সিনিয়র আইটি কনসালটেন্ট নাজমুল হাসান সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ফ্রি হালাল হট মিল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছেন। ‘ফ্রিহটমিলস-ক্যানবেরা’ নামের এই সার্ভিসটি স্পর্শবিহীন সেবা এবং যে কেউ জনাব হাসানের ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন ফর্মের মাধ্যমে ডেলিভারির অনুরোধ করতে পারে।
যেভাবে শুরু
নাজমুল হাসান বলেন, লকডাউনের সময় অনেকের কোন কাজ ছিল না, অনেকের ঘরে খাবার নেই, অনেকে আছেন চরম দুর্দশায়।
"তখন অনেক ব্যক্তি, ইসলামী কমিউনিটি, মুসলিম সংগঠনসহ অনেকভাবে চেষ্টা করলাম কষ্টে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য করা যায় কিনা। তখন কোথাও কোন ইতিবাচক সাড়া পেলাম না, তখন নিজের একক প্রচেষ্টায় নিজ অর্থে ফেসবুকে ‘ফ্রিহটমিলস-ক্যানবেরা’ নামে পেজ খুলে মানুষের জন্য হালাল খাবারের ব্যবস্থা করতে শুরু করলাম।"
প্রেরণা পেয়েছেন ইসলামের আদর্শ আর পারিবারিক মূল্যবোধ থেকে
মিঃ হাসান বলেন, খাবার মানুষ কে কাছে টেনে "ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে, ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি হচ্ছে যাকাত বা চ্যারিটি। তাছাড়া আমার পরিবারেও আছে মানুষকে সাহায্য করার ইতিহাস, আমার দাদা-দাদী, নানা-নানী, মা-বাবাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের দেখেছি মানুষকে সাহায্য করতে, এই মূল্যবোধই আমাকে চ্যারিটি কাজে উদ্বুদ্ধ করে।"
পেশায় আই-টি কনসালটেন্ট মিঃ হাসান প্রতিদিন কাজ শেষে এই ফ্রী ডেলিভারীর কাজটি করেন, প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা ড্রাইভ করে মানুষের বাড়ি খাবার পৌঁছে দেন তিনি।
স্থানীয় রেস্টুরেন্ট 'বিডি ডাইনে'র স্বত্বাধিকারী মি: শহিদুল তাকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহ করেন যেগুলো হালাল, ফুড সেফটির স্ট্যান্ডার্ডে নিরাপদ।
পরবর্তী কালে অনেকেই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, স্থানীয় সাংসদ এমনকি এসিটির চীফ মিনিস্টার এন্ড্রু বার তার তহবিলে ৭,৫০০ ডলার অনুদান দিয়েছেন।
স্ত্রী-সন্তানদের থেকে পাচ্ছেন সহযোগিতা
পেশাগত কাজের পর খাবার ডেলিভারীর কাজ শেষে যখন নাজমুল হাসান বাড়ি ফেরেন তখন দেখেন ততক্ষনে সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তারপরেও তার স্ত্রী-সন্তানদের কোন অভিযোগ তো নেইই, বরং তারা এই কাজের জন্য সহযোগিতা করে আসছেন।
মিঃ হাসানের প্রত্যাশা মানুষকে সাহায্য করার যে ইসলামী শিক্ষা তা তার সন্তানদের মধ্যেও অব্যাহত থাকবে।সাহায্য করছেন আফগান শরণার্থীদের
Image representational. Source: EyeEm: Getty Images
মিঃ হাসান জানান, রেডক্রসের মাধ্যমে তিনি আফগান শরণার্থীদের সাহায্য করছেন, তাছাড়া আফগানদের সাথে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিল থাকায় এটি তার জন্য সহজও।
শুধু হালাল খাবারই নয়, তার বাইরে তাদের সাথে কথা বলা, কমিউনিটিতে সেটেল হতে সাহায্য করা, সর্বোপরি তাদের কষ্টকর অভিজ্ঞতাগুলোও শুনছেন তিনি।
শুধু আফগান শরণার্থীরাই নয়, নতুন যে শরণার্থীরা আসবেন তাদের জন্যও রেডক্রসের সাথে অংশীদারিত্বের সাথে কাজ করবেন নাজমুল হাসান।
ক্যানবেরাতে তার প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর, ভবিষ্যতে তার সার্ভিসটি মেলবোর্ন, সিডনীসহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বড়ো বড়ো শহরগুলোতেও তার কার্যক্রম বাড়াতে চান মিঃ হাসান।
বিপদে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়াতে মুসলিম কমিউনিটির প্রতি আহবান জানিয়ে মি: হাসান বলেন,"চ্যারিটি কাজের মাধ্যমে আমরা ইসলামের আদর্শ তুলে ধরতে পারি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে। চ্যারিটির মাধ্যমে সমাজের প্রতি কর্তব্য, ন্যায্যতা, এবং ভালোবাসা যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়, তেমনি সমাজের কাছে ইসলামের শিক্ষাকে ইতিবাচকভাবেও তুলে ধরা যায়।"
মিঃ নাজমুল হাসানের পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আরও দেখুন: