অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে এবং আগামী কয়েক দিনেও পালিত হতে যাচ্ছে।

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার পার্থে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন অভ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের।

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার পার্থে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন অভ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের। Source: Tasneemul Galib Amit

একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে একুশে উৎযাপন

একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কের আন্তর্জাতিক স্মৃতিসৌধের পাদদেশে একুশের বইমেলা হয়ে আসছে গত ২২ বছর ধরে। এ বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় নি।

কোভিড-১৯ এর শর্তাবলী অনুসরণ করে সীমিত পরিসরে মেলার পরিবর্তে গত ২০ ফেব্রুয়ারি হার্স্টভিল সিভিক থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘একুশে উদযাপন ২০২১’। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান এবং আবৃত্তিকার মুনা মুস্তাফা। কারিগরী সহযোগিতায় ছিলেন সংগঠনটির কার্যকরী সদস্য ড. মুনীরা হক এবং বুলবুল আহমেদ।

এই আলোচনা অনুষ্ঠানে জুমের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশিষ্ট জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন এবং ক্যানবেরা হতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্য থেকে উপস্থিত ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেটের এমপি মার্ক কোরি, প্রাক্তন মেয়র কার্ল সালেহ এবং স্থানীয় সাংবাদিক, কবি, লেখক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ।

একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সভাপতি প্রকোশলী আব্দুল মতিন অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
কোভিড-১৯ এর শর্তাবলী অনুসরণ করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সিডনির হার্স্টভিল সিভিক থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘একুশে উদযাপন ২০২১’।
কোভিড-১৯ এর শর্তাবলী অনুসরণ করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সিডনির হার্স্টভিল সিভিক থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘একুশে উদযাপন ২০২১’। Source: Abdul Matin
মাদার ল্যাঙ্গুয়েজেস কনসার্ভেশন মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল

সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম স্থায়ী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধে গতকাল এমএলসি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অ্যাডিলেইড থেকে একমাত্র ল্যাঙ্গুয়েজ এনডেনজার্ড (অবক্ষয়মুখী ভাষার) পুনরুদ্ধার বিষয়ক প্রফেসর গিলাদ জাকারমান এবং সিডনি ল্যাঙ্গুয়েজ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর মিস্টার দিমিত্রি লুসনিকভ ও এই সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

মাদার ল্যাঙ্গুয়েজেস কনসার্ভেশন মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল বা এমএলসি মুভমেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ার পার্সন নির্মল পাল বলেন,

“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ এবং ভাষা শহীদ মিনার— এই দুটি কথা ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। শহীদ মিনার হলো বাঙালি এবং বাংলা ভাষা-ভিত্তিক আন্দোলনের শহীদদের আত্মদানের স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর কাছে শহীদ মিনারের মতো মর্যাদা এবং গুরুত্ব নিয়ে উপস্থাপন করে।”

“দিবস শব্দটি নিয়েই বিশ্বের সকল ভাষা-ভাষীর কাছে আমাদের একুশের গর্ব এবং ত্যাগকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।”

২২ ফেব্রুয়ারি রাতে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়) সারা বাংলা ডট নেট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনলাইনে ‘বিশ্বায়নের শহীদ মিনার’ নামের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাই কমিশনার এবং কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি তুলে ধরার জন্য যারা কাজ করছেন, তারা এতে অংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন নির্মল পাল।

আগামী ২৪ তারিখেও একই সময়ে অনলাইনে ‘একুশের চেতনার বিশ্বায়ন’ নামের আরেকটি আলোচনা সভা হবে বলেন নির্মল পাল। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ভাষা-প্রেমিকরা অংশ গ্রহণ করবেন বলে নির্মল পাল জানিয়েছেন।
পার্থ

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন অভ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বরাবরের মতো আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, শফিক, বরকত-সহ আরও অনেকেই। ভাষার জন্য এই আত্ম-ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০২ সালে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মন্ত্রী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অভ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর অমিত চাকমা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন অভ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. শাহেদিন শহীদ।

নাচ, গান, অভিনয়, একক ও বিভিন্ন দলীয় পরিবেশনায় পরিপূর্ণ বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেছে পাঠশালা বাংলা স্কুল, সঙ্গীত একাডেমী পার্থ, পার্থে প্রবাসী বাংলাদেশী শিশু-কিশোর-সহ ছোট-বড় সকলে।

কোভিড-১৯ বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও এই অনুষ্ঠানটিতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা-সহ প্রায় ২৫০ জন অংশ নেন।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন অভ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটির সাংস্কৃতিক অংশের দায়িত্বে ছিলেন কালচারাল সেক্রেটারি ড. তন্ময় দেবনাথ। সবশেষে, অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জেনারেল সেক্রেটারি তাসনীমুল গালিব অমি অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মেলবোর্নে একুশে ২০২১

মেলবোর্ন থেকে মামুন বদরুদ্দোজা পলাশ জানান,

মেলবোর্নের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি যদিও কিছুটা স্থিতিশীল, কিন্তু জনসমাগমের বিধিনিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বাভাবিক যে সকল অনুষ্ঠান, যেমন, প্রভাতফেরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, একুশে মেলা ইত্যাদি করা যায় নি।

এই প্রেক্ষাপটে মেলবোর্নে একুশে কার্যক্রম অনলাইনেই সীমাবদ্ধ ছিল।

মেলবোর্ন-ভিত্তিক জনপ্রিয় UMA TV ফেইসবুক পেজ-এর উদ্যোগে দুটি অনলাইন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়: একটি ছিল "ভাষার গান দেশের গান" আর অন্য অনুষ্ঠানটি হচ্ছে "প্রবাসের একুশে"। এগুলোতে অংশ নেন মেলবোর্ন, লন্ডন, ঢাকা  ও আমেরিকার টেক্সাস থেকেও বেশ কয়েকজন।

"প্রবাসের একুশে" অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন ফারিনা মাহমুদ। ভিডিও সম্পাদনায় ছিলেন রিমন চক্রবর্তী।

কবিতা আবৃত্তি করেন ওয়াহিদুজ্জামান জুয়েল, রাকসান্দ কামাল, শুভাঞ্জনা, ঝুমুর সরকার, মৌসুমী আখতার ও আশরাফ।

শিশু শিল্পীদের মাঝে ছিলেন নৃত্যে ইসমে, নৃত্যে ও কবিতায় ইশাল, টেক্সাস বাংলা স্কুলের পক্ষ থেকে গান পরিবেশন করে আলাভী ও জারিফ।

সজ্ঞীত পরিবেশনায় ছিলেন নিজের লেখা ও সুর করা মৌলিক গান নিয়ে ড. নিলুফা খানম ও লন্ডন থেকে তারানা রউফ। এছাড়া গান পরিবেশন করেন ঢাকা থেকে হামিদুল ইসলাম, মুসাইরা ইসলাম, রিদওয়ান আফরিন, তৃষা ইসলাম, মেলবোর্নের সুক্তি ইসলাম, সঙ্ঘমিতা চক্রবর্তী, অনুষ্কা চক্রবর্তী, শিঞ্জন, জেসমিন আখতার শিউলি, কামরুল হাসান মিল্কি, অন্যান্য চক্রবর্তী ও খন্দকার সাঈদ রিপন।

অনুষ্ঠানে মেলবোর্ন ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একতারার পরিবেশনায় ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপটের উপর একটি তথ্য চিত্র  দেখানো হয়।

ব্রিসবেন

ব্রিসবেন থেকে জ্যোতিষ দাশ জয় জানান,

“২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেন সিটি কাউন্সিলের সহায়তায় আমরা একটি সুন্দর ও মাল্টিকালচারাল কমিউনিটির সমন্বয়ে একটি দিন উদযাপন করবো। সেদিন আমরা অমর একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তুলে ধরবো।”

Share
Published 22 February 2021 5:19pm
Updated 22 February 2021 5:26pm
By Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends