স্বামীর ভিসা-আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ওভারডোজ গ্রহণ করেন সতিন্দর

অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন সিস্টেমের কারণে মানসিক চাপের শিকারে পরিণত হচ্ছে কোনো কোনো ভিসা-আবেদনকারী। নতুন একটি ডকুমেন্টারি সিরিজে বিষয়টি উঠে এসেছে। স্থায়ী অভিবাসনের জন্য আবেদনকারী কয়েকজন বলেন, অভিবাসীদের মধ্যে যাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

Satinder and Sumit

Satinder and Sumit met in Melbourne in 2007. Source: Supplied

আধেয় সতর্কতা: এই প্রতিবেদনটিতে আত্মহত্যা এবং নিজের ক্ষতি-সাধন সম্পর্কিত বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে।

গত বছর মেলবোর্নে নিজের বাড়িতে খাবার টেবিলে বসেছিলেন সতিন্দর। তখন তার অভিবাসন আইনজীবি তাকে টেলিফোনে এক ভয়ানক সংবাদ দেন।

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে ... তারা ভিসা প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

“তারা বিশ্বাস করে নি যে, এই সম্পর্কি খাঁটি।”

ডকুমেন্টারি ফিল্মের ক্রুরা যেভাবে রেকর্ড করেছেন, তাতে দেখা যায়, তখন দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকেন সতিন্দর। ব্যাকগ্রাউন্ডে তার কুকুর শাইনিও কেঁউ কেঁউ করতে থাকে।

তিনি বলেন,

“আমি এখন জানি আমি কী করতে চাই।”

এই পর্যায়ে সতিন্দর বাথরুমে যায় এবং দরোজা বন্ধ করে দেয়। তার যদি কিছু ঘটে, সতিন্দর বলেন, সে জন্য অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্স দায়ী থাকবে। পরবর্তীতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তিনি ওভারডোজ গ্রহণ করছেন।

এই নাটকীয় দৃশ্যাবলী সম্প্রচারিত হয় বুধবার রাতে, এসবিএস এর নতুন ডকুমেন্টারি সিরিজ Who Gets to Stay in Australia? এর অংশ হিসেবে।

এতে স্থায়ী অভিবাসনের জন্য আবেদন করা ১৩ জন আবেদনকারী ও তাদের পরিবারের সম্পর্কে দেখানো হচ্ছে।

গত বছরের সেই সময়টিকে স্মরণ করে এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,

“সেটা আমার জন্য অনেক কঠিন সময় ছিল।”

“এই সংবাদটি পাওয়ার পরে সেই সময়টিতে আমি এতো মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম যে, মনে হচ্ছিল আমার মাথা বিস্ফোরিত হচ্ছে।”
Satinder and Sumit
Satinder and Sumit were told the Department of Immigration didn't think their relationship was genuine. Source: Supplied
সতিন্দর এবং সুমিত, দু’জনের বয়সই ৩০ এর কোঠায়। তারা দু’জনই ভারত থেকে এসেছেন। ২০০৭ সালে মেলবোর্নে তারা শিক্ষার্থী থাকাকালে পরস্পরের সংস্পর্শে আসেন।

সতিন্দর বলেন,

“আমরা দু’জনেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি ট্রাডিশনাল ভারতীয় পোশাক পরেছিলাম। তখন সে বলে, ‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে’।”

সুমিত বলেন,

“এটা আমার জন্য ছিল প্রথম দর্শনেই প্রেম।”

“সে ছিল অকৃত্রিম, মৃদুভাষী ... আমি এতে প্রভাবিত হই।”

তবে, পরবর্তী ছয় বছর সুমিতকে বন্ধু হিসেবেই গ্রহণ করেন সতিন্দর। ২০১৩ সালে তারা আবার একত্রিত হন।

গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন সতিন্দর। ২০১৫ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হন। সে বছরেই তারা বিয়ে করেন। কিন্তু, তার স্বামীকে স্থায়ী অভিবাসনের জন্য স্পন্সর করার বিষয়টি সতিন্দরের জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।

স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকালে সুমিত তার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও অবস্থান করেছিলেন। এ বিষয়টি তারা উভয়েই জানতেন। তারা আশঙ্কা করছিলেন যে, তাদের কেসটি ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্স-এ “রেড ফ্লাগ” হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তীতে তারা যেন ৩০৯/১০০ অফশোর পার্টনার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন সেজন্য সুমিত তখন ভারতে ফিরে যান। তখন তাদের কাছে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছিল।

এরপর তারা তিন বছরের জন্য পরস্পর-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য হন। তখন নানা প্রকার তদন্ত পরিচালনা করা হয়। এসবের মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতিনিধিকে ভারতে সুমিতের বাবা-মায়ের বাড়িতে পাঠানো এবং প্রতিবেশিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা। এরপর তার ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

তাদের ইমিগ্রেশন আইনজীবি ইউন চেন বলেন,

“এটা পুরোপুরিই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো।”

সতিন্দরকে ভিসা প্রত্যাখ্যান হওয়ার সংবাদটি টেলিফোনে তিনিই দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,

“অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইন জটিল। এতে অনেক সাবজেক্টিভনেস রয়েছে। সে (সতিন্দর) যখন এর ফলাফল জানতে পারে, এটা ছিল এ ক’বছরে নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করা ও সম্পর্কটি প্রমাণ করা।”

“মানসিক স্বাস্থ্য সহসাই ভেঙে পড়ে না। এটি ধীরে ধীরে আপনার মাঝে ফাটল ধরায় এবং যখন আপনি এ ধরনের সিদ্ধান্ত জানতে পারেন, তখন তা আপনাকে শুধু বিধ্বস্ত করে।”



কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট মুরাদিয়া সেলভি মেলবোর্নের মাল্টিকালচারাল সাবার্ব কোবার্গ-এ কাজ করেন। তিনি বলেন, সতিন্দরের কেসটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তার ক্লায়েন্টদের মধ্যে অনেকেই অস্থায়ী ভিসাধারী, যারা তাদের ভিসা-আবেদনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পার্টনার ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। তিনি বলেন,

“এগুলো হয়তো সবচেয়ে কঠিনতম কয়েকটি কেস।”

“তারা তাদের রেসিডেন্সির জন্য অপেক্ষা করছে যেন তারা তাদের জীবন এদেশে অতিবাহিত করতে পারে যেভাবে তারা ইতোপূর্বে পরিকল্পনা করেছে।”

“তাই তারা এই দীর্ঘায়িত অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছে।”

“অনিরাপত্তা, দীর্ঘায়িত অপেক্ষাকাল এবং নিজের ভবিষ্যত গুছানোর ক্ষেত্রে অক্ষমতা ও এই দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা- এ সবকিছু মিলে অস্থায়ী ভিসাধারী অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে কুপ্রভাব ফেলে।

মিজ সেলভি কারও কারও মাঝে পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, সাইকোসমেটিক ডিজঅর্ডার এবং অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার দেখেছেন। তিনি বলেন,

“বড় ধরনের ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারও এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আমাদের নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একটি অন্যরকম বড় উপসর্গ হলো আত্মহত্যার প্রবণতা। তাদের মনোভঙ্গি হলো, ‘পিছু হটার চেয়ে মরে যাওয়া শ্রেয়’। এটি পুরোপুরিই নৈরাশ্যজনক আচরণ।”

“আমরা যা যা করতে পারি তার সবই করি ... তবে এক ভদ্রলোক ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেন।”

সাংস্কৃতিক লজ্জাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে থাকে, বলেন তিনি।
Satinder and Sumit
Three months after their visa rejection, Satinder and Sumit held a traditional marriage ceremony in India. Source: SBS
“নতুন একটি দেশে বসবাস করার ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটজনদেরকে পেছনে ফেলে আসেন এবং আপনার নতুন জীবন নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখেন। কোনো কোনো সংস্কৃতিতে, আপনি ব্যর্থ হতে পারেন এটা মেনে নেওয়াটা অত্যন্ত কঠিন বিষয়।”

“কখনও কখনও, আমি যখন মানুষের সঙ্গে কাজ করি, আমি বলি, ‘আপনার জন্য কি ফিরে গিয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু করা সম্ভব?’ তখন তারা  আমার দিকে আতঙ্কিত চোখে তাকায় এবং বলে, ‘আমি এটা পারবো না। এর ফলে আমি আমার পরিবারের অসম্মান করবো, যারা আমাদের পেছনে এত পরিশ্রম করেচে এবং এত অর্থ খরচ করে সহায়তা করেছে ... আমাকে এখানে থাকতেই হবে’।”

সতিন্দর তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন,

“কর্মক্ষেত্রে আমার ম্যানেজারের সঙ্গেই শুধু আমি কথা বলতাম।”

“আমি কী রকম অনুভব করছি সেটা নিয়ে আমি আমার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতাম না। আমি যেহেতু দেশের বাইরে, অনেক দূরে রয়েছি, আমার সমস্যাগুলো শুনলে তারা আরও বেশি মানসিক চাপের মুখে পড়বে। আমার মায়ের নিজেরও নানা রকম দায়-দায়িত্ব ছিল।”

তিনি বলেন, আবেগের বশে তিনি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পেশাজীবিদের সহায়তা নিচ্ছেন। তিনি অন্যদেরকেও এজন্য উৎসাহিত করেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য মিজ চেন ভিসা সিস্টেম আরও সমবেদনাপূর্ণ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন,

“নিজেদের মাল-সামান ও ট্রমা নিয়ে বহু লোক রয়েছে। সরকার যদি তাদেরকে ঢালাওভাবে বিবেচনা করে এবং এসব আবেদনকারীকে যদি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা হিসেবে গণ্য করে এবং তাদেরকে যদি প্রকৃত সম্পর্কের নিরিখে না দেখে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্য রকম প্রমাণিত হচ্ছে, এর ফলে বহু দুর্দশার সৃষ্টি হবে।”

“অস্ট্রেলিয়া গঠিত হয়েছে অভিবাসীদের দ্বারা। তাই, তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় আসার পথে বাধার সৃষ্টি করা, আমার মতে, সত্যিই অন্যায়।”
মিজ সেলভির ক্লিনিকে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষাতেও এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট রকমের সহায়তা প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, অস্থায়ী ভিসাধারীদের সহায়তা করার জন্য আরও বেশি সার্ভিসের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, তারা প্রায় ক্ষেত্রেই মেডিকেয়ার কিংবা অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় না।

তিনি বলেন,

“আমি সমাজকর্মী এবং দোভাষী হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, ভিসা-আবেদনকারীদের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ করতে হবে।

“আমি যখন রোগীদেরকে জিজ্ঞাসা করি, ‘আপনার ভিসা-আবেদনের কী অবস্থা?’ তখন তারা আমার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকায় এবং বলে, ‘আমি জানি না’। মানুষকে তাদের পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্য প্রদান করাটা সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা। আর, এর ফলে হয়তো তাদের উদ্বেগও প্রশমিত হবে।”

সতিন্দরও এর সঙ্গে একমত হন:

“চার বছর অপেক্ষা করার পর ‘না’ শোনাটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। আপনি যদি কাউকে প্রত্যাখ্যান করতে চান, তাহলে প্রথম বছরেই ‘না’ বলে দিন। আমি আরও মনে করি, তারা এটাকে আরও সহজ করতে পারতো। কারও যদি অফশোর-এ চলে যেতে হয়, তাহলে অপেক্ষাকাল এক বছরে সীমিত করা উচিত। মানুষকে এত লম্বা সময় বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে বাধ্য না করেও তারা অন্যান্য বহু উপায়ে জানতে পারতো যে, এই সম্পর্কটি কি খাঁটি নাকি মেকি।”

গত বছর  তে প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে, যে-সব ব্যক্তির ভিসা স্ট্যাটাস অনিরাপদ, তাদের মাঝে নৈরাশ্যে পতিত হওয়ার এবং আত্মহত্যার প্রবণতা নিরাপদ ভিসাধারীদের চেয়ে বেশি।

মাইগ্রেশন সোশিওলজিস্ট শান্তি রবার্টসন বলেন, যারা অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন সিস্টেমের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এ রকম মোট অভিবাসীর সংখ্যা নিয়ে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। এছাড়া, এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শান্তি রবার্টসনের কাজ হলো ইমিগ্রেশন সিস্টেমের প্রভাবে এবং তাদের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কী রকম প্রভাব পড়ে তা নিরূপণ করা।

তিনি বলেন,

“অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা সিস্টেম যেভাবে কাজ করছে সে বিচারে বলা যায়, বিশ্বে এটি অত্যন্ত কঠোর স্কিলড মাইগ্রেশন সিস্টেম। মানুষ প্রায় সময়েই বোঝে না যে, অভিবাসনের জন্য সম্ভবত এটিই সবচেয়ে কঠিন স্থান।”

প্রতিবছর ২৫,০০০ এরও বেশি স্থায়ী অভিবাসনের আবেদন এদেশে প্রত্যাখ্যাত হয়।

“গত ১৫ থেকে ২০ বছরে সত্যিকারভাবে দুটি সমালোচনার যোগ্য প্রবণতা আমরা দেখেছি। একটি হলো এটি অনেক বেশি ব্যয়বহুলে পরিণত হচ্ছে। শুধুমাত্র ভিসা ফির জন্য নয়, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভাষার দক্ষতা পরীক্ষা, প্রাইভেট হেলথ ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি অতিরিক্ত বিষয়াদির জন্য খরচ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, যা সত্যিই বেড়ে গেছে, সেটা হলো অপেক্ষায় থাকার সময়কাল। এ ধরনের বহু ভিসার ক্ষেত্রে এটি মূলত অনির্দিষ্টকাল।”

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রবার্টসন এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় আসা মাত্রই বহু লোক আজকাল পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করছেন।

“মাইগ্রেশন সিস্টেম সম্পর্কে প্রায়ই এটা বলা হতো যে, ‘কেনার আগে যাচাই করে দেখ’। অর্থাৎ, স্থায়ী অভিবাসনের আগে অভিবাসীরা বসবাসের ও কাজের জন্য চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে, এটিও [ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্স এর জন্য] টেস্টিং পিরিয়ড হিসেবে কাজ করে। এটা দেখার জন্য যে, তারা অবদান রাখছে, তারা কাজ করার যোগ্য এবং তারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির মানদণ্ডের শর্তগুলো পূরণ করতে পারবেন।”

“এ ক্ষেত্রে সরকারের একটি বড় স্বার্থ হচ্ছে আর্থিক। কারণ, তারা এসব লোকের মাধ্যমে, যারা অস্ট্রেলিয়ার ভিসা চায়, তাদের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।”
ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্স এবং ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ এর কাছে এসবিএস নিউজ কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, কতিপয় ভিসা-আবেদনকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন সিস্টেমের প্রভাব সম্পর্কে তার অবহিত কিনা এবং এসব বন্ধ করার জন্য তারা কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কিনা সে সম্পর্কে।

ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ এক্ষেত্রে কোনো সাড়া দেয় নি।

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্স এর একজন মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে বলেন, ভিসা আবেদনগুলো “সাধারণত প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এগুলো যেভাবে গ্রহণ করা হয় সে ধারাবাহিকতায় ... প্রক্রিয়াকরণের সময়কাল নির্ভর করে আলাদাভাবে পারিপার্শ্বিকতার উপরে এবং আবেদনগুলোর জটিলতার উপরে। যেমন, পরিচিতি যাচাইকরণ, স্বাস্থ্য, চরিত্র এবং জাতীয় নিরাপত্তা।”

তারা বলেছে, “মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ বছরে ৩৯,৯১৮ টি পার্টনার অ্যান্ড প্রসপেক্টিভ ম্যারেজ ভিসা প্রদান করা হয়েছে।”

“প্রক্রিয়াকরণের প্রতিটি পর্যায়ে আবেদনকারীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ডিপার্টমেন্ট (এবং) ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে সমস্ত ভিসার প্রক্রিয়াকরণের সময়কাল পাওয়া যাবে। এগুলো প্রতি মাসে আপডেট করা হয়।”

পার্টনার ভিসার জন্য বর্তমানে ৭,৭১৫ ডলার ফিজ লাগে। শতকরা ৯০ ভাগ অফশোর আবেদন ১৮ মাসের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এবং শতকরা ৯০ ভাগ অনশোর আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হয় ২৫ মাসের মধ্যে।
Satinder and Sumit
Satinder and Sumit were reunited in Melbourne this week. Source: Supplied
আপিল করার পরে সতিন্দর এবং সুমিত ফেব্রুয়ারিতে সুখবর পান যে, সুমিতের ভিসা-আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সিদ্ধান্তটি পাল্টানো হয়েছে এবং তাদের দু’জনের মধ্যকার সম্পর্ককে খাঁটি হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে।

সতিন্দর বলেন,

“ইউনের কাছ থেকে আমি মিসড কল পাই।”

“আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যখন সে বলল, ‘কনগ্রাচুলেশন্স’। আমি খুব কাঁদছিলাম।”

করোনাভাইরাসের কারণে ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞার মাঝে সুমিত গত মাসে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসতে সমর্থ হন। এর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর গত বুধবার তিনি সতিন্দরের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন। সেই একই দিনে তাদের নিয়ে ডকুমেন্টারি এপিসোডটি সম্প্রচারিত হয়।

বেশ কয়েক বছর তারা পরস্পরের মাঝে ভিডিও কল এবং মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন। সতিন্দর বলেন, পুনরায় একত্রিত হওয়ার প্রথম দিনটিতে তারা লং ড্রাইভে যাবেন এবং তার কুকুর শাইনিকে নিয়ে সমুদ্র-সৈকতে যাবেন।

সুমিত বলেন,

“সতিন্দরের সঙ্গে পারিবারিক জীবন শুরু করতে আমি উদগ্রীব।”

“সে অনেক কষ্ট করেছে। আর আমি তার জন্য এটাই চাই যে, সে সুখী হোক। আমি এখন কঠোর পরিশ্রম করতে চাই তাকে প্রয়োজনীয় সবকিছু যোগান দেওয়ার জন্য।”

এসবিএস-এ Who Gets to Stay in Australia সম্প্রচার করা হয় বুধবার রাত ৮:৩০ এ। সতিন্দর ও সুমিতের গল্প দেখা যাবে -এ।

আপনার ভাষায় অস্ট্রেলিয়ায় সেটেলমেন্টের জন্য তথ্য পেতে দেখুন

মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পেতে যোগাযোগ করুন Lifeline crisis support এ 13 11 14 নম্বরে, Suicide Call Back Service এ 1300 659 467 নম্বরে এবং Kids Helpline এ 1800 55 1800 নম্বরে ( ৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের জন্য)। আরও তথ্যের জন্য দেখুন এবং 

বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পটভূমির লোকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং বিভিন্ন ভাষায় তথ্য প্রদান করে .

বিভিন্ন ভাষায় সহায়তা পেতে দেখুন

Follow SBS Bangla on .


Share
Published 2 July 2020 9:58pm
Updated 2 July 2020 10:03pm
By Kate Sullivan
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends