আসছে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলছে প্রার্থী মনোনয়নের চূড়ান্ত কার্যক্রম। বিরোধীতা থাকলেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের সবক'টি রাজনৈতিক দল।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে, সংবাদ জানতে এমনকি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতেও পছন্দ করেন। আর তাই, বাংলাদেশীদের কাছে ভোট মানেই এক উৎসব। অথচ, তার ঠিক উল্টোটা অস্ট্রেলিয়ায়। এখানে রাজনীতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই খুব বেশী। তাই বলে দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে কিন্তু আগ্রহের কমতি নেই।
আসছে নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা? সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কিই-বা করা উচিৎ? নির্বাচনের এমন নানা ইস্যু নিয়ে প্রবাসী শিক্ষাবিদদের সাথে কথা বলেছে এসবিএস বাংলা। ফোনালাপে ছিলেন, ম্যাকুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ফ্লোরি ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স এন্ড মেন্টাল হেলথের সহযোগী অধ্যাপক আখতার হোছাইন এবং গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকী শামিম।
ব্যালট বাক্স। Source: AFP
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলতা
"যেসব কারণ দেখিয়ে মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে তা আসলেই হাস্যকর। নির্বাচন কমিশনের এ ধরণের কার্যকলাপ নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সব দলের ক্ষেত্রেই আইন সমানভাবে কার্যকর হওয়া উচিৎ," বলেছেন মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকী শামিম।
জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আখতার হোছাইন বলেন, "সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার এবং কমিশনের কার্যক্রম সুস্পষ্ট নয়। নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ হবে, এ বিষয়ে এখনই হতাশ বা অতি উৎসাহী হওয়ার কিছু নেই।"
"সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। এখন পর্যন্ত কমিশনের নেয়া কিছু পদক্ষেপ সফল এবং কিছু পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে," বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
সরকারের ভূমিকা
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রকৃত বিরোধী দল থাকা উচিৎ। তবেই উপকৃত হবে দেশ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা হবে বর্তমান সরকারের বিরাট সফলতা।
"নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। অতীতে বেশ কিছু দিন তা হয়নি। যার ফলে সরকার বিনা বাধায় এবং বিনা দ্বিধায় যা কিছু করার করেছে।"
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুন্দর ও সু্ষ্ঠু হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকী শামিম। তিনি বলেন, "সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে চাচ্ছেন তার চেয়ে আরো অনেক ভালোভাবে করার সুযোগ ছিল।"
আখতার হোছাইন বলেন, "নির্বাচনকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করতে সরকারের উচিৎ কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেয়া ওয়াদা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।"
১৪ নভেম্বর ঢাকার দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় বিএনপির কর্মীরা। Source: SIPA USA
নির্বাচনী উৎসব
"একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে, কমিশনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে আস্থার সংকটে ভুগছে বিরোধী দলগুলো। সবার আস্থা অর্জন করে নির্বাচনে গেলে ভালো হতো। তখন নির্বাচনী উৎসবটা অনুভব করা যেত," বলেছেন সহযোগী অধ্যাপক আখতার হোছাইন।
"ভোটের মাধ্যমে মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর এ নিশ্চয়তা পেলেই আনন্দ আর উৎসবে ভোট দিতে যাবে সাধারণ মানুষ।"
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল দেখে বুঝার উপায় নেই কতটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ কতটা সম্পৃক্ত তা এখনও নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।"
ভোটারদের করণীয়
কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যথাসময়ে সঠিক ভাবে সামলাতে পারেনি সরকার। নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে ক্ষমতাসীন দলের ভোটব্যাংকে, এমনটাই মনে করছেন প্রবাসী শিক্ষাবিদরা। দল নয় দেশকে প্রাধান্য দিয়ে সঠিক মানুষকে ভোট দেয়ার আহ্বান তাদের।
"হার্ডলাইনে না গিয়ে, সমঝোতার মাধ্যমেও এই আন্দোলনগুলো সামলাতে পারত সরকার।" অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, "আইন প্রয়োগে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ এবং হেলমেটধারীদের আশ্রয় দেয়া ঠিক হয়নি।"
"নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো গণমুখী নানা পরিকল্পনার কথা বললেও, পরবর্তীতে তারা নিজস্ব স্বার্থে কাজ করে। এতে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অনীহা কাজ করছে।"
আখতার হোছাইন বলেন, "যেসব নির্বাচনী এলাকায় যোগ্য মহিলা প্রার্থী আছে, ভোটারদের উচিৎ তাদের নির্বাচিত করা। নারী উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ আমাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হচ্ছেন নারী। পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী কাউকেই যেন নির্বাচিত করা না হয়।"
"ব্যক্তি শেখ হাসিনার কারণেই ভোট পাবে আওয়ামী লীগ। গত দশ বছরে তিনি সে জায়গাটা তৈরি করেছেন।" মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকী শামিম আরো বলেন, "দল নয় দেশের জন্য সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে হবে।"
৫ আগস্ট ঢাকায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ফটোসাংবাদিক রাহাত করিম dailystar.net/Ibnul Asif Iawad Source: dailystar.net/Ibnul Asif Iawad
নির্বাচনী ইশতেহারে উচ্চ শিক্ষার প্রাধান্য
"রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে এটা থাকা উচিৎ যে ক্ষমতায় আসলে কয়টা বিজ্ঞান গবেষণা ইন্সটিটিউট চালু করবে তারা। আর তা দেখেই শিক্ষার্থীরা যেন ভোট দেয়," এমন আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার মুহম্মদ জে এ সিদ্দিকী শামিম।
ফ্লোরি ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স এন্ড মেন্টাল হেলথের সহযোগী অধ্যাপক আখতার হোছাইন বলেন, "ক্ষমতায় আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে সরকার কি করবে এবং গবেষণায় কতটা বরাদ্দ থাকবে, এর বিশদ ঘোষণা থাকতে হবে নির্বাচনী ইশতেহারে।"
নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীলতা বজায়ে এখন থেকেই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শিক্ষাবিদরা।