এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন তাঁর স্ত্রী এসথার ডুফলো এবং মাইকেল কার্মার। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এই পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
অমর্ত্য সেনের পর অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ এই সম্মান পেলেন। বিশ্ব দারিদ্র্য দূরীকরণে পরীক্ষামূলক বিশ্লেষণের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পেলেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ বিজ্ঞানি।
‘আব্দুল জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ দারিদ্র্য নিয়ে হাতে-কলমে কাজ করেছেন। দারিদ্র্যের নানা দিক নিয়ে স্ত্রী এসথার ডুফলোর সঙ্গে তার লেখা ‘পুওর ইকোনমিক্স’ বইটিও বিশ্ব জুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। কলকাতার সাউথ পয়েন্টের ছাত্র অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থনীতির প্রথম পাঠ নেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে।ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা-বাবা দুজনেই অর্থনীতির স্বনামধন্য অধ্যাপক। তার মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের অর্থনীতির অধ্যাপক। আর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। অভিজিতের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতাতেই।
Abhijit Banerjee speaks during a news conference at Massachusetts Institute of Technology in Cambridge, Mass., Monday, Oct. 14, 2019. Source: AP
১৯৬১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী, ৫৮ বছর বয়সী অভিজিৎ বর্তমানে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করছেন। তবে, অর্থনীতির কৃতি ছাত্র অভিজিতের পড়াশোনা বাংলায়। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পর, অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া আরেক বাঙালি অমর্ত্য সেন যে কলেজে পড়াশোনা করেছেন, সেই প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকেই অর্থনীতিতে স্নাতক হন অভিজিৎ। স্নাতকোত্তর করেন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে চলে যান বিদেশে। ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি। এর পরেই অধ্যাপনার জগতে প্রবেশ। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ডে অধ্যাপনার পাশাপাশি উন্নয়ন অর্থনীতি নিয়ে পরীক্ষামূলক গবেষণা চলতে থাকে। তার পর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে এখনও পড়ান তাঁর প্রথম স্ত্রী অরুন্ধতি তুলি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও কলকাতাতেই বেড়ে ওঠেন। কবির বন্দ্যোপাধ্যায় নামে দুজনের একটি ছেলেও ছিল। পরে অভিজিৎ-অরুন্ধতীর বিচ্ছেদ হয়। ২০১৬ সালে মারা যান এ দম্পতির ছেলে কবির।
অপর নোবেল বিজয়ী, ফরাসি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এসথার ডুফলোর সঙ্গে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১৫ সালে। এসথার ডুফলোও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিরই অর্থনীতির অধ্যাপক।
কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল জয়ের খবরে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লিখেছেন, অর্থনীতিতে নোবেল জয়ের জন্য অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হার্দিক অভিনন্দন। আরেক বাঙালি দেশকে গর্বিত করলেন। উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ব দারিদ্র্য দূরীকরণে কী কী পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেই গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল জয়। কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপেরও সদস্য ছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনীতিতে নোবেল জয়ের খবরে উচ্ছ্বাস চেপে রাখেন নি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। বলেছেন, গর্বিত। তিনি ফিরলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।এর আগে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এবং ম্যাককিনসে বিজনেস বুক অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার পেয়েছেন।
Esther Duflo (L) and her husband Abhijit Banerjee (R) who along with Michael Kremer (not pictured) are the winners of the Nobel Prize in Economic Sciences 2019. Source: EPA
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন ও বাংলাদেশের ড. মুহম্মদ ইউনুসের পর চতুর্থ বাঙালি হিসেবে নোবেল জয় করলেন অভিজিৎ।
এবার নোবেল পুরস্কারের ৯০ লাখ (৯ মিলিয়ন) সুইডিশ ক্রোনার যৌথভাবে ভাগ করে নেবেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, তার স্ত্রী এসথার ডুফলো এবং মাইকেল কার্মার। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।