দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে মমল্লাপুরমের সমুদ্রসৈকত সাফ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার সকালে আধ ঘণ্টা ধরে সমুদ্রসৈকত প্লাস্টিকসহ নানা রকমের বর্জ্য পদার্থ কুড়িয়ে চেন্নাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের ঐ সমুদ্রসৈকত পুরোপুরি পরিষ্কার করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবেই মমল্লাপুরমের সমুদ্রসৈকত সাফ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। পরিবেশকে নির্মল রাখার বার্তা দিয়েছেন দেশবাসীকে। ভারতে সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে চেন্নাইয়ে তাঁর দ্বিতীয় দফা বৈঠকের আগে তাঁর সমুদ্রসৈকত সাফাইয়ের ভিডিও পরে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি যেখানে উঠেছিলেন সেই তাজ ফিশারম্যানস কোভ রিসর্ট অ্যান্ড স্পা-য়ের কাছে সমুদ্রসৈকতে যত প্লাস্টিকের বোতল বা অন্যান্য জিনিসপত্র পড়ে রয়েছে, ঘুরে ঘুরে সেই সবই কুড়িয়ে নিচ্ছেন তিনি। সমুদ্রসৈকত থেকে যা যা তিনি কুড়িয়ে পান, সে সবই প্যাকেটে ভরে তাঁকে তুলে দিতে দেখা গিয়েছে হোটেলকর্মী জয়রাজের হাতে।
এদিকে, কাশ্মীর প্রসঙ্গ ওঠেই নি, ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে এমনটাই দাবি করা হচ্ছে বৈঠক শেষে। দুই প্রতিবেশী দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ দমনে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে। আর বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলবে ভারত ও চীন। চেন্নাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মমল্লপুরমের সমুদ্রসৈকতের কাছে একটি রিসর্টে দু’দফার বৈঠকের পর দৃশ্যতই খুশি দেখা গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-কে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, উহানের শীর্ষ সম্মেলন ভারত ও চীনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্ককে জোরদার করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। আর চেন্নাইয়ের এই বৈঠক, চেন্নাই কানেক্ট, দু’দেশেই পারস্পরিক সম্পর্কে একটি নতুন যুগ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর দু’দেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে একই কথা জানিয়েছেন বিদেশসচিব বিজয় গোখলে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং প্রধানমন্ত্রী মোদির সুরে সুর মিলিয়েই বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমার বন্ধুর মতো কথা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়েছে খুবই আন্তরিকভাবে। নতুন যুগ শুরু হল দু’দেশের সম্পর্কে।
ভারতের বিদেশসচিব বিজয় গোখলে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক সেরে নেপাল রওয়ানা হওয়ার আগে চীনা প্রেসিডেন্ট জানিয়ে গিয়েছেন বৈঠকে তিনি খুব খুশি। দু’দেশের সম্পর্কে একটি নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে। কাশ্মীর নিয়ে কোনও অস্বস্তি যাতে মাঝপথে তৈরি না হয়, সে জন্য কোনও প্রশ্ন ওঠে নি মমল্লপুরমে শি জিং পিং ও মোদির দু’দফার বৈঠকে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই বৈঠকের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে এবং দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে যে চাপ তৈরি করা শুরু করেছিল বেইজিং, তার থেকে বেরিয়ে আসা, দু’দেশের সম্পর্কে।
এদিকে চীনের প্রেসিডেন্টকে হাতে বোনা সিল্কের এক ছবি উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোয়েম্বাতুরের শিরুমুগাইপুদুরের তাঁতিপাড়ার শিল্পীরা এই ছবি তৈরি করেছেন। জানানো হয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্টের গোটা ছবি সম্পন্ন করতে তামিল তাঁত-শিল্পীদের পাঁচ দিন সময় লেগেছিল। সূক্ষ্ম কারুকার্যখচিত লাল রঙের ছবির উপর ফুলের ডিজাইন দেওয়া, মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্টের ছবি। এমনিতেই সিল্কের কাজের জন্য তামিলনাড়ু বরাবরই প্রসিদ্ধ। কাঞ্চিপুরম, আরানি, মাদুরাই, কোয়েম্বাতুর, রাসিপুরমের মতো শহরে বহু যুগ ধরেই উৎকৃষ্ট মানের সিল্কের শিল্পকলা চলে আসছে। সফরের প্রথম দিনে মমল্লপুরমের ঐতিহ্যপূর্ণ সৌধগুলি প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-কে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।