করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই 'অতি-ডানপন্থিদের বিস্তার' ঘটে চলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে

অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য প্রচার বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে সহজেই প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে ব্যবহারকারীরা, এবং আড়াল থেকে আপত্তিকর ম্যাটেরিয়াল পোস্ট করছে।

The spread of hate speech online has become more accessible for some users

The spread of hate speech online has become more accessible for some users Source: Getty

গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো 

  • পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে চরমপন্থিদের তৎপরতা অন্তত ৪০ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে
  • ক্রাইস্ট চার্চ মসজিদে হামলার পর অনলাইন প্লাটফর্ম গ্যাবে অস্ট্রেলিয়ান ইউজারদের সংখ্যা বিরাট সংখ্যায় বেড়েছে
  • যখন কোন ইউজারের একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন তারা অন্য কোন বিকল্প প্লাটফর্মে যায় এবং তাদের কন্টেন্টগুলো আরো আগ্রাসী হয়ে উঠে
আলফ্রেড ইনস্টিটিউটের গবেষণা সহযোগী লিডিয়া খলিল উদ্বিগ্ন যে ডান-পন্থি গোষ্ঠীগুলো সারাবিশ্বে সংযোগ স্থাপন করে তৎপরতা চালাচ্ছে। 

তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত যে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে চরমপন্থিদের তৎপরতা অন্তত ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে ()। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের আমলে এ ধরণের বেশ কিছু গোষ্ঠী শক্তি বৃদ্ধি করেছে।  

বর্তমানে বিকল্প সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গ্যাব-এর ৪০টি অস্ট্রেলিয়ান একাউন্ট থেকে দেখা যায় যে ২০২০ সালের মহামারীর লকডাউনের সময়ে আপত্তিকর পোস্ট ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
গ্যাব (GAB) হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্লাটফর্ম যারা বলে যে তারা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এতে বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় চার মিলিয়নেরও বেশি ইউজার রয়েছে যারা তাদের মত প্রকাশ করে চলেছে।  

এই গবেষণায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে তার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা, কোভিড -১৯ নিয়ে ভুল তথ্য, এবং বর্ণ নিয়ে ডান-পন্থিদের  আলোচনা।  

এই গবেষণার সাথে যুক্ত ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর সাস্টেইনেবল ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড লিভেবল সিটিজ।  

ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মারিও পুইকো বলেন, তিনি উদ্বিগ্ন কারণ অনলাইনে ঘৃণাবিদ্বেষ বাড়ছে। 

তিনি বলেন, "আমার মনে হয় গ্যাব প্লাটফর্মে ১১-১২ শতাংশ পোস্ট সরাসরি এন্টি-সেমিটিক বা ইহুদি বিদ্বেষী যেগুলো খুবই ঘৃণাপূর্ণ। এগুলো আগে আমরা দেখিনি, এগুলো বেড়েছে শ্বেত আধিপত্যবাদী বা ফ্যাসিস্ট বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। অবশ্য গ্যাবের সবাই এভাবে কথা বলে না।"
A woman pauses as she lays flowers on a wall at the Botanical Gardens in central Christchurch (File Photo).
A woman pauses as she lays flowers on a wall at the Botanical Gardens in central Christchurch (File Photo). Source: AP
গবেষণায় তিনটি সক্রিয় একাউন্ট ফোকাস করেছে যেখানে গবেষণার সময়ে ৭৫ শতাংশ ম্যাটেরিয়াল বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  

এই পোস্টগুলোর বৃদ্ধি পেয়েছে কাকতালীয়ভাবে মেলবোর্নের কোরোনাভাইরাস লকডাউনের সময় এবং বর্ণসমতা আন্দোলনের সময়। 

গবেষণায় কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারকে শেতাঙ্গ-বিরোধী বর্ণবাদ বলে উল্লেখ করা হয় এবং শ্বেত বিচ্ছিন্নতাবাদেরও ডাক দেয়া হয়।  

এছাড়া ক্রাইস্ট চার্চ মসজিদে হামলার পর গ্যাবে অস্ট্রেলিয়ান ইউজারদের সংখ্যা বিরাট সংখ্যায় বেড়েছে।  

গত মার্চ ২০১৯ সালে ১১,০০০ এই ইউজারদের একটি উপদল তৈরী হয়, এখন ২০২১ সালের মার্চে এসে এটির সংখ্যা এখন ৪৫,০০০ হয়েছে।  

ডঃ পুইকো বলেন, যখন কোন ইউজারের একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন তারা অন্য কোন বিকল্প প্লাটফর্মে যায় এবং তাদের কন্টেন্টগুলো আরো আগ্রাসী হয়ে উঠে।


 তিনি বলেন, "কথা হচ্ছে এটা একটি বিকল্প-প্রান্তিক স্থান যেখানে লোকজন ভাবে তারা একটি কমিউনিটি, সমমনাদের দল। এখন ওই সমমনা ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব মতাদর্শ ক্ষতিকরভাবে অস্ট্রেলিয়ার গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর চাপাতে চায়, বিপদটা এখানেই।" 

সাম্প্রতিক সময়ে এএসআইও (Australian Security Intelligence Organisation) ডিরেক্টর জেনারেল মাইক বার্জেস বলেন, সিনেট খতিয়ে দেখেছে অস্ট্রেলিয়ার ভেতরে বর্ণবাদী এবং জাতীয়তাবাদী চরমপন্থি মতাদর্শের কাউন্টার টেরোরিজমের কেইসের সংখ্যাই ৫০ শতাংশ। 

তিনি একই সাথে ধর্মীয় চরমপন্থিরাও গুরুতর সন্ত্রাসবাদী হুমকি বলে সতর্ক করে দেন।  

ডঃ পুইকো উদ্বিগ্ন যে কিছু অনলাইন কনটেন্ট মুসলিম কমিউনিটির জন্য হৃদয়বিদারক, যেগুলো নিউজিল্যান্ডের মসজিদ আক্রমণের সময় লক্ষ্য করে করা হয়েছিল।
আলফ্রেড ডেকিন ইনস্টিটিউটের লিডিয়া খলিল বলেন, কনটেন্ট এতো বেশি যে কেউ যদি রিপোর্ট না করে তবে তা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। 

তিনি বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপত্তিকর মন্তব্য, কোন গোষ্ঠীকে অবমাননার বিরুদ্ধে টার্মস অফ সার্ভিস বা নীতি আছে। কিন্তু এগুলো এটি বড় আপনারা জানেন যে, কোন কোন প্ল্যাটফর্মের দুই বিলিয়নের মত ইউজার আছে, তাই কন্টেন্টগুলো মনিটর এবং পুলিশিং করা খুব কঠিন। 

এসবিএস নিউজ গ্যাবের কাছে প্রশ্ন করেছিল চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে তারা কিভাবে অনলাইনের ভয়ানক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে?  

গ্যাবকে আরো প্রশ্ন করা হয়েছে তারা বর্ণবাদ-বিরোধী কি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিভাবে ভুল তথ্য মোকাবেলা করে?  

গ্যাবের চীফ এক্সেকিউটিভ অ্যান্ড্রু টোরবা এসবিএস নিউজকে বলেন, "যতক্ষণ না কেউ আইন ভঙ্গ করছে বা সহিংসতার হুমকি দিচ্ছে ততক্ষন আমরা তাকে আমাদের প্ল্যাটফর্মে মুক্তভাবে বলতে দিচ্ছি। আপনি যদি জানতে চান চরমপন্থা কিভাবে তৈরী হচ্ছে, তবে আয়নার দিকে তাকান।" 

মিঃ টোরবা বলেন, মানুষ যখন তাদের বিশ্বাস, পরিবার এবং দেশকে বাঁচাতে চায় তখন তাদের চরমপন্থার দিকে নিয়ে যেতে এবং তাদেরকে 'চরমপন্থি' বলে দাগিয়ে দিতে গণমাধ্যমগুলোকে দায়ী করেন।  

ডঃ পুইকো বলেন, আরো বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, গ্যাব প্ল্যাটফর্মে "গুরুতর সহিংস কথাবার্তা হয়" এবং "কোন একটি বক্তব্য এক দেশের জন্য উস্কানিমূলক ফৌজদারি বিষয় হলেও অন্য দেশের জন্য তা নয়।"  

এসবিএস বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজটি ভিজিট করুন।

আরো দেখুন:




Share
Published 9 June 2021 5:22pm
Updated 9 June 2021 5:39pm
By Stephanie Corsetti
Presented by Shahan Alam

Share this with family and friends