বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ভারতের মানুষজনের জন্যে শুভেচ্ছা নিয়ে একদিনের ঝটিকা সফরে কলকাতা ঘুরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর, ক্রিকেটের মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর যে বৈঠকের দিকে উপমহাদেশের রাজনীতিবিদরা তাকিয়ে ছিলেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয় নি। এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের বৈঠক, তারপরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠককে সৌজন্য বৈঠক বলে বর্ণনা করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই বৈঠক সম্পূর্ণ সৌজন্যের। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো। আমাদের সম্পর্কও খুব ভালো। অনেকক্ষণ আলোচনা হলো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আবার রাজ্যে আসতে বলেছি। আমাদের সম্পর্ক যেন সব সময় ভালো থাকে সেটাই চাই। একেবারে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে।
আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি মানুষকে এই বাংলা আশ্রয় দিয়েছিল তা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করে বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো সময় চলছে। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট, সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ক্রিকেটে আমরা একটু খারাপ করছি, কিন্তু আশাবাদী, খুব ভালো হয়ে যাবে শিঘ্রী। কারণ, তার আগেই কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দেখে এসেছেন ১০৬ রানে বাংলাদেশের অল আউট হয়ে যাওয়া।
এখন ঘটনা হলো, তিস্তা চুক্তি-সহ ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক যে সব বিষয় এখনও অমীমাংসিত, তার অনেকগুলিই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত। তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে কথা বলুন, এমনটাই চেয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেমনটাই চেয়েছেন। তাই, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে একসঙ্গে থাকার কথা থাকলেও পরে সরে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগে কথা থাকলেও শনিবার গোলাপি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে আসেন নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বাংলাদেশের একটা সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাজ বেঙ্গল হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাতে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি তোলেন নি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে নিয়ে দিল্লির নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে ঢাকা। এ বিষয়ে সহমত তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়েও মোদী সরকার আশ্বাস দিয়েছে। তিস্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর যে ভিন্নমত রয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে, বহু বার জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে কোনও জলবণ্টন চুক্তি তিনি চান না।এখন ঘটনা হলো, কূটনৈতিক সূত্রের খবর, তিস্তা এবং পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত বেশ কয়েকটি নদীর জল প্রবাহ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বলেছেন, শুকনো মৌসুমে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের নদীগুলোতে জল না থাকার কথাও। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কিছু প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িগুলি এবং কলকাতায় স্বাধীন বাংলা সরকারের সদর দফতর বলে চিহ্নিত বাড়ির সংরক্ষণ।
Prime Minister Sheikh Hasina and Mamata Banerjee, Chief Minister of West Bengal state in Kolkata, India, Friday, Nov. 22, 2019. Source: AP
আগামী বছর শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ। তাঁর ছাত্রজীবন যেমন এই কলকাতায় কেটেছে, প্রবাসী সরকারের রাজধানীও ছিল কলকাতার থিয়েটার রোডের একটি বাড়িতে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চান, বাবার স্মারক ভবনগুলির সঙ্গে ওই বাড়িটিও সংরক্ষণ করে প্রদর্শনশালা করা হোক। এ বিষয়ে একেবারে মৌখিক ভাবে মমতার কাছে হাসিনা কিছু প্রস্তাব দেওয়া মাত্র তাতে সম্মতি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভার তরফে যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির সমাধান করা হবে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতার মেয়র, ফিরহাদ হাকিমকে। মমতা নিজে বিষয়গুলো নজরে রাখবেন বলে, তাঁর প্রিয় আপা, শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন।
মমতার জন্য তাঁর প্রিয় হাল্কা রঙের জামদানি শাড়ি ও মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে পাল্টা বাংলার শাড়ি উপহার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।