ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, পুজোর মহামিছিলের পর রেড রোডের মঞ্চ থেকে ফের এই বার্তাই দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, মানবতাই সব থেকে বড় শক্তি। তাই মানবতার সঙ্গে কোনো আপোস নয়।
মানবিকতার বার্তার পাশাপাশি দুর্গাপুজোর ফলে রাজ্যের কত মানুষ উপকৃত হন, তা তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে ৪০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুজো শুরু হয়ে গেল। খুশিতে থাকুন। মন ভাল রাখুন। মানবিক থাকুন। হৃদয়কে উদার করুন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
এসবের পাশাপাশি ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের কলকাতার পুজো দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি আরও উদ্বুদ্ধ করবে বাঙালিকে।
ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে একমাস আগেই পুজো শুরু হয়ে গেল কলকাতায়। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতির ধন্যবাদ মিছিলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন সেকথা। বলেছেন দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল। সমস্ত ধর্ম, বর্ণকে নিয়ে এগিয়ে চলবে বাংলা। জোড়াসাঁকো থেকে কলুটোলা, ডোরিনা ক্রসিং হয়ে রেড রোডে শেষ হয়েছে শোভাযাত্রা। আর মিছিলে আবেগ ছিল চোখে পড়ার মত। মিছিলের মধ্যে কোথাও বাউল গান, ছৌনাচ, কোথাও ধামসা মাদলের তালে আদিবাসী নৃত্য বাদ ছিল না কিছুই। রাস্তার পাশে লাগানো লাউডস্পিকার থেকে ভেসে আসা পুজোর গানে মিছিল ছিল পুরোদস্তুর উৎসবমুখর কলকাতা।
মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার কথা। ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে যেমন রাস্তায় হেঁটেছেন সেলিব্রিটি থেকে বিশিষ্টজনেরা, ঠিক তেমনই রেড রোডের মূল মঞ্চে নাচের মাধ্যমে উৎসবের আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন জুন মালিয়া, মিমি চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা ব্যানার্জী, শুভশ্রী গাঙ্গুলির মত ফিল্মস্টারেরা।
বৃহস্পতিবার জোঁড়াসাকো থেকে শুরু হওয়া মিছিল এতটাই বড় ছিল যে, অগ্রভাগ কলকাতায় রেড রোডে পৌঁছে গেলেও মিছিলের শেষপ্রান্ত তখনও জোঁড়াসাকোতেই পড়ে ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে দলমতনির্বিশেষে এই পদযাত্রার যোগ দিয়েছিলেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষজন। নেতা-মন্ত্রী-ছাত্রছাত্রী-খেলোয়াড় সামিল হয়েছিলেন সবাই। শোভাযাত্রার শুরুতে প্রবল বৃষ্টি নামলেও ছেদ পড়েনি শোভাযাত্রায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তার দুধারে মানুষজনের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। পদযাত্রার শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ঝরঝর বহিছে বারিধারা। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিনে বর্ষণ হয়। কখনও কার্তিকেও। তবে গরম থেকে বৃষ্টি ভাল সেকথাও বলতে শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
Performers wait in a queue during the celebrations after the Durga Puja was inscribed on the UNESCO Representative List of the Intangible Cultural Heritage of Humanity. UNESCO (The United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization) in 2021 included Durga puja in the Representative list of the intangible cultural heritage of Humanity. Various Puja committees and organizers joined hands to show their gratitude towards UNESCO during this rally organized by the West Bengal Government. Source: AAP / Avishek Das/SOPA Images/Sipa USA
তারপরই, দুর্গাপুজোয় প্যান্ডেল হপিং, কর্নিভালে ইউনেস্কোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলায় রাজনৈতিকভাবে পরিচিত দিদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউনেস্কোর প্রতিনিধি টিমোথি কার্টিস, এরিক ফল্টকে উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতে তুলে দিয়েছেন ডোকরার দুর্গামূর্তি। আর ওই মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দু’জনের নিজের প্রিয় শহরের এত বড় উৎসবের তাৎপর্য, মাধুর্য, এত মানুষের মেলবন্ধন সবকিছুই সুন্দরভাবে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেছেন।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, পুজোর মহামিছিলের পর রেড রোডের মঞ্চ থেকে ফের এই বার্তাই দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, মানবতাই সব থেকে বড় শক্তি। তাই মানবতার সঙ্গে কোনো আপোস নয়। Credit: Partha Mukhopadhyay
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুজোর সময় কলকাতা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহরে পরিণত হয়ে ওঠে তা বুঝতে পুজোর সময় এই শহরে থাকতে হবে। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের একথাই বলেছেন মমতা-সৌরভ।
এর মধ্যেই, ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে অধ্যাপিকা তপতী গুহঠাকুরতাকে সংবর্ধনা দিয়ে যাবতীয় বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির অন্যতম দাবিদার অধ্যাপিকা তপতী। আর তাঁকেই কৃতিত্ব না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের এবং তাঁর সরকারের গুণগান করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন চর্চা শুরু হতেই রেড রোডের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তপতী গুহঠাকুরতাকে সংবর্ধনা দিয়ে কার্যত সেই বিতর্কে জল ঢেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৫ সালে প্রফেসর তপতী গুহঠাকুরতা একটা বইপ্রকাশ করেছিলেন, যার নাম, ইন দ্য নেম অফ গডেস: দ্য দুর্গাপূজাস অফ কনটেমপোরারি কলকাতা। বইটি সম্পূর্ণ গবেষণাভিত্তিক একটা কাজ। ২০০২ থেকে তিনি তাঁর সহকর্মী এবং বন্ধু অঞ্জন ঘোষের সঙ্গে জয়েন্ট প্রজেক্ট হিসেবে কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ২০১৫ তে এই প্রজেক্ট শেষ হয়। তাঁরই অক্লান্ত পরিশ্রম, সাধনা, গবেষণায় দুর্গাপুজোকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি’-এর তকমা দেওয়া হয়।
এরপরই, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এই তপতীর হাত ধরেই মিলেছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। যদিও যাকে নিয়ে বিতর্ক সেই প্রফেসর তপতী অবশ্য নিজে জানিয়েছেন, তাঁর একার প্রচেষ্টা নয়; দুর্গাপুজোর সঙ্গে যেসব মানুষ, ক্লাব এবং সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সরকার সবার প্রচেষ্টাতেই এই কৃতিত্ব পেয়েছে বাংলা।
READ MORE
ভারতীয় সংবাদ: ২৯ আগস্ট ২০২২
অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের মা দুর্গা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিযোগ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্য, যে দুর্গাপুজোর মডেল ছিল স্বনির্ভর, স্বতন্ত্র, তাকেই রাজনীতি-প্রশাসনিক মিশ্রণ ঘটিয়ে একটা টানেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আরএসএস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাই করছেন। আরএসএস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্গা বলেছিল। তারই রোল প্লে করছেন মমতা।
শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি, টাকার পাহাড় উদ্ধার, দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাস আগে পুজো শুরু করে দিলেন বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। একই কথা বলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনিও বলেছেন, বাংলার দুর্নীতি এবং স্ক্যান্ডাল থেকে নজর ঘোরাতে এই পদযাত্রা। বুদ্ধিমান বাঙালিরা সব বোঝেন।