কাজী হক তার পিএইচডি গবেষণায় 'শর্ট রান একনমিক ফ্লাকচুয়েশন' বা অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি উত্থান-পতনের কারণ ও পরিণতি এবং তাতে মনিটারি পলিসি কি ভূমিকা রাখে তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে সম্পন্ন করা হয়েছে।
"ষাট বা সত্তরের দশকে সেখানে অর্থনৈতিক উত্থান-পতন ছিল বেশি, যা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।পরবর্তীতে আশির দশকে এই উত্থান-পতন কমে আসে, আমি এক্ষেত্রে মনিটরি পলিসির ভূমিকা কি ছিল তা বোঝার চেষ্টা করেছি।"তিনি বলেন, তার গবেষণায় তিনি একটি দেশের অর্থিনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মনিটরি পলিসির গুরুত্ব পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশি গবেষক কাজী হক Source: Supplied
"অর্থনীতি কিভাবে কাজ করবে সেক্ষেত্রে মানুষের প্রত্যাশা বড় ভূমিকা রাখে। যেমন ধরুন মুদ্রাস্ফীতি, এটি মৌলিক বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে যেমন ডিমান্ড-সাপ্লাই, উৎপাদনশীলতা ইত্যাদি। এই মুদ্রাস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখা মনিটরি পলিসির প্রধান ভূমিকার মধ্যে একটি; এই বিষয়গুলো আমি বিভিন্ন ডেটার সাহায্যে, এবং ম্যাক্রোইকোনোমির বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।"
একজন তরুণ গবেষক হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিকে মূল্যায়ন করেন এইভাবে যে এটি 'ধীরগতির সময়' পার করছে।
"যদিও গতবছরের তুলনায় জিডিপি কিছুটা বেড়েছে। তবে সুদের হার কম হওয়া, ট্যাক্স কাট, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, হাউজিং খাতে প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে সুফল দেবে।"
"কিন্তু ইউএস-চায়না বাণিজ্য বিতর্ক অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির জন্য 'রিস্ক ফেক্টর' বা ঝুঁকি তৈরী করবে কারণ, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি চায়নার ওপর নির্ভরশীল।"বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজী হক বলেন, "গত দশ বছর ধরে যে প্রবৃদ্ধি চলে আসছে তার সঠিকতা, স্থায়িত্ব বা ফলাফল নিয়ে আরো গবেষণা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।"
কাজী হক তার পিএইচডি থিসিস সম্পন্ন করেছেন অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে Source: Supplied
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে প্রবৃদ্ধি ও গড় মাথাপিছু আয়ে ভালো করছে। কিন্তু ব্যক্তিখাতে ভালো করছে কিনা এ বিষয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
"রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়িয়ে ব্যক্তি বিনিয়োগের অভাব পূরণ করাটা কতটুকু টেকসই হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর হবে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।"
"শুধু গড় অঙ্ক নিয়ে না ভেবে দেশে কি যথেষ্ট কর্মসংস্থান হচ্ছে, পুঁজিবাজার কি ভালো করছে বা গরিব মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটুকু ভালো হচ্ছে তাও বিবেচনা করতে হবে।"
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে শৃংখলার অভাব রয়েছে, খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাছাড়া সুদের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি বলে মনে করেন তিনি।
কাজী হক বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ায় আরো কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও শিক্ষকতা করতে চান।
কাজী হকের পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন