বাপ- দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে, সময়ের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হচ্ছেন, বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। শুধু যে নতুন একটি দেশ, তা কিন্তু নয়। বরং অচেনা- অজানা পরিবেশে এ এক নতুন সংগ্রাম। নিজের এবং আগামীর জন্য একটি স্থায়ী নিবাস, ব্যবসায়িক পুঁজি, ব্যক্তিগত বা উচ্চশিক্ষার্থে অনেকেরই প্রয়োজন পড়ে ব্যাংক ঋণ। সামর্থ্যের সীমা ছাড়াও, আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় জীবনযাপন বেশ ব্যয়বহুল।
আপনার বয়স যদি ১৮ হয়, তবে আপনি ব্যাংক ঋণের আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শুরুতেই ব্যাংক আপনার কাছে জানতে চাইবে উপার্জনের আদ্যোপান্ত। চাকরি বা ব্যবসা, যেটাই আপনার উপার্জনের উৎস হউক না কেন, ব্যাংকের কাছে প্রমান করতে হবে যে আপনি নিয়মিত তার কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন এবং রাজস্ব পরিশোধ করে আসছেন। চাকরির ক্ষেত্রে, যোগদানের তিন মাস পর ঋণের আবেদন করতে পারবেন। আপনার চাকরির ধরণ পার্মানেন্ট, পার্ট টাইম নাকি ক্যাজুয়াল, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। আপনি যদি সেন্টারলিংক সুবিধা পেয়ে থাকেন তবে তাও জানাতে হবে। বাড়ি কিনতে চাইলে আপনার ব্যাংক একাউন্টে চাহিদা মোতাবেক ডিপোজিট মানি থাকতে হবে।আয়ের উৎস জানার পর, অস্ট্রেলিয়ায় আপনার ভিসা স্ট্যাটাস জানতে চাইবে ব্যাংক। সাধারণত বেশির ভাগ ব্যাংক স্থায়ী অভিবাসীদের ঋণ দিতে আগ্রহী, যদিও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। মেলবোর্নের মর্টগেজ ব্রোকার মার্টিন মুরেইথি জানান, "ব্যক্তিগত বা হোম লোনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ব্যাংকই চায় আবেদনকারী যেন অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী অভিবাসী হয়। তবে, ছাত্র ভিসা বা অস্থায়ী অভিবাসী হয়েও গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পেয়েছে এমন কিছু অভিজ্ঞতাও আছে আমার।" তিনি আরো বলেন যে, যারা পার্টনার ভিসায় আছেন তাদেরকেও ঋণ দিচ্ছে কিছু ব্যাংক। একটা নিৰ্দিষ্ট সময়ের পর যেসব অস্থায়ী অভিবাসীরা স্থায়ী হবেন, এমন ভিসা স্ট্যাটাসের যে কেউই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সহজে ব্যাংক ঋণ পেতে আপনার লেনদেনের ইতিহাস ভালো রাখুন এবং নিয়মিত বিল পরিশোধ করুন। পাশাপাশি, আপনার সঞ্চয়ী হিসাব চালু রাখুন। এটা জানা জরুরি যে, ধরুন যদি কখনো মোবাইল বিল পরিশোধ না করে থাকেন, তবে তাও কিন্তু আপনার নামের পাশে 'ব্যাড মার্ক' হয়ে থাকবে, যা কিনা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এমন যে, আপনার সব ধরণের তথ্যই পেয়ে যাবে কর্তৃপক্ষ। ক্ষুদ্র ঋণ হলেই যদি আপনার প্রয়োজন মিটে যায়, তবে আংলিকেয়ার বা এএমইএস এর মত বেশ কিছু সংগঠন আছে, যারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আংলিকেয়ারের ম্যানেজার টেসা ক্লার্ক বলেন, "অভিবাসী এবং অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আমাদের অনেক সেবা চালু আছে। কমিউনিটির যে কেউই এই সেবা নিতে পারেন।"
"আমরা ক্ষুদ্র ঋণ সেবাও দিয়ে থাকি। নিম্ন আয়ের যে কেউ এ সেবা নিতে পারেন।"
নতুন অভিবাসীদের জন্য মেলবোর্নে ইংলিশ শিক্ষা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে এএমইএস। আংলিকেয়ারের মত তারাও অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষুদ্র ঋণ সেবা দিয়ে থাকে। গত কয়েক বছরে, ডজনেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী ক্ষুদ্র ঋণ সেবা নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেছেন।ঋণ নেয়ার আগে ভাবুন, আসলেই কতটা দরকার। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ঋণ নেয়াটা জরুরী। তবে, অস্ট্রেলিয়ায় নতুন জীবনের শুরুতেই ঋণ না নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এএমইএস'র কর্মকর্তা লৌড়ি নোয়েল। ঋণ নেয়ার আগে আর্থিক পরামর্শ সেবা নেয়ার পরামর্শ দেন লৌড়ি।