অস্ট্রেলিয়ায় পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য আয়োজন

Bangla New Year 1426

Source: Chowdhury S A Beg

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে বরণ করা হলো বাংলা নববর্ষ ১৪২৬।


বাঙালির সার্বজনীন লোক-উৎসব পহেলা বৈশাখ। সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা সনের যাত্রা শুরু হয়। সম্রাট আকবরের নির্দেশে  রাজ-জ্যোতিষী ও পণ্ডিত আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজী বাংলা সন তৈরিতে গবেষণা শুরু করেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, সম্রাট আকবরের হাতেই বাংলা সনের গণনা শুরু।

কালের  পরিক্রমায় এই বাংলা বছর গণনায় এসেছে নানা পরিবর্তন। শুরুতে   বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। পরবর্তীতে বাংলা সনের  দিন ও তারিখ নির্ধারণ নিয়ে  জটিলতা দেখা দেয়। ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বঙ্গাব্দের বেশ কিছু সংস্কার করেন, গণনার সুবিধার্থে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দিনের সংখ্যা প্রতি মাসে ৩১  এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিন গণনার বিধান চালু  হয়।
Bangla New Year 1426
Source: Facebook
এক সময় পয়লা বৈশাখের প্রাণ ছিল মেলা, হালখাতা আর পুণ্যাহ উৎসব। সময়ের পালাবদলে নগরজীবনেও এসেছে পহেলা বৈশাখ উৎসব আয়োজন।

স্বাধীনতার পর বাঙালিরা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়, আর সেই সাথে বৈশাখের রং ছড়িয়েছে সর্বত্র। পিছিয়ে নেই এই প্রশান্ত পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়াও। বাঙালির এই উৎসবের স্বীকৃতি হিসাবে এবার প্রথম অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাণী দেন। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাভাষীদেরকে শুভেচ্ছা জানান এবং সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি করেন তিনি।
Message from PM
Source: Supplied
ঢাক-ঢোল আর নানান রঙের বৈচিত্রে  উৎসব আমেজে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে যেখানে বাঙালিরা রয়েছে সেখানেই  বর্ষবরণের উৎসব হয়েছে।

বৈশাখের নির্দিষ্ট দিনের আগেই  বৈশাখের আয়োজন উৎসব শুরু  হয় এই প্রশান্তপাড়ে।

বর্ষবরণের প্রথম আসর হয়  বিশ্বের অন্যতম ইভেন্ট ভেন্যু সিডনির  অলিম্পিক পার্কের এএনজেড অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ২৩ মার্চে।  ২৭ বছরের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করে বৈশাখী উৎসব। বলা হয় বাংলাদেশের বাইরে এটাই  সবচে বড় বৈশাখী মেলার আয়োজন। এবারের মেলায় প্রকৃতির বৈরিতার কারণে  দর্শক উপস্থিতি  কম ছিল অন্যান্য বারের তুলনায়।  মেলায় দেশীয় সংস্কৃতির উদ্‌যাপনসহ পাশ্চাত্য ঢঙ্গে ছিলো ফায়ার ওয়ার্কস বা আতশবাজির জমকালো আয়োজন। মেলায় স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে আসেন সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর ও কলকাতা থেকে এ সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী  আকাশ সেন। এসবিএস রেডিওর বাংলা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয় মেলা প্রাঙ্গন থেকে।
Bangla New Year 1426
Bangla New Year 1426 celebrated in Lakemba, Sydney on 14 April 2019. Source: Facebook
বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনির  আয়োজনে গত ৬ এপ্রিল শনিবার সিডনির ফেয়ারফিল্ড শো-গ্রাউন্ডে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলাটিও পহেলা বৈশাখের আগে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনির আয়োজিত মেলাগুলোর চাইতে এবারের মেলায় বিপুল দর্শকের সমাগম ঘটে। এ মেলাতেও ছিল নানান আয়োজন। বাংলাদেশ থেকে আসেন দুই প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পী বাবা-ছেলে জুটি ফেরদৌস ওয়াহিদ ও হাবিব ওয়াহিদ। বাবা-ছেলের পরিবেশনা মাতিয়ে রাখে মেলাকে। দিনভর নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি ছিল মনোরম আতশবাজি পোড়ানোর জমকালো আয়োজন।

বাংলা নববর্ষ  উদযাপন এর ধারাবাহিকতায়  ৭ এপ্রিল সিডনি বাঙালি কমিউনিটির আয়োজনে  ইঙ্গেলবার্ন কমিউনিটি হলে বসে  বৈশাখী মেলার আয়োজনে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে  বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকজ সঙ্গীতশিল্পী দিলরুবা খান এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দেন।
Bangla New Year 2019
Source: Shibli Chowdhury
এই মেলায়  ছিল নানান পণ্য আর খাবারের  বিভিন্ন স্টল। এখানে বাংলা ভাষাভাষীর মানুষের সঙ্গে নানা ভাষার মানুষের পদচারণা ও সাংস্কৃতিক ভাবের আদান-প্রদান হয়। এটাকে বৈশাখী মেলার আয়োজন বললেও প্রকৃত অর্থে বাঙালি স্বকীয়তার অভাব বোধ করেছেন অনেকেই।

বৈশাখী উৎসবের অন্যতম অংশ  বাহারি রঙের আলপনা ও ফেস্টুন। সিডনির লাকেম্বার রেলওয়ে প্যারেড সড়কে রঙিন  আলপনা মনে করিয়ে দেয় চারুকলার আল্পনার কথা। গত  বছর থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের  সঙ্গে যৌথভাবে মেলা আয়োজন করে বাংলা টাউন অস্ট্রেলিয়া। স্থানীয় ক্যান্টাবেরী-ব্যাংকসটাউন কাউন্সিল রেলওয়ে প্যারেডের  রাস্তাটি বন্ধ করার অনুমতি দিয়ে  বর্ষবরণ উৎসবকে আরো বর্ণিল করেছে।

বাংলা সংস্কৃতিকে অস্ট্রেলিয়ানদের মাঝে  তুলে ধরতে সিডনির কাম্বারল্যান্ড কাউন্সিলের ওয়েন্টওর্থভিল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন সাহা আয়োজন করেন বাংলা নববর্ষ উদযাপনের।  ১৪ এপ্রিল কাম্বারল্যান্ডের হোলরোয়েড সেন্টারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় বাংলাদেশিদের পাশাপাশি মূলধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।

নিউ সাউথ ওয়েলসের ডাবোতে পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। বারেনডং ড্যাম কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ওয়েলিংটন, ফোর্বস এবং ওয়ারেন থেকে আগত বাংলাভাষী নারী ও পুরুষেরা।

ছোট-বড় সবার জন্য ছিল খেলাধুলা, বাংলাদেশী মুখরোচক খাবার-দাবারসহ নানা আয়োজন।

ক্যানবেরায় নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬-কে বরণ করা হয়। ক্যানবেরা ইসলামিক সেন্টারে দিনব্যাপী বর্ষবরণ সম্মিলিতভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই কমিশন, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন ক্যানবেরা এবং সিনিয়র সিটিজেন ক্লাব। বাংলা বর্ষবরণে ছিল পিঠা উৎসব, বৈশাখী মেলা, প্রদর্শনী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
Bangla New Year 2019
Bangla New Year 'Pohela Boishakh-1426' was celebrated in Canberra with much colour, festivities and enthusiasm on Sunday, 14 April 2019. Source: Supplied
আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরার মান্যবর হাইকমিশনার সুফিউর রহমান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিনেটর ডেভিড স্মিথ, এসিটির বিরোধী দলীয় নেতা এলিস্টার কো সহ স্থানীয় বাংলাদেশীরা।

বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া সোসাইটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে অ্যাডিলেডে ফুলারটন পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ১৪ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাভাষীরা নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকজ সংগীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় আর চন্দনা মজুমদারের গান মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
Bangla New Year 2019
Bangla New Year celebration at Birrarung Marr, Melbourne CBD on 14 April 2019. Source: Jubaidul Jekab/Facebook
১৩ এপ্রিল মেলবোর্নের কিসবোরাহের সেকেন্ডারি কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় দিনব্যাপী চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ উৎসব। সেদিন সানশাইন বাংলা স্কুলের আয়োজন করে বৈশাখী মেলার। ১৪ এপ্রিল মেলবোর্নে বৈশাখী মেলা ও সাউথ এশিয়ান ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ২৭ ও ২৮ এপ্রিল বর্ষবরণ উৎসব ও বৈশাখী মেলা আয়োজিত হবে মেলবোর্নের হামিংবার্ড ও ডানডেনংয়ে।

ডারউইনেও উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন স্থানীয় বাংলাদেশিরা উৎসবে যোগ দেন। এই আয়োজনে ছিল দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যবস্থাও ছিল উৎসব প্রাঙ্গণে।
Bangla New Year 2019
Source: Nurul Islam Khan/Facebook
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .































Share