বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘নির্মমতার’ শিকার হয়েছেন মুবাশ্বের হাসান।
সেই শাসনামলের সমালোচনার কারণে তাকে ৪৪ দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর মতে, বিগত ১৫ বছরে বলপূর্বক গুম করা হয়েছে সাত শতাধিক ব্যক্তিকে। মুবাশ্বের হাসান তাদেরই একজন।
তার মুক্তির পর, তিনি বলেন যে, তার অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে বললে সরকার তাকে এবং তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছে।
মঙ্গলবার ক্যানবেরায় সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, “একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে, যিনি জীবিকার প্রয়োজনে স্বৈরাচারি সরকার নিয়ে পড়াশোনা করেন, আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে, শেখ হাসিনার সরকার একটি অপরাধী মাফিয়া সংগঠনের মতো কাজ করেছিল।”
“অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা-সহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপক ছিল। তবুও সরকার দায় নিতে অস্বীকার করে।”
জুলাই মাসে ফলে বাংলাদেশে সূচিত হয়। এরপর, গতকাল মঙ্গলবার ক্যানবেরায় সংসদ ভবনের সিঁড়িতে জড়ো হন শতাধিক বিক্ষোভকারী।
বিদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালনকারীদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য ফেডারাল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীরা
ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের শিক্ষার্থী আবু আকিফ বলেন, “বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বে-আইনী গুম, নিয়মতান্ত্রিক দমন … এবং বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের” জন্য সাবেক বাংলাদেশ সরকারকে জবাব দিতে হবে।”
আকিফ বলেন, “আমরা যা চাই, তা সহজ: ন্যায়বিচার।”
“বিগত ১৫ বছর ধরে নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এবং লাখ লাখ নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার।”
“অস্ট্রেলিয়া দৃঢ়ভাবে একটি বার্তা দিতে পারে যে, তারা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে … আমরা দাবি করছি যে, এই দুষ্ট অপরাধীদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হোক।”
সরকারি চাকুরির কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। দৃশ্যত, এসব কোটার দ্বারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করছিল।
মাস ব্যাপি চলা এই আন্দোলন এক পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে পরিণত হয়। সহিংস দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হলে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয় এবং সহস্রাধিক ব্যক্তি আহত হয়।
বাংলাদেশ একসময়ে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল। সম্প্রতি এটি ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের দ্বারা জর্জরিত হয়েছে।
সমাজকর্মী মুবাশ্বের হাসান এই দাবীগুলো সমর্থন করেন। অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান এনজিও-গুলোকে সমর্থন করার জন্য এবং বিদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী লোকেরা যেন অস্ট্রেলিয়ায় আসতে না পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে বৃত্তি প্রদান করা হয় তার জন্য কিছু মানবাধিকার পর্যালোচনা পদ্ধতি প্রবর্তন করা উচিত অস্ট্রেলিয়ার।”
“এই সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বিচার বিভাগীয় [আমলা] এবং পুলিশ কর্মকর্তাগণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যাদের মধ্যে কেউ কেউ … মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকতে পারে।”
মঙ্গলবার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড এর একজন মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া এবং একটি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতে দেশটির রূপান্তরকে সমর্থন করবে।”
“সকল পক্ষকে সহিংসতা বন্ধ করার, সর্বজনীন মানবাধিকারকে সম্মান করার এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।’
“আমরা অভিযুক্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্ত ঘটনার ব্যাপক, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত সমর্থন করি। আমরা একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাই এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাকে সমর্থন করি।”
মুখপাত্র আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার ভাবছে না।
এসবিএস নিউজ মন্তব্যের জন্য ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
With additional reporting from Agence France-Presse.
This article contains AFP content that has been re-expressed in language by SBS. AFP is not responsible for errors originating from the translation process.