অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ একজন ভারতীয় নাগরিকের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেই আবেদনকারী অস্ট্রেলিয়ার রিজিওনাল এলাকায় বসবাস করেন নি, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কাছ থেকে এ রকম সংবাদ পেয়ে কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
২০০৭ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন মিস্টার সিং*। ২০১২ সালে তিনি সাবক্লাস-৪৮৭ ভিসা পান। এই ভিসার পাথওয়ে অনুযায়ী তিনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি লাভ করতে পারতেন, যদি তিনি অস্ট্রেলিয়ার একটি নির্দিষ্ট রিজিওনাল এলাকায় কমপক্ষে দু’বছর বসবাস করতেন এবং এক বছর পূর্ণকালীন কাজ করতেন।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে সাবক্লাস-৮৮৭ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার জন্য আবেদন করেন মিস্টার সিং। সেই সময়ের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন মিনিস্টারের একজন প্রতিনিধি তার ভিসা আবেদন নাকচ করে দেন এই বলে যে, মিস্টার সিং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওডোঙ্গার দু’টি ঠিকানায় বসবাস করেছেন এমনটা তারা মনে করেন না।
Source: SBS
সেই দু’বছর সময়কালে মিস্টার সিং যে দুটি ঠিকানায় ছিলেন বলে দাবি করেছেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে তিনি তার দাবির সমর্থনে অনেকগুলো দালিলিক প্রমাণ দেন। যেমন, ইউটিলিটি বিল, মোবাইল ফোন বিল, আয়কর সম্পর্কিত রেকর্ড, চাকরি এবং সুপার-অ্যানুয়েশন বিষয়ক রেকর্ড, রেন্ট এগ্রিমেন্ট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
তবে, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ডিপার্টমেন্ট অফ ইমিগ্রেশনকে বলেন যে, মিস্টার সিং মেলবোর্নে বসবাস করছিলেন এবং অবৈধভাবে কাজ করছিলেন। সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মাধ্যমে ডিপার্টমেন্ট আরও জানতে পারে, রিজিওনাল এলাকায় মিস্টার সিং তার মনোনীত চাকুরিদাতার অধীনে কাজ করছিলেন না। তিনি, বস্তুত তার চাকুরিদাতাকে অর্থ প্রদান করেন যেন এ বিষয়টি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কাছে গোপন রাখা হয়।
ডিপার্টমেন্ট আরও জানতে পারে, মিস্টার সিং সেই রিজিওনাল এলাকায় বাড়ি ভাড়া করেছিলেন, তবে তিনি বসবাস করতেন মেলবোর্নে। মেলবোর্নে তিনি নগদ অর্থের বিনিময়ে রাতের শিফটে নিরাপত্তা-রক্ষীর কাজ করতেন।
মিস্টার সিংয়ের একজন বন্ধু, যিনি দাবি করেছেন যে তিনি তার সঙ্গে বসবাস করতেন এবং তিনিও একই কাজ করেছেন। অর্থাৎ, তিনিও রিজিওনাল এলাকায় থাকার দাবি করেছেন কিন্তু কাজ করতেন মেলবোর্নে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ মিস্টার সিংয়ের ঐ বন্ধুকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বহিষ্কার করেছে।
অজ্ঞাতনামা তথ্যপ্রদানকারীর দেওয়া তথ্য অনুসারে ডিপার্টমেন্ট আরও খোঁজ নিয়ে দেখেছে মিস্টার সিং ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অপরাধেও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এতে দেখা যায়, সেই সময়ে তিনি ওডোঙ্গাতে বাস করছিলেন না।
মিস্টার সিং এ বিষয়টি নিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাপিলস ট্রাইবুনাল (এএটি) পর্যন্ত গিয়েছেন। সেখানে আরও তথ্য বেড়িয়ে আসে। তার পে-স্লিপ এবং ব্যাংক রেকর্ডস এবং সুপার-অ্যানুয়েশনের রেকর্ডেও নানা রকম অনিয়ম ধরা পড়ে।
মিস্টার সিংয়ের যে বন্ধুকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার বিষয়েও জানতে পারে ট্রাইবুনাল।
ট্রাইবুনাল আরও জানতে পারে, ভিক্টোরিয়ান পুলিশের কাছে রক্ষিত লাইসেন্সিং রেকর্ডে দেখা গেছে, মিস্টার সিং নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করার জন্য ২০০৮, ২০১১, ২০১২ এবং পুনরায় ২০১৫ সালে সিকিউরিটি লাইসেন্সের আবেদন করেন। সেখানে ঠিকানা হিসেবে মেলবোর্নের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। আর, নিয়োগদাতাও ছিলেন মেলবোর্ন-ভিত্তিক।কাজেই, ডিপার্টমেন্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে এএটি। এরপর মিস্টার সিং অস্ট্রেলিয়ার ফেডারাল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেন। ফেডারাল কোর্ট মিস্টার সিংয়ের যুক্তি মেনে নেন এবং দেখতে পান যে, ট্রাইবুনাল তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শুধু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির প্রদত্ত তথ্যের প্রতি অনেক নির্ভর করেছে।
Source: Public Domain
বিষয়টি এখানেই শেষ হয় নি। মিনিস্টার ফর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাপিল করেন। আদালত দেখতে পায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দেওয়া তথ্য সঠিক ছিল। আদালত তখন ডিপার্টমেন্টের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় প্রদান করে। মিস্টার সিংয়ের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার এই আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
*ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।