সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কতটা আন্তরিক এবং দক্ষতা দেখাচ্ছে নির্বাচন কমিশন?
নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশন চমৎকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক ফজলুল বারী। "বিশাল জনবহুল এবং টানাপোড়েনের দেশ বাংলাদেশ। অন্যবারের চেয়ে এই নির্বাচন আলাদা এজন্য যে বড় সংখ্যার রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে এবার। দেশে নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে।"
"বরাবরই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে।" সাংবাদিক হুমায়ূন রেজা আরো বলেন, "কিছু কিছু সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে নির্বাচন একটা বিশাল এবং ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি বুঝা সম্ভব নয় যে কতটা স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে কমিশন।"
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে কতটা আন্তরিক মনে হচ্ছে?
"এই নির্বাচনে সরকার সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের কারণে এবার সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইছে সরকার," বলেছেন ফজলুল বারী।
একই মত দিয়েছেন হুমায়ূন রেজাও। তিনি বলেন, "সরকার অত্যন্ত কৌশলী এবং সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন গুছিয়ে এনেছে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে নেয়া নানা কৌশলে সফল সরকার।"
ভোটাররা প্রাধাণ্য দিবেন কিসে?
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর থেকে গত ১০ বছরে দেশে তরুণ ভোটার বেড়েছে দুই কোটি ২৫ লাখের বেশি।
নির্বাচনের ফলাফলে বরাবরই প্রভাব ফেলে তরুণ ভোটারদের ভোট। প্রতিটি দলের কর্মকান্ড এবং রাজনৈতিক ইশতেহার দেখেই ভোট দেন তারা। এবারের নির্বাচনেও তরুণ ভোটারদের পক্ষে টানার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে দলগুলো।
সাংবাদিক ফজলুল বারী বলেন, "তরুণ ভোটাররা বিএনপির শাসনামল দেখে নাই। বর্তমান সরকারের যেমন সফলতা আছে তেমনি অভিযোগও আছে। তরুণ ভোটারদের কাছে তা বড় হয়ে আসতে পারে।""নতুন ভোটাররা কাকে ভোট দিবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ইস্যুতে তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে ভুগবে সরকার," বলেছেন সাংবাদিক হুমায়ূন রেজা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট বাক্স। Source: AFP
তবে তার সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ফজলুল বারী। তিনি বলেন, "এসব ইস্যু নির্বাচনে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। যদি ফেলতই তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিএনপি নামক কোন দলই থাকার কথা নয়। সেসময় বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল।"
সংকটকালীন অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আছে বলে মনে করেন হুমায়ূন রেজা। তিনি বলেন, "প্রার্থীদের ব্যক্তি সাফল্য নির্ভর করবে ভোটারদের সন্তুষ্ট করার ক্ষেত্রে। আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের জরিপ টেনে পজিটিভ ইমেজ তৈরি করতে পারবে আওয়ামী লীগ। বিএনপির নেতৃত্ব সংকটও বিবেচনায় থাকবে ভোটারদের।"
"গণমাধ্যমের ওপর সরকারের প্রায় অদৃশ্য কিন্তু দৃঢ় নিয়ন্ত্রন। এ বিষয়গুলো সাধারণ মানুষ কিন্তু খুব স্পষ্টভাবে সনাক্ত করতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।"
ফজলুল বারীর মতে, "বাংলাদেশের আম জনতার বড় একটা অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আওয়ামী লীগের যত নেতিবাচক অবস্থান আছে, তা দলটিকে ততটা কাবু করবে না কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণেই আছে।"
ফিরবে কি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা?
"বাংলাদেশে বিশুদ্ধ রাজনীতির জায়গাটা নেই। তারপরও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে চলছে।" ফজলুল বারী আরো বলেন, "এমন যদি হত যে, আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর ডক্টর কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী এবং রেজা কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী হতেন, তবে পরিবর্তন আসত। কিন্তু বাংলাদেশেতো সেটা হবে না।"
"যদি আওয়ামী লীগের পরাজয় হয় তবে বিরোধী জোটের বড় শক্তি বিএনপি তাদের নেত্রীকে কারাগার থেকে মুক্ত করবে। বিদেশে তাদের নির্বাসিত নেতাকে দেশে ফিরিয়ে আনবে।"
"বাংলাদেশের নির্বাচনে সবসময় জয়ী দলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ করে আসছে পরাজিত রাজনৈতিক দল। জয়ী দলকে সাধুবাদ বা শুভেচ্ছা জানানোর কোন চর্চা নেই," বলেছেন সাংবাদিক ফজলুল বারী।
হুমায়ূন রেজা বলেন, "আসছে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষ শংকিত চিত্তে অপেক্ষমান। তারা চায় স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা খুবই কঠিন।"