১.
বাংলাদেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো অভিযোগগুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ওই অভিযোগগুলোর স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং নিরাপত্তা খাতের সংস্কার হওয়া দরকার। চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বাশেলেত এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাশেলেত বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের যে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে, তার জন্য গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সুযোগ থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি জবাবদিহি ও ক্ষমতার ভারসাম্য থাকা অপরিহার্য। এগুলো টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক উন্নতির পথে বিভিন্ন বাধা ও দুর্নীতির ঝুঁকি কমাতেও ভূমিকা রাখবে। ’ তিনি বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য আগামী নির্বাচনের আগের সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার চার দিনের সফরে গত রবিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান। প্রথম দিন তিনি সরকারের চার মন্ত্রী এবং দ্বিতীয় দিন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কক্সবাজার যান। সফরের শেষ দিন সকালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
২.
'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সামরিক শাসনামলে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ।' জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত গত বুধবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার চাইতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করতে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার ‘ইনডেমনিটি’ (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেছিল। জোর করে নির্বাসন থেকে নিজের দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অধ্যাদেশের কারণে বিচার চাইতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস এ তথ্য জানায়।
৩.
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেসব বিষয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চায় বিএনপি। বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “প্রায় ছয়শর অধিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মী বা বিভিন্ন সিভিল সোসাইটির মানুষ, শ্রমিক নেতা- তাদেরকে গুম করা হয়েছে; বেশির ভাগকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। “এগুলোর কোনো সদুত্তর আমরা পাইনি, গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা পায়নি। একটা লোককে রাষ্ট্র গুম করে রাখবে, তার সমস্ত অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হবে, তার পরিবারকে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে- এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরনের অপরাধ অবশ্যই খুঁজে বের করা দরকার।” জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেলে ব্যাশেলে ঢাকা সফর করে যাওয়ার পরদিনই বিএনপি এই দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করল।
৪.
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় দেশের মানুষের যে কষ্ট তা ‘সাময়িক’ এবং অচিরেই দুঃসময় কেটে যাবে বলে আশা করছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, 'আমরা দোষী না, আমরা অপরাধী না। আমাদের আর্থিক সংকটে বৈশ্বিক পরিস্থিতির মূল্য দিতে হচ্ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ কষ্ট সাময়িক, এ দুর্দিন চলে যাবে।'
August 19, 2022, Sylhet, Bangladesh: Devotees take part during a colorful procession as part of the of Sri Krishna's Janmashtami celebration at the main streets of the city. on August 19, 2022, Sylhet, Bangladesh. (Photo by H M Shahidul Islam/ Eyepix Group). Credit: H M Shahidul Islam/ Eyepix Group/AAP
নিজেদের সংখ্যালঘু না ভেবে দেশের নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার নিয়ে চলতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এতে যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই এখানে সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে নিজের অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। “এই কষ্ট লাঘবের উদ্যোগ তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কষ্ট সাময়িক, এ দুর্দিন চলে যাবে।” তিনি বলেন, ‘আপনারা কখনো নিজেদেরকে সংখ্যালঘু বা এ রকম মনে করবেন না। আপনারা মনে করবেন এ দেশেরই নাগরিক। সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন। আমরা সেভাবেই আপনাদেরকে দেখতে চাই। সমান অধিকার থাকবে এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে পারলে দুষ্টু লোকেরা কিছু করতে পারবে না।’
৬.
দেশে চলমান ডলারসংকট কাটাতে ব্যাংকের পর এবার মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ লাভের সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মানি এক্সচেঞ্জ যে দামে ডলার কিনবে, তার চেয়ে এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে মুনাফার এ সীমার কথা মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ব্যাংকগুলো যে দামে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল আনবে তার থেকে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশিতে ডলার বিক্রি করবে। এ ব্যাপারে তারা নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তেমনি মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের গড় রেট থেকে তারা এক টাকা বাড়তি দামে ডলার কিনবে। আর বিক্রির ক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় টাকা পর্যন্ত মুনাফা করতে পারবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক খবরগুলো শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।