথ মিনিস্টার গ্রেগ হান্ট বলেন, টিজিএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও এই বয়সীদের ওপরে কার্যকর।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ফাইজার ভ্যাকসিন হলো এম-আরএনএ ভ্যাকসিন। স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শুরুর সময়ে, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে, ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের দুই-ধাপ-বিশিষ্ট টিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে, এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে আটাগি। এই বয়সী শিশুদের জন্য এটি উপযোগী কিনা তা নিয়ে আরও খতিয়ে দেখবে তারা।
এরপর তারা পরামর্শ দিবে যে, ভ্যাকসিন কি সকল শিশুকে প্রদান করা হবে নাকি ইমিউন-কম্প্রোমাইজড শিশুদের দিয়ে এটি প্রদান করা শুরু করা হবে।
এটি কীভাবে বিতরণ করা হবে সে বিষয়েও তারা সুপারিশ করবে। যেমন, ডোজগুলোর মাঝে কী রকম সময় বিরতি রাখা হবে, ইত্যাদি।
ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির এপিডেমিওলজির প্রফেসর আলেকজান্দ্রা মার্টিনুক বলেন, কতগুলো ডোজ লাগবে এবং ডোজগুলোর মাঝে কতোটা সময় বিরতি রাখতে হবে, সেগুলো নিরূপণ করার একেবারে শেষের পর্যায়ে আছে আটাগি।
আরেকটি এম-আরএনএ ভ্যাকসিন হলো মডার্না। এটিকেও বিবেচনায় রাখছে টিজিএ।
শিশুদের জন্য কতগুলো ডোজ প্রদান করতে হবে তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড়দের তুলনায় শিশুদের ডোজ ছোট আকারের হবে।
পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সীদের জন্য ১০ মাইক্রোগ্রামের ডোজ দেওয়া হবে আর ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের জন্য তা হবে ৩০ মাইক্রোগ্রাম করে।
পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে অরেঞ্জড-ক্যাপড ভায়াল ব্যবহার করা হবে। এর বিপরীতে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় গ্রে কিংবা পার্পল কালারের ভায়াল।
প্রফেসর মার্টিনুক বলেন, ভ্যাকসিন সরবরাহকারীদের মাঝে যেন কোনো ধরনের সংশয়ের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য এ ব্যবস্থা।
শিশুদের মাঝে তীব্র কোভিড-সংক্রমণের হার অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও কেন তাদেরকে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প-সংখ্যক শিশুর কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ভয়ানক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে এবং এমনকি এর ফলে তাদের মৃত্যুও হতে পারে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, মার্চ থেকে অক্টোবরের মাঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী ১.৯ মিলিয়নেরও বেশি শিশুর কোভিড-১৯ সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছে।
৮,৩০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ৯৪ জন মারা গেছে।
এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদেরকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা শুরু করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লেসিও বলেন, এই বয়স-সীমার সকল শিশুকে ডাইনিং কিংবা কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ভেন্যুতে প্রবেশের আগে অন্তত একটি টিকা গ্রহণ করা থাকতে হবে।
ইওরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা এবং ইসরায়েলও কম-বয়সী শিশুদের জন্য ফাইজার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে।
চীনে ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সিনোভ্যাক এবং সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, চিলির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি শিশুদের জন্য একটি টিকাদান কর্মসূচির প্রচারাভিযান শুরু করেছে। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে তারা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন দিচ্ছে।
চিলির প্রেসিডেন্ট সিবাস্টিয়ান পিনইয়ারাহ্ এই টিকাদান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রফেসর মার্টিনুক বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড কেসগুলোর প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগের বয়স ১২ বছরের নিচে।
কোভিড-১৯ এর ফলে মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটোরি সিনড্রোম বা মিস্ক হতে পারে, যা কখনও কখনও গুরুতর রূপ নিতে পারে। এই বয়স-সীমার শিশুরা এর প্রতি সংবেদনশীল।
এই ভ্যাকসিনের দু’টি অতি বিরল পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলো মায়োকার্ডিটিস ও পেরিকার্ডিটিস। মায়োকার্ডিটিস-এ হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোতে প্রদাহ হয় আর পেরিকার্ডিটিস-এ হৃৎপিণ্ডের আশেপাশের টিস্যু বা কলাগুলো ফুলে যায় ও প্রদাহ হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মাঝে প্রতি মিলিয়নে ২০০ জনের কম ছেলের এবং ৩০ জনেরও কম মেয়ের মায়োকার্ডিটিস হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
প্রফেসর মার্টিনুক বলেন,
মার্ডক চিলড্রেন্স’ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অবসাদের সঙ্গে সম্পর্কিত লং-কোভিড কন্ডিশনের বিষয়টি বড়দের তুলনায় শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায় না।
তবে, এতে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে মাথা ব্যথা, অবসাদ, ঘুমে ব্যাঘাত, মনোযোগহীনতা এবং পাকস্থলীতে ব্যথার মতো বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত সময়ে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিশুদেরকে টিকাদানের ঝুঁকি কতটুকু তা খতিয়ে দেখার জন্য টিজিএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড এবং স্পেনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে এবং সতকর্তার সঙ্গে দেখেছে।
মার্ডক চিলড্রেন্স’ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ফিওনা রাসেল এক বিবৃতিতে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন শিশুকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষা-ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা গেছে যে, তারা নিরাপদ।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী নিয়ে বর্তমানে যেসব স্বাস্থ্য-সেবা ও সহায়তা পাওয়া যায়, সে-সব সম্পর্কে আপনার ভাষায় জানতে ভিজিট করুন
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।