করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে জন-জীবন বিপর্যস্ত। অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে আর্থিক সংগ্রামে রত আছেন বাংলাভাষী ব্যক্তিরা।
অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীসহ এসব অসহায় ও আর্থিক দিক দিয়ে সংগ্রামরত ব্যক্তিদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন কমিউনিটি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিও এতে পিছিয়ে নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের আয়োজন করে ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে সিডনির বাংলাদেশী কমিউনিটি। অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে প্রশংসা করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশী কমিউনিটি শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই কাজ করছে না। বাংলাদেশের অসহায় মানুষের প্রতিও তারা বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত।
কোভিড-১৯ এর সঙ্কটময় সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদেরকে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া। Source: Faisal Khalid Shuvo
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার (RUAAA) মানবিক সহায়তা প্রদান
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অস্বচ্ছল, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া, রুয়া (RUAAA)।
প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিলিয়ে উভয় দেশেই রুয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ৩৬ জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে সরাসরি ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার ও বিকাশ এর মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করেছে। প্রথম পর্যায়ে উক্ত ছাত্রছাত্রীদের বিকাশ একাউন্টে তিন হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রুয়া রাবির ৯০ জন বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে একই প্রক্রিয়ায় প্রতিজনের বিকাশ একাউন্টে দুইহাজার টাকা প্রদান করে। কোরবানী ঈদের আগেই এই কাজ সম্পন্ন হয়। বিভাগের দুইজন শিক্ষকের সুপারিশের ভিত্তিতে এই টাকা প্রদান করা হয়।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার (RUAAA) প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আহমেদ বলেন,
“উপহারের পরিমাণ যত সামান্যই হোক না কেন মানবিক দিক দিয়ে খুব শান্তি অনুভব করতে পারছি; কেননা, এই কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে আমরা আমাদের প্রিয় ইউনিভার্সিটির ছোট ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। আশাকরি, এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে এবং আমাদের সামনে আরও বড় কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ হবে।”
রুয়ার সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফয়সাল খালিদ শুভ এ সম্পর্কে বলেন,
“আমাদের সাধ অনেক কিন্তু সাধ্য কম। তবে আমি বিশ্বাস করি, সারা অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর রাজশাহীর অ্যালামনাই রয়েছেন। আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি তাহলে আমরা আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে আরও সহায়তা করতে পারবো।”
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া (RUAAA) কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
“২০১০ সালে প্রফেসর নুরুল হোসেন চৌধুরী যখন অস্ট্রেলিয়ায় আসেন তখন আনুষ্ঠানিকভাবে রুয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।”
রুয়ার কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন,
“প্রত্যেক বছরই আমরা আমাদের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকি। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে আমরা একত্রিত হয়ে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি।”
“মানুষের দোয়ার, মানুষের পাশে” দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে প্রায় বছর খানেক আগে স্কুল বন্ধুদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল “দোয়া চ্যারিটি ফান্ড।” Source: Abul Hossain Zia
দোয়া চ্যারিটি ফান্ড
“মানুষের দোয়ার, মানুষের পাশে” দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে প্রায় বছর খানেক আগে স্কুল বন্ধুদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল “দোয়া চ্যারিটি ফান্ড।” অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে তারা এবং গত ১ মে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের হত-দরিদ্র, অসহায় ও এতিমদের পাশে দাঁড়ায় এই সংগঠনটি।
এই সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা, পার্থে বসবাসকারী আবুল হোসেন জিয়া বলেন,
“মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার নদী-ভাঙনে জর্জরিত বাঘুটিয়া-বাশাইল একটি যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল। ব্যক্তি পর্যায়ে সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার ইতিহাস নেই। সে অঞ্চলের মানুষের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই-বোনের কাছে অনুদানের আহ্বান জানালে তারা আশানুরূপ সাড়া দেন।”
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার বাশাইলের বাঘুটিয়া কে এস হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন বিকেএস ক্লাবের মাধ্যমে সেখানে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
এই ক্লাবটির অন্যতম সদস্য পার্থের আবুল হোসেন বলেন,
“প্রবাসীদের অনুদান ও সেই এলাকার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে দোয়া চ্যারিটি ২৭৫ জন অসহায় ও হত-দরিদ্র ব্যক্তির মাঝে খাদ্য-সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করেছে। এ কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন মো. মাসুদুর রহমান, শামসুল আলম, কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মৃধা আশরাফ, ফরহাদ ও মনজুল আলম।”
আবুল হোসেন জিয়া আরও বলেন যে,
“করোনা মহামারীর এই দুর্যোগের সময়ে কমবেশি প্রতিটি মানুষ ও রাষ্ট্র হিমশিম খাচ্ছে। ডাক্তারদের জন্য পিপিই দেওয়া থেকে শুরু করে অসহায় মানুষের পাশে খাদ্য-সামগ্রী ও নগদ অর্থ নিয়ে দাঁড়াচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা।”
বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে আবুল হোসেন জিয়া বলেন,
“প্রবাসীরাও আপনাদের মতোই দেশকে ভালবাসে। সবসময় তাদের হৃদয় জুড়ে থাকে দেশ ও দেশের মানুষ। রেমিটেন্স যোদ্ধাদেরকে করোনাভাইরাসের জন্য ঘৃণা নয়, হৃদয় দিয়ে ভালবাসুন।”