জনসাধারণের জন্যে খুলে দেয়া হল পদ্মা সেতু
পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৫ জুন শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটা আমাদের সক্ষমতা, আমাদের আবেগ। এটা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। পদ্মা সেতুর জন্য আমি গর্ববোধ করি।
এর আগে হেলিকপ্টারযোগে মুন্সিগঞ্জের দোগাছি পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়া-১ এ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত সুধীসমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। অংশ নেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, দেশের রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করা মানুষ Source: AAP, AP
সেখানেই স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। মাওয়ায় স্থাপিত টোল প্লাজায় টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন তিনি। পরে তিনি যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে কয়েক লাখ মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন সকাল থেকে।
বর্ণিল আয়োজনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সেতু নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধরী বন্যাসহ দেশের ১০ শিল্পীর গাওয়া একটি গান প্রকাশ করা হয়েছে। কবির বকুলের লেখা ‘পদ্মা সেতু’ শিরোনামে গানটিকে ‘অফিসিয়াল থিম সং’ বলছে গানের প্রযোজনা সংস্থা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ সেতু মন্ত্রণালয়।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠান ও জনসমাগম হয়েছে বলে জানা গেছে। নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে এরকম একটি আয়োজন করা হয়। সিডনির লাকেম্বায় স্থানীয় একটি রেস্তোঁরার হলঘরে টিভিপর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখানো হয়।বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক নোমান শামীম এসবিএস বাংলাকে জানান, আগত অতিথিদের আপ্যায়নের পাশাপাশি একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে। প্রায় দেড়শত প্রবাসী বাংলাদেশী একত্রিত হয়ে সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনন্দ উদযাপন করেন। ২৫ জুন শনিবার দুপুর ১টায় শুরু হয়ে ৬টা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে।
সিডনিতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান উদযাপনের আয়োজন করা হয় Source: Al Noman Shamim
এসবিএস বাংলাকে নোমান শামীম বলেন, “পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতার প্রতীক। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব প্রদানের জন্যে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন।“
এদিকে পদ্মা সেতু তৈরিকে স্বাগত জানালেও অনেকেই এর অর্থায়ন ও খরচের খাত নিয়ে ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।
মেলবোর্নের বাসিন্দা শামসুল আরেফিন এসবিএস বাংলাকে পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত জানান। তিনি বলেন, “দেশের মানুষের জন্যে নির্মিত পদ্মা সেতুকে সকলেই স্বাগত জানায়, কিন্তু এই সেতু নির্মাণের সময়কালীন বাজেট ও অন্যান্য কাজের ভেতরে স্বচ্ছতা থাকার প্রয়োজন ছিল।“ শামসুল আরেফিন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান বা এবিএ-র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, “সরকার দাবী করছে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু করা হয়েছে, কিন্তু সেই অর্থ কোন খাত থেকে এসেছে এবং দেশের মানুষ কীভাবে ও কতদিন ধরে এই অর্থ পরিশোধ করবে সে সম্পর্কেও স্পষ্ট তথ্য দেয়া থাকলে ভাল হতো।“
READ MORE
এসবিএস বাংলা ফেসবুক নীতিমালা
এসবিএস বাংলা আরও কথা বলেছে বিএনপি অস্ট্রেলিয়া শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দেশে এত বড় একটি অবকাঠামো তৈরি হলে তার সুফলতো অনেকেই পাবে। কিন্তু দশ হাজার কোটি টাকার একটি সেতু তৈরি করতে বত্রিশ হাজার কোটি টাকা কেন খরচ হল এর কোনও ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তাই এই উন্নয়ন কি জনগণের হয়েছে নাকি কেউ নিজেদের উন্নয়ন করে নিয়েছেন সেটাও একটি প্রশ্ন।“
হাবিবুর রহমান বলেন, “সিলেটে বন্যায় দেশের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। কিন্তু সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এত টাকা খরচ করাও বিরাট অপচয়।“
এদিকে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরির ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে এর মিলনয়াতনে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার উপভোগের আয়োজন করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের একাংশ এতে অংশগ্রহণ করেন।উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শুরুতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তারা সরে দাঁড়ালে, নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে। গত বছরের আগস্ট মাসে এই সেতুর সর্বশেষ স্ল্যাবগুলো বসানো হয়।
ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের মিলনায়তন। Source: Bangladesh High Commission, Canberra
গত ২৬ জুন রবিবার থেকে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের উদ্দেশ্যে জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে।
এসবিএস বাংলার ঢাকা প্রতিনিধি আলী হাবিবের অডিও প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।