বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সোমবার বলেছে, সোয়াইন ফ্লু থেকে ১০ গুণেরও বেশি ভয়ানক হলো নতুন এই করোনাভাইরাস। সোয়াইন ফ্লুর কারণে ২০০৯ সালে বৈশ্বিক মহামারী হয়েছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করতে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরির উপর জোর দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জেনেভায় একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস বলেন, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসটির সম্পর্কে এই সংস্থাটি ক্রমাগত অবগত হচ্ছে। এতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ১১৫,০০০ লোক মারা গেছে এবং ১.৮ মিলিয়নেরও বেশি লোক এতে আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন,
“আমরা জানি কোভিড-১৯ খুব দ্রুত ছড়ায় এবং আমরা জানি যে, এটি ভয়ানক। ২০০৯ সালের ফ্লু প্যানডেমিকের তুলনায় এটি ১০ গুণ বেশি ভয়ানক।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সোয়াইন ফ্লু বা এইচ-১এন-১ এ আক্রান্ত হয়ে ১৮,৫০০ লোক মারা গিয়েছিল। এটি প্রথমে মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৯ সালের মার্চে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু, ল্যানসেট মেডিকেল অনুমান করেছে যে, এর ফলে ১৫১,৭০০ থেকে ৫৭৫,৪০০ লোক মারা গিয়েছিল।
ল্যানসেট-এর রিভিউ-এ আফ্রিকা এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় আক্রান্তদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা কিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে রাখা হয় নি।
২০০৯ সালের জুন মাসে এই ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবকে প্যানডেমিক বা বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে বলা হয়, এটাকে প্রথমে যতোটা ভয়ানক ভাবা হয়েছিল, এটি আসলে ততোটা ভয়ানক নয়।
এর ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক খুব দ্রুত তৈরি করা হয়। তবে, বিষয়টি পর্যালোচনা করে ‘অতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর’ জন্য পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত, ইওরোপ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করা হয়। অথচ, সেই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশ্বিক মহামারীতে ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক মারা যেত।
সোমবার ড. টেড্রোস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, কোনো কোনো দেশে প্রতি তিন থেকে চার দিনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশগুলো যদি “শুরুতেই কেসগুলো শনাক্ত করতো, পরীক্ষা করতো, আইসোলেটিং বা প্রথকীকরণ করতো, সব কেসের প্রতি যত্ন নিত ও সবগুলো কন্টাক্ট খুঁজে বের করার বিষয়ে মনোযোগী হতো” তাহলে তারা এই ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো।
সংক্রমণের হার বৃদ্ধির তুলনায় সংক্রমণ হ্রাসের হার অনেক কম
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি লোক এখন ঘরে অবস্থান করছে। ড. টেড্রোস সতর্ক করে বলেন যে, “আমাদের বৈশ্বিক সংযুক্ততার অর্থ হলো নতুন করে এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি এবং এই রোগটির পুনরায় আবির্ভাব জারি থাকা।”
তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, কোভিড-১৯ যেখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে “এটির সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার হার অনেক ধীর”।
তিনি বলেন, “অন্য কথায়, এটির সংক্রমণ বৃদ্ধির হারের তুলনায় এটির প্রকোপ কমার হার অনেক কম।”
তিনি জোর দেন যে,
“এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো অবশ্যই ধীরে ধীরে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে তুলে নিতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে এসব তুলে নেওয়া যাবে না।”
“গণ-স্বাস্থ্য রক্ষার্থে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, যেমন, কন্টাক্টগুলো ভালভাবে খুঁজে বের করা গেলে শুধুমাত্র তখনই এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া যাবে।”
ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, “সংক্রমণ পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে হলে, পরিশেষে একটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রতিষেধক তৈরি করা ও সরবরাহ করা দরকার হবে।”
প্রতিষেধক তৈরি করতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদের সঙ্গে হলে দু’জনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না।
Source: SBS
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
আপনার ভাষায় কোভিড-১৯ এর সর্বশেষ আপডেট জানাতে এসবিএস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পাবেন। ভিজিট করুন: .
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন: