রাশিয়ার হামলার মধ্যে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় বায়ুসেনা বেশ কয়েকটি সি-১৭ বিমান মোতায়েন করতে পারে। বায়ুসেনা বিমানগুলির মাধ্যমে ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা সরবরাহ করতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেন থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে ভারতে ফিরেছে অপারেশন গঙ্গা বিমান। মঙ্গলবার সকালে রোমানিয়ার বুখারেস্ট থেকে মুম্বই বিমানবন্দরে পৌঁছান ১৮২ জন ভারতীয়। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নারায়ণ রানে।
এখনও ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন অনেক ভারতীয় পড়ুয়া। এই অবস্থায় আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের ফেরাতে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশে যাচ্ছেন চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যাবেন রোমানিয়া। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু যাবেন স্লোভাকিয়ায়। হাঙ্গেরি যাবেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিং পোল্যান্ডে যাবেন।
বলা হচ্ছে, শুধু ভারতীয় নয়, ইউক্রেন সীমান্তে আটকে থাকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সদস্যদেরও সাহায্য করবে ভারত। প্রয়োজনে তাদেরও ফিরিয়ে আনবে। সোমবার বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে ওষুধ-সহ একাধিক সাহায্য পাঠানো হবে সে দেশে। সোমবার এমনটা জানিয়েছেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী।
আটকে থাকা নাগরিকদের উদ্ধার ও নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় মঙ্গলবারই প্রথম দফার সামগ্রী পাঠানো হবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন সীমান্তে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, গোটা বিশ্ব একটা পরিবার। ইউক্রেন সীমান্তে আটকে থাকা প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের সাহায্য করবে ভারত। চাইলে তাদের দেশেও ফিরিয়ে আনা হবে।
জানা গেছে, ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে সহায়তার জন্য রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড হেগের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে নয়া দিল্লির পাশে থাকার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আগামী দিনেও স্লোভাকিয়া এভাবেই ভারতীয়দের উদ্ধারে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড হেগের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি এবং যুদ্ধে তিনি যে ব্যথিত তাও জানিয়ে দিয়েছেন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে হবে বলেও মতপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্লোভাকিয়ায় উদ্ধারকাজ চালাতে কিরেন রিজিজুকে বিশেষ দূত হিসেবে পাঠানো হয়েছে। সে কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর মধ্যে মঙ্গলবার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, ইউক্রেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটের মধ্যে ভারতের অবস্থান কী হবে সেই বিষয়েও দুজনের মধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
এর আগে, সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযানে প্রতিবেশী দেশগুলিতে যাবেন চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এই বিষয়েও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরাতে একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যে অপারেশন গঙ্গার মাধ্যমে ন’টি বিমানে ইউক্রেন থেকে ১ হাজার ৯২২ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার অপারেশন গঙ্গা নামে ইউক্রেন থেকে ভারতীয়, পড়ুয়াদের উদ্ধার অভিযানের প্রচার শুরু করে দিলেও, ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের অসংখ্য ভিডিয়ো-বার্তায় স্পষ্ট, তাঁরা কতটা অসহায়,অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছেন। এমনই একজন, ইউক্রেনের রাজধানী কিভ-এ বাঙ্কারে আটকে থাকা লখনউয়ের গরিমা মিশ্র। ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় ছাত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের একটি দল গাড়িতে কিভ থেকে সীমান্তের দিকে রওনা দিয়েছিলেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী ওই গাড়ি আটকে গুলি চালিয়েছে এবং তারপর মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে তার বক্তব্য। কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কেউ জানে না। ওই দলের ছাত্রদেরও কোনও খোঁজ নেই। তাদের আরও কিছু বন্ধুবান্ধব ইউক্রেন-রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছলেও সেখানে তাদের মারধর করা হয়েছে।
আর এক ছাত্রীও ভিডিয়ো-বার্তায় অভিযোগ জানিয়েছেন, তারা কোনওভাবেই ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ফোন করলেও ফোন কেটে দেওয়া হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ-এ মেসেজ করলেও উত্তর মিলছে না। ওই ছাত্রীর বক্তব্য, বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে চলে যেতে। কিন্তু, সেখান থেকে সীমান্ত ৮০০ কিলোমিটার।
রোমানিয়ার সীমান্তে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের মারধর করা হচ্ছে। অন্য দেশগুলি নিজেদের পড়ুয়াদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারত সরকার কোনও সাহায্য করছে না। ভারতীয় পড়ুয়াদের অভিযোগ, তারা যেখানে আটকে রয়েছেন, সেখানে রাতে এসে হামলা হচ্ছে। গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা হচ্ছে। কী হতে চলেছে, কেউই কিছু বুঝতে পারছেন না। বেশ কিছু পড়ুয়া ভিডিয়ো টুইট করে জানিয়েছেন, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ইউক্রেনের সীমান্তে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে।
এই অবস্থায়, ভারতীয়দের অবিলম্বে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।সরকারের পক্ষ থেকে ট্রেন বা যে কোনও পরিবহনে ইউক্রেনের রাজধানী ছাড়ার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের জন্য জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। তবে ফেরার পথে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন বলেও উল্লেখ করেছে ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পড়ুয়া-সহ সমস্ত ভারতীয়দের অবিলম্বে কিভ ছাড়তে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ভারতীয়দের কিভ ছাড়তে বলা হয়েছে। স্টেশনে যে পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, তাতে অযথা উদ্বিগ্ন না হওয়ার কথাই বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। আটকে থাকা পড়ুয়াদের বলা হয়েছে, সঙ্গে পাসপোর্ট, টাকা ও পোশাক রাখতে। ট্রেন দেরিতে চলতে পারে বা বাতিল হতে পারে, এমন সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে দূতাবাসের তরফ থেকে। দীর্ঘক্ষণ লাইনেও দাঁড়িয়ে থাকতে হতে পারে।
জানা গিয়েছে, ভারতীয় পড়ুয়াদের ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ, হাঙ্গারি, রোমানিয়া, পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের দিল্লি উড়িয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ বন্ধ করে আলোচনার পথে ফেরার বার্তা দিয়েছে ভারত। ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ সভার ১১তম জরুরি বিশেষ অধিবেশনে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেছেন, ভারতের ধারাবাহিক অবস্থান, বিবাদের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। তারা বিশ্বাস করেন, কূটনৈতিক পথে ফেরা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
ইউক্রেনে এখনও অনেক ভারতীয় আটকে আছেন। তাদের অবিলম্বে এবং জরুরি ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সবরকম চেষ্টা করছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সঙ্কটের অবিলম্বে সমাধান হওয়া উচিত।
একইসঙ্গে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া তাদের উদ্ধারের সুযোগ দেওয়ার জন্য ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত টিএস তিরুমূর্তি। এই বিষয়ে ভারত প্রতিবেশী ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্যও করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বেশ কয়েকবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবের ভোটাভুটি থেকে বিরত থেকেছে ভারত।
আপডেট: ইউক্রেনে যুদ্ধে নিহত এক ভারতীয় ছাত্র
ইউক্রেনের খারকিভে গোলাগুলিতে একজন ভারতীয় ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। মঙ্গলবার এই খবর নিশ্চিত করেছে বিদেশ মন্ত্রক। খারকিভে বোমা বিস্ফোরণের ফলে এই ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। ওই পড়ুয়া উত্তর কর্নাটকের বাসিন্দা বলেও জানা গিয়েছে। ওই ছাত্রের বন্ধুদের উদ্ধৃতি অনুসারে, তাঁরা পশ্চিম সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য ইউক্রেনীয় শহর লভিভের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: