এ বছরের জুলাই মাসে ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় রোহিঙ্গা সংকটের ওপর সাদা-কালো ছবির সংকলনের নতুন একটি বই প্রকাশ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বইটি ইতোমধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে প্রকাশিত দু’টি ছবি নিয়েই আপত্তি। সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের এই ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়েছে। খবর ।
বিতর্কিত দু’টি ছবির প্রথমটিতে মিয়ানমার দাবি করেছিল, ‘বাঙালিরা’ (অর্থাৎ রোহিঙ্গারা)‘স্থানীয় নৃগোষ্ঠী’ অর্থাৎ (রাখাইন বৌদ্ধদেরকে) নিধন করেছে। এটি আসলে ১৯৭১ সালে আসলে এ ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার। পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি হত্যার পর ছবিটি তোলা হয়।১৯৪০ সালে মিয়ানমারে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ওপর একটি অধ্যায়ে এই ছবিটি স্থান পায়। ওই অধ্যায়ে বলা হয়, ‘ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাঙালি কর্তৃক বৌদ্ধরা হত্যার শিকার হয়।’ বইতে উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী বুঝাতে তাদের ক্ষেত্রে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
The women and children are seemingly very tired to flee from 150 km away which is Sittwe, Rakhain State, Myanmar. Source: CrowdSpark.com
দ্বিতীয় ছবিটিত আফ্রিকা মহাদেশের দেশ তাঞ্জানিয়ায় তোলা। এই ছবিটিকেও রাখাইনে বৌদ্ধ নিপীড়নের ছবি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি উপস্থাপন করে তারা দাবি করে, বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। এই ছবিটি মূলত রুয়ান্ডার হুতু সম্প্রদায়ের, যারা রুয়ান্ডা থেকে পালিয়ে তাঞ্জানিয়া যেতে চেয়ে সেই দেশের সেনাবাহিনীর বাধা পেয়ে কেনিয়া বা মালাবি হয়ে ফের রুয়ান্ডা ফেরত যাচ্ছে, তাদের। কিন্তু, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বইয়ে ছবিটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশকালে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।এদিকে, মিয়ানমারে দণ্ডিত সাংবাদিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
Reuters journalist Wa Lone is escorted out of the Insein township court in Yangon, Myanmar. Source: Lynn Bo Bo / EPA
জাতিসংঘের নবনিযুক্ত মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট মিয়ানমারে দণ্ডপ্রাপ্ত রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার
রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ওকে (২৮) কারাদণ্ড দেন মিয়ানমারের একটি আদালত। গতকাল রাজধানীর ইয়াঙ্গুনের দক্ষিণ জেলা জজ ইয়ে লইন এ ঘোষণা করেন। বিচারক বলেন, সরকারি গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করেছেন আসামিরা।
গত বছরের ২৫ আগস্ট নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘ একে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। সারা বিশ্ব যখন মিয়ানমারের এই ‘হত্যাযজ্ঞের’ বিরুদ্ধে সরব, তখনই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো ও গ্রেপ্তার হন। তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে মামলা হয়। তার পর থেকে তাঁরা কারাগারেই ছিলেন। যদিও দুই সাংবাদিক তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।