ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ফিল্ম স্টর্ম রাইডার্স এর মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত চাদনী শাহ এবং ফারহানা হুসেইন। তারা দু’জনেই যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। বাংলাদেশের সিলেটি পরিবারের এই দুই নারী স্টেকবোর্ডিং করেন যা এই ডকুমেন্টারি ফিল্মের মূল উপজীব্য।
প্রখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান আর্টিস্ট শন গ্লাডওয়েল এর পরিচালক এবং এটি প্রযোজনা করেছেন লিও ফেবার। তিনি অবশ্য স্ক্রিপ্টও লিখেছেন। ফিল্মটির অর্থায়ন করেছে এসবিএস এবং স্ক্রিন অস্ট্রেলিয়া।
আনুষ্ঠানিকভাবে এটি মুক্তি পেয়েছে ৬ জুনে, অস্ট্রেলিয়ায়।
ফিল্মটির মূল দুই মুসলিম নারীর চরিত্রে রয়েছেন চাদনী ও ফারহানা।
চাদনী শাহ, ২৬, এর জন্ম ও বেড়ে উঠা ইস্ট লন্ডনে। লন্ডনে তিনি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রিল্যান্স পার্সনাল ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি দুরন্ত। ‘মেয়ে হলেও আমি মেয়েদের মতো ছিলাম না। আমি ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম, মেয়েদের সঙ্গে মিশতাম না,’ বলেন লিভারপুল এফসি এর কট্টর সমর্থক চাদনী শাহ। তবে, যখন তার বয়স দশ বছরে উপনীত হয়, তখন থেকে তিনি হিজাব পড়া শুরু করেন। এর জন্য তাকে মূল্যও দিতে হয়। স্কুলে তাকে জ্বালাতন করা হতো। তার ওড়না লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো, মানুষ আজেবাজে মন্তব্যও করতো।
হাইস্কুলে উঠার পর ছেলেদের সঙ্গে তার খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তখন মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রতি তিনি আগ্রহী হলেও অচিরেই তার মোহমুক্তি ঘটে। এরপর তিনি বাস্কেটবলের প্রতি আগ্রহী হন এবং এতে নিজের স্থান খুঁজে পান। গত আট বছর ধরে তিনি স্থানীয় একটি নারী বাস্কেটবল দলে খেলছেন।চাদনীর মতো ফারহানার জন্ম ও বেড়ে ওঠাও ইস্ট লন্ডনে। ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে তার বাবা যুক্তরাজ্যে অভিবাসন করেন। একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী নারী হিসেবে তিনি সম-অধিকার নিয়ে সোচ্চার। ফারহানা বলেন, তিনি সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করতে চান। এ জন্যই তিনি স্কেটবোর্ডিং করছেন।
Source: Supplied
তিনি বলেন, মাথায় স্কার্ফ বেধে কেউ স্কেটবোর্ডিং করছে, এ রকম দৃশ্য লন্ডনে খুব কমই দেখবেন।
বছর তিনেক আগে চাদনী স্কেটবোর্ডিংয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। স্কেটবোর্ড কিনে তিনি ঘরেই অনুশীলন করা শুরু করেন। একটি পার্কে একদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয় লন্ডন-ভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ান আর্টিস্ট ও সাবেক স্কেটার শন গ্লাডওয়েলের সঙ্গে। চাদনীর বান্ধবী এবং আরেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ও স্কেটার ফারহানাও যোগ দেন তাদের দু’জনের সঙ্গে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে শন গ্লাডওয়েল তাদের দু’জনের কাছে প্রস্তাব করেন স্কেটিং নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভিডিও শুট করার জন্য। শন গ্লাডওয়েল যে অস্ট্রেলিয়ার সমকালীন একজন প্রখ্যাত আর্টিস্ট এটা এর আগ পর্যন্ত চাদনী ও ফারহানা জানতেন না।
এরপর চার মাস ধরে লন্ডনে এবং পরবর্তীতে সিডনিতে ফুটেজ ধারণ করা হয়। চাদনী এবং ফারহানাকে ছোট ভিআর ক্যামেরা দিয়েছিলেন প্রযোজক লিও ফেবার। সেই ক্যামেরা দিয়ে তারা দু’জন অনেক ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এভাবেই ৩০ মিনিট দৈর্ঘের ভিআর শর্ট ফিল্ম স্টর্ম রাইডার নির্মাণ করা হয়।
কী আছে এতে? এতে মূলত ইসলাম, স্কেটবোর্ডিং এবং সেক্সুয়াল পলিটিক্স তুলে ধরা হয়েছে।
লন্ডনে মুসলিম তরুণী হিসেবে চাদনী ও ফারহানা শুধু তাদের দৈনন্দিন জীবনের খণ্ডচিত্রের ভিডিও করেন নি, এর পাশাপাশি তারা বাস্তব-জীবনের নানা ঘটনার প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়াও তুলে ধরেছেন। যেমন, লন্ডনে অ্যাসিড আক্রমণ ও ইসলাম ফোবিয়া ছাড়াও তারা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেছেন।চাদনী শাহ এবং ফারহানা হুসেইন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হলেও ভাল বাংলা বলতে পারেন না।
Source: Supplied
এসবিএস বাংলার সঙ্গে তার দু’জনই ইংরেজিতে কথা বলেন। তবে, তারা সিলেটের আঞ্চলিক উচ্চারণে বাংলায় খানিকটা কথা বলেছেন।
এসবিএস বাংলার সঙ্গে চাদনী শাহ ও ফারহানা হুসেইনের সাক্ষাত্কার শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
স্টর্ম রাইডার্স সম্পর্কে আরও দেখুন: