সিডওয়েস্ট মাল্টিকালচারাল সার্ভিসেস-এর স্পেশালিস্ট মাইগ্র্যান্ট ডমেস্টিক ভায়োলেন্স প্রজেক্টের মৌসুমী মার্টিন বলেন, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য “অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন রকম সহায়তা দেবার ব্যবস্থা আছে।”
তিনি বলেন, সিডওয়েস্টের কাজ হচ্ছে, যারা এর ভিক্টিম হয়েছে তাদেরকে কেস ম্যানেজমেন্টে সহায়তা করা। যেমন, সেন্টারলিঙ্কে নিয়ে যাওয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করা ইত্যাদি।
“মূলত তার হাত ধরে নিয়ে চলা এবং তার পথ চলাটাকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সিডওয়েস্ট কাজ করে।”
ঘরোয়া ও পারিবারিক সহিংসতার পেছনে কোন বিষয়গুলো ভূমিকা রাখে?
মৌসুমী মার্টিন বলেন, “আমরা যে পারিবারিক বলয়ে বড় হই, সেখানে কিন্তু আমরা শিখি যে, একটা মেয়ে এবং একটা ছেলের মধ্যে যে নানান রকমের তফাৎ তৈরি করে দেয় পরিবার থেকে।”
“সহিংসতার পেছনে আমরা মূল কারণগুলো যদি বলি, পরিবার থেকেই কিন্তু আমরা শিখে আসছি জিনিসগুলো, বাংলাদেশী পরিবারে বিশেষ করে।”
“ডেফিনিটলি পরিবারে বেড়ে ওঠার বিষয়গুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখে, পরিবারে যদি ডমেস্টিক ভায়োলেন্স থাকে, ছেলে-মেয়েরাও সেগুলো শিখে এবং পরবর্তী জীবনে দেখা যায়, তারাও সেগুলো করছে।”
“পরিবার থেকে যে আমরা এই শিক্ষাগুলো পাই যে, কীভাবে আসলে অন্যকে রেসপেক্ট করতে হয়, কীভাবে আমি অন্যের মূল্যবোধগুলোকে বিশ্বাস করবো এবং নিজে জিনিসগুলো চাপিয়ে না দিয়ে অন্যের বিষয়গুলোকে বোঝা এবং মেনে নেওয়া বা এগুলোকে রেসপেক্ট করা, তাহলে হয়তো অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো কাটিয়ে ওঠা যায়।”
“অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, দৈহিক নিপীড়ন না করলেও মুখে এমন ভার্বাল অ্যাবিউজ করছি আমরা যে, মহিলা কী করবে, তা সে বুঝতে পারছে না।”
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ঘরোয়া ও পারিবারিক সহিংসতা কীভাবে হ্রাস করা যায়?
মৌসুমী মার্টিন বলেন,
“মহিলাদেরকেও খানিকটা এগিয়ে আসা দরকার। বিশেষ করে, আমরা যারা অভিবাসন নিয়ে এদেশে এসেছি। নানা রকম চাপ থাকে ছেলেদের ওপরে। সেই চাপটা যদি আমরা মহিলারাও ভাগ করে নিতে শিখি, ক্রমাগত ছেলেদের ওপর চাপ না দিয়ে আমরা যদি সে চাপটা শেয়ার করি, তাহলে হয়তো খানিকটা এ বিষয়গুলোকে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি।”
“দু’পক্ষকেই বুঝতে হবে যে, কোন কোন বিষয়গুলো আসলে আমাদেরকে এই ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কি সহায়তা করা সম্ভব?
মৌসুমী মার্টিন বলেন,
“হঠাৎ করে যখন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স হয়, তখন আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তিটা কেঁপে উঠে।”
“তখন আমরা ভাবি, আমাদের আশেপাশে যারা আছে, তারা সবাই বুঝি আমাদের শত্রু, কেউ আমাদের সহায়তা করবে না, কেউ আমাদের ভালবাসবে না। আমরা একটা বিশাল যুদ্ধের মাঝে পড়ে যাই।”
“আমরা কোনো কিছু বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা সামনে একটা পা নিতেও ভয় পাই। আমরা ভাবি, এই বুঝি আবার আমাকে আক্রমণ করা হবে। এই বুঝি আমার কিছু একটা সমস্যা হবে। এই রকম একটা পরিস্থিতি যখন হয়, সাইকোলজিস্টের কাছে কাউন্সেলিং যেটা সাহায্য করে সেটা প্রথমত, তার এই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে তাকে সামলিয়ে উঠতে তার এই পরিস্থিতিটাকে বুঝতে সাহায্য করে।”
“ডমেস্টিক ভায়োলেন্স হলে সেই কনফিডেন্স লেভেলটা হারিয়ে যায়, যে ক্ষতিটা হয়, সেই ক্ষতিটাকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে কাউন্সেলিং।”
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কী রকম প্রভাব পড়েছে?
মৌসুমী মার্টিন বলেন,
“আইসোলেশনের কারণে নানা রকম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়েছে আমাদের মধ্যে।”
“কোভিড-১৯ এর কারণে আমাদের যে আইসোলেশন তৈরি হয়েছে, সে কারণে দেখা যাচ্ছে, যে-সব পরিবারে আগেই ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ছিল, যারা কখনও বাইরে সে-রকমভাবে প্রকাশ করে নি, অনেক সময় কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা দেখেছি যে, সেটা প্রকাশ পেয়ে গেছে।”
কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ সময় এক সঙ্গে থাকাতে “পজেটিভ-নেগেটিভ, দুটোই হয়েছে।”
“কোভিড-১৯ এর কারণে পারিবারিক সহিংসতা হয়তো কিছুটা বেড়েছে, কিছুটা হয়তো আবার যাদের মধ্যে ছিল, তারা হয়তো আবার রিপেয়ার করতে পেরেছে।”
সম্পর্কের উন্নয়নে সময় থাকতেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত
মৌসুমী মার্টিন বলেন,
“একটা সম্পর্ক আমরা অনেক দূর টেনে নিয়ে এসে সেটা ভেঙ্গে যাওয়ার আগে, সেটাকে অনেক বেশি দূরে নিয়ে যাওয়ার আগে, আপনাদের জন্য অনেক রকমের ব্যবস্থা আছে। আপনারা কথা বলতে পারেন জিপির সাথে, কথা বলতে পারেন সাইকোলজিস্টের সাথে, কথা বলতে পারেন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ওয়ার্কারদের সাথে। যারা আপনাদেরকে সহায়তা করতে পারে, সংসারটা অনেক বেশি এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আগেই।”মৌসুমী মার্টিনের সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
মৌসুমী মার্টিন বলেন, “কোভিড-১৯ এর কারণে পারিবারিক সহিংসতা হয়তো কিছুটা বেড়েছে, কিছুটা হয়তো আবার যাদের মধ্যে ছিল, তারা হয়তো আবার রিপেয়ার করতে পেরেছে।” Source: Supplied by Moushumi Martin