সিডনি
ছোটভাই আনিসুর রহমান নান্টুর সাথে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন রোকসানা রাজ্জাক। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের বাবা শহীদ হবিবুর রহমানকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি দোসররা। তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক।
"আমাদের কাছে এ দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটা গৌরবান্বিত হয়ে উঠলেই কেবল ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। যাদের একজন আমার বাবা," বললেন আনিসুর রহমান নান্টু।সহযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ এনায়েতুর রহিম বেলাল। প্রবীণের পাশাপাশি নবীনও এসেছিলেন স্মৃতিসৌধে। ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় শহীদদের। লাকেম্বা রেলওয়ে প্যারেডে অস্থায়ী এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে বাংলা টাউন অস্ট্রেলিয়া।
কাঁদছেন শহীদ হবিবুর রহমানের কণ্যা রোকসানা রাজ্জাক। ছবি: এসবিএস বাংলা। Source: Supplied
সংগঠনের সমন্বয়ক মিরাজ হোসেন বলেন, "স্মৃতিসৌধকে স্থায়ী রূপ দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। সময় সাপেক্ষ হলেও কাজ চলছে। এরমধ্যে দু'টো জায়গাও প্রস্তাবনায় আনা হয়েছে।"
দিবসটি উপলক্ষে লাকেম্বা রেলওয়ে প্যারেড সেজে উঠে লাল সবুজ পতাকায়।
এদিকে, ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে রোববার বিকেলে সিডনির ওয়াইলি পার্কে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় মেলা।
ক্যানবেরা
বিজয় দিবসের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন হাইকমিশনার মো: সুফিউর রহমান। এক মিনিট নীরবতায় স্মরণ করা হয় শহীদদের। বীরদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়ায় অংশ নেন ক্যানবেরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
বিকেলে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রামাণ্য চিত্রে তুলে ধরা হয় ১৯৭১। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতা আবৃত্তি করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন বাক্যকথন।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে একাত্তরের চিঠি পাঠ ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। Source: Supplied
মেলবোর্ন
বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে হবে বাংলায়। বিজয় দিবস উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের জন্য এমনই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশী কমিউনিটি ফাউন্ডেশন। সাথে ছিল শিশুদের অংকিত চিত্র প্রদর্শনী, যেখানে ফুটে ওঠে লাল সবুজ পতাকাসহ শাশ্বত বাংলা। অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে 'ভিক্টোরিয়ান সার্টিফিকেট অফ এডুকেশনে' উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও সনদ দেয়া হয়।
বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয় বীর শহীদদের প্রতি।
মেলবোর্নে বিজয় দিবস উদযাপন। ছবি: Mita Chowdhury Source: Supplied
এডিলেইড
এবারের বিজয় দিবসের অন্যতম আয়োজন ছিল সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়।
এডিলেইডের সেন্ট হেলেনস পার্কে গতকালকের 'সাবকা বিজয় মেলায়' অংশ নেয় ২৫টি দেশের প্রায় দু হাজার দর্শক। নেচে গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন নানা জাতি-সংস্কৃতির ১০টি সংগঠনের শিল্পীরা। মেলার আয়োজক সাউথ অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশী কমিউনিটি এসোসিয়েশন (সাবকা)।মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য 'সাবকা ভিক্টোরি ডে' পদক পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বিক্রম মদন। একই পদক পেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী সামিনা চৌধুরীও। বিশ্বব্যাপী বাংলা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ছড়িয়ে দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ পদক পান।
সাবকা বিজয় মেলায় ক্ষুদে শিল্পীরা। ছবি: Mahbub Siraz Tuhin Source: Supplied
সাবকা বিজয় মেলা। ছবি: Mahbub Siraz Tuhin Source: Supplied
ব্রিসবেন
প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন রকেট এন্টারটেইনমেন্ট আয়োজন করেছিল বিজয় দিবস কনসার্ট। ১৫ ডিসেম্বর ব্রিসবেনের এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ওয়ারফেজ। কনসার্টে দেশের গান পরিবেশন করে স্থানীয় ব্যান্ড স্যানসনম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রবাসী দু জন মু্ক্তিযোদ্ধাকে দেয়া হয় সম্মাননা।
বিজয় দিবস কনসার্টে গান পরিবেশন করছে স্থানীয় ব্যান্ড স্যানসনম। Source: Supplied
পার্থ
অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানান ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
প্রবাসীদের জন্য এ সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া এসোসিয়েশন অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (বাওয়া)। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ভালোভাবেই বিজয় দিবস উদযাপন করতে পেরেছেন সবাই।
অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান এবং নাচ পরিবেশন করেন পার্থ প্রবাসী শিল্পীরা। ছিল শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাও।
পার্থে বিজয় দিবস উদযাপন। ছবি: Nirjon Mosarrof Source: Supplied
হোবার্ট
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিল 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র'। বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন তাসমানিয়ার আয়োজনে, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নিয়ে ছিল তথ্যবহুল পরিবেশনা। রোববারের এ অনুষ্ঠানে আরো ছিল স্বাধীনতার নাটিকা, মুক্তির গান এবং বাচ্চাদের ছবি আঁকাসহ নানা আয়োজন।
হোবার্টে বিজয় দিবসের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশু- কিশোররা। Source: Supplied
ডারউইন
বিজয় দিবস কনসার্টের আয়োজন করেছিল চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন প্রবাসী শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উঠেন সবাই, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাংলা মায়ের বীর সন্তানদের।অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডেও বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে একসাথে মিলিত হন ক্রাইস্টচার্চ বাংলাদেশী কমিউনিটি। লাল সবুজ পতাকা হাতে সমস্বরে পরিবেশন করেন জাতীয় সঙ্গীত, শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন বীর শহীদদের।
ডারউইনে বিজয় দিবস কনসার্ট। Source: Supplied
ফুটবল, বিস্কুট দৌড় আর বালিশ খেলায় বিজয় দিবস উদযাপন করেন সবাই।
বিজয় দিবসে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ছবি: Badhan Elahi Source: Supplied