৪২ বছর বয়সী ব্রাজিলের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মার্কোস ফেরেইরো বেন্টো বলেন, ঘরে ফিরে যাওয়া বেছে নেওয়ার কোনো উপায় নয়। এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“ব্রাজিলে ফেরত যাওয়ার জন্য একটি টিকিট কিনতে আমার যদি চার বা পাঁচ হাজার ডলার থাকতো তাহলে আমি কখনই সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে অনুরোধ জানাতাম না।”
“ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার মতো অর্থ থাকলে তো আমি এখানেই নিজের খরচ চালাতে পারতাম।”
২০১৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন মিস্টার বেন্টো। সিডনির পেনরিথ সাবার্বে একটি স্পেনিশ রেস্টুরেন্টে বেশিরভাগ সময় কাজ করেছেন তিনি। কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে রেস্টুরেন্টটি যখন টেক-অ্যাওয়ে পরিষেবা শুরু করে তখন তিনি তার কাজ হারান।
তিনি বলেন,
“ভবিষ্যতে কী হবে, আমার কোনো ধারণা নেই। ভাড়া দেওয়ার জন্য কোনো অর্থ নেই আমার কাছে।”
“পরিস্থিতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা জানি আমাদেরকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। তবে, ঘরে থাকতে হলে আপনার খাবার থাকতে হবে এবং বাড়ি ভাড়াও থাকতে হবে। নতুবা আপনি গৃহহীন হয়ে যাবেন। এজন্য আমি অনেক শঙ্কিত।”
খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে অভিবাসীরা
অস্ট্রেলিয়ায় দু’মিলিয়নের বেশি অস্থায়ী ভিসাধারী রয়েছেন। তাদেরই একজন মিস্টার বেন্টো। এরা সরকারের ১৩০ বিলিয়ন ডলারের জবকিপার ওয়েজ সাবসিডি প্রোগ্রাম কিংবা বিস্তৃত জবসিকার ওয়েলফেয়ার পেমেন্ট থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।
সম্প্রতি ৩,৭০০ এরও বেশি অস্থায়ী ভিসাধারীর উপর একটি জরিপ চালায় ইউনিয়ন্স নিউ সাউথ ওয়েলস। এসবিএস নিউজকে এত্থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় এবং শাটডাউন পদক্ষেপগুলোর কারণে তাদের অর্ধেক সংখ্যক লোকই কাজ হারিয়েছে।
এদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগের কর্ম-ঘণ্টা কমে গেছে এবং ৪৩ শতাংশ বলেছে, আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তারা খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে।
মিস্টার বেন্টো বলেন, সেই দিনটির জন্য তিনি আতঙ্কিত, যেদিন তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। আর এই দিনটি অচিরেই আসবে, বলেন তিনি।গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, যে-সব অস্থায়ী ভিসাধারী নিজেরা চলতে পারছেন না তাদেরকে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।
Prime Minister Scott Morrison said temporary visa holders who can't support themselves should return home. Source: AAP
“আমাদের লক্ষ্য এবং আমাদের অগ্রাধিকার হলো অস্ট্রেলিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ান রেসিডেন্টদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করা।"
“সুসময়ে অস্ট্রেলিয়ায় অতিথি আসার বিষয়টি চমৎকার। তবে এ সময়ে, আপনি যদি এ দেশে ভিজিটর হন, এটাই সময় ... ঘরে ফিরে যাওয়ার।”
মিস্টার বেন্টোর মতো শিক্ষার্থী, যাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার মতো অর্থ নেই, তাদের সম্পর্কে বিবৃতিটিতে যা বলা হয়েছে তা মর্মপীড়াদায়ক।
তিনি বলেন,
“আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম যখন আমি শুনলাম যে, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ঘরে ফিরে যেতে বলছেন। অর্থনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অনেক দিয়েছে। আমরা আপনাদের অর্থনীতিতে সহায়তা করেছি এবং এখন আমাদের এই অবস্থা।”
তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার জন্য তিনি ৪০,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন। তার পাবলিক হেলথে মাস্টার্স ডিগ্রি আগামী সেপ্টেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এখন চলে যাওয়ার অর্থ হলো সমস্ত অর্থের অপচয় হওয়া।
মিস্টার বেন্টো বলেন, দূর থেকে তার ডিগ্রি সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ তাকে দেওয়া হয় নি। আর, পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তখন তাকে ৮০ শতাংশ ক্লাসে অংশ নিতে হবে। তাই, যদি সে ফিরে যায়, তাহলে সে ফেল করবে।
গত সপ্তাহে সরকার আরও ঘোষণা করে যে, এই সঙ্কটের সময়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা চাইলে তাদের অস্ট্রেলিয়ান সুপারঅ্যানুয়েশন ফান্ড ব্যবহার করতে পারবে।
ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে
১২৪ টি ইউনিয়ন, বিভিন্ন অভিবাসী গোষ্ঠী, ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহ এবং দাতব্য সংস্থাসমূহ নিয়ে ইউনিয়ন্স নিউ সাউথ ওয়েলস একটি ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন শুরু করছে। জবকিপার ওয়েজ সাবসিডি প্রোগ্রামে অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে।
এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স, ন্যাশনাল রিটেইল অ্যাসোসিয়েশন, ইসলামিক কাউন্সিল অফ ভিক্টোরিয়া এবং ইউনাইটিং চার্চ।
ইউনিয়ন্স নিউ সাউথ ওয়েলস-এর সেক্রেটারি মার্ক মোরে বলেন, যে-সব রেসিডেন্টের প্রয়োজন রয়েছে তাদেরকে সহায়তা করতে ফেডারাল সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি বলেন,
“এই সঙ্কটে এই ফেডারাল সরকারের উচিত অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত কর্মীদেরকে অবশ্যই সহায়তা করা, তাদের ভিসা থাকুক কিংবা না থাকুক।”
“তারা এদেশের প্রতি অবদান রেখেছে, এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের অবদান আছে, তারা আয়কর দিয়েছে, তারা সমাজে অবদান রেখেছে যে সমাজে আমরা বাস করছি।”
“[সরকারের] উচিত দায়িত্ব গ্রহণ করা এবং জবকিপার বিস্তৃত করা।”
এই ক্যাম্পেইন গ্রুপটি মঙ্গলবার পত্র-পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করছে। এতে থাকবে, “কোভিড-১৯ এর সম্মুখীন হওয়ার সময়ে অস্ট্রেলিয়া তার অভিবাসীদেরকে পরিত্যাগ করতে পারে না”।
“আমরা বলতে পারি না যে, আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র নিয়ে গর্বিত, যদি আমরা এই দুর্দশার সময়ে লোকজনকে পরিত্যাগ করি। বহু অভিবাসী, যারা আমাদের সমাজে অবদান রাখে, কোনো প্রকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া তারা অস্ট্রেলিয়ায় ফাঁদে পড়ে যাবে এবং দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটাবে। এটা ভুল। কোভিড-১৯ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য এটি আরও কঠিন করে তুলবে।”
অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে জবকিপার প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান সম্পর্কে ট্রেজারার জশ ফ্রাইডেনবার্গের অফিসে প্রশ্ন পাঠিয়ে কোনো সাড়া পায় নি এসবিএস নিউজ।
অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদের সঙ্গে হলে দু’জনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
আপনার ভাষায় কোভিড-১৯ এর সর্বশেষ আপডেট জানাতে এসবিএস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পাবেন। ভিজিট করুন: .
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন: