“স্থায়ী শান্তি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে” এটাই ছিল এ বছরের পিস সিম্পোজিয়ামের মূল প্রতিপাদ্য। শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বক্তারা জোর দেন পারস্পরিক ভদ্রতা, সহিষ্ণুতা ও সম্মান রক্ষার প্রতি।
আহমদীয়া মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গত ৮ সেপ্টেম্বরে সিডনির মার্সডেন পার্কে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় “মসজিদ বাইতুল হুদা”তে এই বার্ষিক “পিস সিম্পোজিয়াম” বা শান্তি-সম্মেলনে যোগ দেন ফেডারাল এবং স্টেট পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য, মেয়র, কাউন্সিলর, একাডেমিকস এবং বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটিতে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রায় ৫০০ লোক অংশ নেন।অস্ট্রেলিয়ায় আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের আমীর ও মিশনারী-ইনচার্জ ইমাম ইনামুল হক কাউসার বলেন:
Source: Supplied
“অল্প-বয়স থেকেই শিশুদেরকে শান্তিপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করতে হবে। আমরা আহমদীয়া সম্প্রদায় আমাদের শিশুদেরকে শিক্ষা দেই ‘ভালবাসা সবার জন্য, কারও জন্য ঘৃণা নয়’। এটাই আমাদের মটো। ইসলামী শিক্ষা অনুসারে আমাদেরকে এটাই শেখানো হয়েছে, আমাদের আল্লাহ্ এবং তোমাদের সৃষ্টিকর্তা একই সত্তা, আমরা সবাই একই আল্লাহর সৃষ্টি। আমরা সমস্ত ঐশী ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি এবং ধর্মগ্রন্থগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখি।”
“শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, সামাজিক অধিকারসমূহের সুরক্ষা দিতে হবে এবং সমাজের সর্বস্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের সমস্ত কিছু কাজে লাগাতে হবে।”ব্লাকটাউন সিটির মেয়র এবং স্টেট মেম্বার অনারেবল স্টেফান বালি বলেন:
Source: Supplied
“সমাজে আমরা সকলে যদি মিলেমিশে কাজ করি, ভদ্র আচরণ করি, পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করি, তাহলে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটিই হবে প্রথম বড় ধাপ। ভাল-মন্দ সবকিছুই আমাদেরকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে, অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং অন্যদের সংস্কৃতি এবং ধর্মের সম্পর্কে জানতে হবে।”
গ্রিনওয়ে আসনের এমপি অনারেবল মিশেল রোল্যান্ড বলেন:
“মানবতার প্রতি ভালবাসাই আমাদের সবার মধ্যে কমন বা সাধারণ বিষয়। আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখা উচিত, আমরা কী রকম সমাজে বসবাস করতে চাই? আমরা কি এ রকম সমাজ চাই যেখানে রয়েছে ভালবাসা, সম্মান এবং বৈচিত্র? ঠিক এই বিষয়গুলোই আমরা আজ রাতে এখানে দেখতে পাচ্ছি।”আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম মোহাম্মদ আতা-ই রাব্বী হাদি তার বক্তৃতায় অস্ট্রেলিয়ায় এবং বিশ্বজুড়ে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করেন। তিনি মনে করেন, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
The Sydney Imam of the Ahmadiyya Muslim Community, Imam M. A. Hadi, highlighted the humanitarian work the community is involved in, around the world and in Australia, as a proven model to achieve peace within society. Source: Supplied
তিনি বলেন:
“আহমদীয়া সম্প্রদায় বিশ্বাস করে, ঘৃণার দ্বারা কখনও ঘৃণা অপসারিত করা যাবে না। ভালবাসা এবং শিক্ষাই তা করতে পারে। অতএব, এই সম্প্রদায় একটি নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করেছে যার নাম । এর মাধ্যমে ইসলামের শান্তিপূর্ণ চিরন্তন শিক্ষাসমূহ মুসলমান এবং অমুসলমানদের মাঝে প্রচার করা হয়ে থাকে।”এই ক্যাম্পেইনে ছয়টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়:
Source: Supplied
সন্ত্রাস নয়,
অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আনুগত্য,
রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ,
ধর্মচর্চা ও বাক্-স্বাধীনতা
কোনো বৈষম্য নয় এবং
নারী-অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন।
“ওয়েবসাইটটি ভিজিটকারীদেরকে উৎসাহিত করা হয় একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করে তাদের সঙ্গী অস্ট্রেলিয়ান মুসলমানদেরকে সহায়তা করার জন্য। তাদেরকে আরও বলা হয় বিনামূল্যে ‘কফি অ্যান্ড ইসলাম’-এ অংশ নেওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে তারা একজন অস্ট্রেলিয়ান মুসলমানের সঙ্গে বসে তার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে কিংবা নতুন একটি বন্ধু তৈরি করতে পারবে। এই সেবা অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত বড় বড় শহরগুলোতে আমরা দিয়ে থাকি।”
এই অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন:
Pandit Prem Misra – Representing Hinduism
Tina Ng – Representing Buddhism
Rev Mark Boyley - Multicultural Bible Ministry
Nathan Tyler – Seventh Day Adventist Reform Movement
John Carroll - Pastor and member of Australian religious Response to Climate Change (ARRCC)
Tara Chand Sharma – Director of Hindu Council of Australia
আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম চর্চা ও প্রচার করে যাচ্ছে। তারা শিক্ষা, আনুগত্য এবং আন্তঃধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতি জোর দেয়। এছাড়া, তারা অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রস, ক্লিন-আপ অস্ট্রেলিয়া ডে, ন্যাশনাল ট্রি প্লান্টেশন, ফিডিং দি হোমলেস ইত্যাদিসহ নানা রকম সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে। তাদের মটো: “ভালবাসা সবার তরে, ঘৃণা নয়কো কারও ‘পরে”।