পিটার ডাটনের ঘটনায় ও পেয়ারের বিষয়টি গুরুত্ব লাভ করেছে

অস্ট্রেলিয়ায় ও পেয়ার হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই ওয়ার্ক ভিসা লাগবে।টুরিস্ট বা ভিজিটর ভিসায় আগতদের ও পেয়ার হিসেবে কাজের কোনো অনুমতি নেই। অস্ট্রেলিয়ায় আলাদাভাবে কোনো ও পেয়ার ভিসা নেই।এজন্য ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা (সাবক্লাস ৪১৭) কিংবা ওয়ার্ক অ্যান্ড হলিডে ভিসা (সাবক্লাস ৪৬২) লাগবে।

Minister for Home Affairs Peter Dutton

Peter Dutton told parliament he did nothing wrong when he intervened to help two European au pairs. Source: AAP

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় ও পেয়ার ইস্যুতে হোম অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার পিটার ডাটন।

২০১৫ সালে দু’জন ও পেয়ারকে ডিপোর্টেশন থেকে রক্ষা করায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।

এটি পরিষ্কার যে, সেই দুই নারী অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন সঠিক ও যথাযথ কর্মী-ভিসা ছাড়াই। তা সত্ত্বেও, মিস্টার ডাটন ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করেন এবং তাদেরকে ভিজিটর ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সুযোগ দেন।

ফরাসী ও পেয়ার আলেকজান্দ্রা ডিউয়েলকে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন থেকে ছেড়ে দেন মিস্টার ডাটন। এজন্য তার সঙ্গে লবি করেছিলেন । ইটালিয়ান ও পেয়ার মিচেলা মার্কিজিওকেও ভিসা দেন পিটার ডাটন। অভিযোগ রয়েছে যে, কুইন্সল্যান্ড পুলিসের সাবেক এক সহকর্মীর জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করছিল মিচেলা মার্কিজিও।

এক বিবৃতিতে পিটার ডাটন বলেন, তিনি আইন অনুসারে প্রতিটি কেসের মেরিট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
French au pair Alexandra Deuwel - Mr Dutton intervened to help the woman stay in Australia.
French au pair Alexandra Deuwel - Mr Dutton intervened to help the woman stay in Australia. Source: SBS News
ও পেয়ার বলতে ভিন্ন দেশ থেকে আগত গৃহস্থালী কাজে সহায়তাকারীকে বুঝায়। তার কাজ হচ্ছে ঘরের কাজে এবং শিশু দেখাশোনায় সাহায্য করা।

ও পেয়ার ফরাসী শব্দ। ইংরেজিতে এর অর্থ হলো ‘অন পার’ কিংবা ‘ইকুয়াল টু’। ও পেয়ার হোস্ট পরিবারের সঙ্গে বাস করে এবং কাজের বিনিময়ে ভাতাও পায়।

ভাতার পরিমাণ কতোটুকু হবে, সেজন্য হোস্ট পরিবারগুলোকে বলা হয় অস্ট্রেলিয়ার নূন্যতম মজুরি, অর্থাৎ, ঘণ্টায় ১৮.২৯ ডলার করে প্রদান করতে। এত্থেকে অবশ্য থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দেওয়া হয়ে থাকে।
Au pairs live with an host family.
Au pairs live with an host family. Source: Aussie Au Pair Services
কালচারাল ও পেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ার তথ্য মতে, ও পেয়াররা সাধারণত সপ্তাহে ২০ থেকে ৪০ ঘণ্টা শিশু পরিচর্যার কাজ করে থাকে।

ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজি সিডনির ল ফ্যাকাল্টির লেকচারার লরি বার্গ ফেয়ারফ্যাক্সকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় দশ হাজার ও পেয়ার রয়েছে।

সাধারণত কমবয়সী নারীদেরকেই টার্গেট করে থাকে অস্ট্রেলিয়ান ও পেয়ার এজেন্সিগুলো।

একটি এজেন্সির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,

“আপনি আপনার বন্ধুদের ঈর্ষার কারণ হবেন। যে-সব স্থানে আপনি যাবেন এবং যে-সব লোকের সঙ্গে আপনি মিশবেন সে সম্পর্কে তারা পড়বে এবং আপনাকে তারা অনলাইনে অনুসরণ করবে। আপনি স্বপ্নের অস্ট্রেলিয়ায় বাস করবেন।”

আরেকটি এজেন্সির ওয়েবসাইটে জানতে চাওয়া হয়েছে,

“আপনি কি একটি বিদেশী সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যক্তিগত, নিরাপদ এবং উপভোগ্য অভিজ্ঞতা লাভ করতে চান? জীবনব্যাপী বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন এবং একইসঙ্গে আপনার ইংরেজির উন্নয়ন ঘটান এবং চমৎকার একটি হোস্ট পরিবারের সহায়তায় আপনার জীবন-বৃত্তান্তের উন্নয়ন ঘটান।”

কোনো কোনো ওয়েবসাইটে হোস্ট পরিবারের এবং করণীয় কাজের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

হোস্ট পরিবারের একজন বলেন,

“আমরা চাই ও পেয়ার আমাদের বাচ্চাদেরকে স্কুলের জন্য তৈরি করে দিক, তাদের নাস্তা তৈরিতে সাহায্য করুক, নাস্তার পর টেবিল পরিষ্কার করুক, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাক, তাদের সঙ্গে প্লে-গ্রুপে কিংবা পেইন্ট-এ অংশ নিক এবং খেলার সময়ে কিংবা লাইব্রেরিতে গল্প বলার সময়ে তাদের সঙ্গে থাকুক, তাদের জন্য দুপুরের খাবার তৈরি করুক, তাদেরকে গোসল করাক এবং তাদেরকে গল্প শোনাক।”
A local au pair website.
A local au pair website. Source: Smart Au Pairs
ও পেয়ার এজেন্সিগুলো হোস্ট পরিবার এবং আন্তর্জাতিক ভিজিটর উভয়ের জন্যই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা জোরে-শোরে প্রচার করে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি স্মার্ট ও প্যারিস-এর চিফ একজিকিউটিভ নিকোল কফকিন এসবিএস নিউজকে বলেন,

“এর মাধ্যমে সীমিত কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কম-বয়সী ব্যক্তিরা নিরাপদ ও আন্তরিক একটি পরিবারের সঙ্গে বসবাসের এবং একইসঙ্গে কাজের সুযোগ লাভ করে।”

“কাজে নিয়োগের সময়ে অনেকেই তাদের ইংরেজির মানোন্নয়ন করতে আগ্রহী থাকে। আর, কয়েক মাসের মধ্যেই তারা অবিরল ইংরেজি বলতে পারে।”

অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি এআইএফএস এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়েন্ডি আইলওয়ার্ড বলেন,

“কম-বয়সী বহু ব্যক্তি হোস্টেলে থাকার পরিবর্তে কোনো পরিবারের সঙ্গে থেকে নতুন একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। তাই তারা অস্ট্রেলিয়ান কোনো পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে চায় এবং অস্ট্রেলিয়ান জীবনধারা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়।”
Agencies usually target young women from overseas.
Agencies usually target young women from overseas. Source: Smart Au Pairs
ও পেয়ার প্লেসমেন্ট অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং কোনো এজেন্সির মাধ্যমে, উভয়ভাবেই করা যায়। প্লেসমেন্টের আগে কোনো কোনো এজেন্সি ও পেয়ার এবং হোস্ট পরিবার উভয়কেই যাচাই করে দেখে। তবে, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে।

কোনো কোনো এজেন্সি হোস্ট পরিবারের পুলিস ক্লিয়ারেন্স চেক করে থাকে এবং ও পেয়ারের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা চেক করে থাকে। তবে এক্ষেত্রেও এজেন্সি ভেদে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।

ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজি সিডনির মিজ বার্গ ২০১৭ সালে এ বিষয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ও পেয়ার সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ না থাকার মতোই।
Au pairs generally care for a family's children for 20-40 hours per week.
Au pairs generally care for a family's children for 20-40 hours per week. Source: Getty

ও পেয়ারদের জন্য কোন ভিসার প্রয়োজন?

অস্ট্রেলিয়ায় ও পেয়ার হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই ওয়ার্ক ভিসা লাগবে।

মাইগ্রেশন ডাউন-আন্ডার এর একজন সিনিয়র রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট জুলি উইলিয়ামস এসবিএস নিউজকে বলেন,

“টুরিস্ট বা ভিজিটর ভিসায় আগতদের ও পেয়ার হিসেবে কাজের কোনো অনুমতি নেই।”

অস্ট্রেলিয়ায় আলাদাভাবে কোনো ও পেয়ার ভিসা নেই। এজন্য ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা (সাবক্লাস ৪১৭) কিংবা ওয়ার্ক অ্যান্ড হলিডে ভিসা (সাবক্লাস ৪৬২) লাগবে। এই দু’টি ভিসার জন্যই আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

এসব ভিসায় আগত ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য কোনো পরিবারের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। ও পেয়ার এই কাজের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়াতে পারবেন।

কিন্তু, সীমিত সংখ্যক দেশের সঙ্গেই ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা এবং ওয়ার্ক অ্যান্ড হলি ডে ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, অস্ট্রেলিয়ায় আগত বেশিরভাগ ও পেয়ারই এসেছেন জার্মানি, দি নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স এবং স্কান্ডিনেভিয়া থেকে।

মিজ কফকিন বলেন,

“ আলাদা ও পেয়ার ভিসার মাধ্যমে এটাকে আরও বিস্তৃত করা যেতে পারে।”

“আমরা জানি অন্যান্য দেশেরও বহু কম-বয়সী লোক রয়েছে যারা ও পেয়ার হিসেবে কাজ করতে চায়। উদাহরণ হিসেবে ব্রাজিলের কথা বলা যায়।”

“সব দেশের লোকেরই আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত। শর্ত এটাই যে, আবেদনকারীকে যোগ্য হতে হবে।”

মিজ আইলওয়ার্ড বলেন, বিদ্যমান ভিসা ব্যবস্থায় “আমরা জানি না কতজন ও পেয়ার এদেশে কাজ করছেন, আর কী রকম অবস্থায় তারা কাজ করছেন।”
Italian au pair Michela Marchisio
Italian au pair Michela Marchisio. Source: SBS News
এই খাতে নানা রকম রয়েছে। ও পেয়াররা সাধারণত অনলাইন সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেই কাজ সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের অনেকের পক্ষ থেকেই অভিযোগ রয়েছে অতিরিক্ত সময় কাজ করার এবং যথাযথ মজুরি না পাওয়ার।

ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজি সিডনির মিজ বার্গ বলেন,

“ও পেয়াররা যদি নির্ধারিত মজুরি না পায় তাহলে তাদের কিছু করার থাকে না। একইভাবে, ও পেয়ার যদি বিনা নোটিশে চলে যায়, তাহলে হোস্ট পরিবার শিশুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে যায়।”

সেজন্য, কালচারাল ও পেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়া ও পেয়ারের জন্য বাধ্যতামূলক ইন্স্যুরেন্স কভারের পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া, তারা ও পেয়ার যাচাই করার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেছে। আর, ভিসার শর্ত পালনের ক্ষেত্রে স্পন্সর এজেন্সিকে পুরোপুরি দায়ী করেছে।

পিটার ডাটনের ঘটনায় ও পেয়ারের বিষয়টি এখন গুরুত্ব লাভ করেছে।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 18 September 2018 3:18pm
Updated 18 September 2018 4:07pm
By Nick Baker
Presented by Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends