আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বঘোষিত একটি আই-এস গ্রুপ হলো আইএস-কে। এই দলটি সম্প্রতি কাবুল এয়ারপোর্টে জনতার ভীড়ে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে, যা বিশ্বে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
এই দলটিতে কারা রয়েছে?
২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর খেলাফত ঘোষণার কয়েক মাস পর, পাকিস্তানি তালেবানের সংক্ষুব্ধ একদল যোদ্ধা আফগানিস্তানের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয় আঞ্চলিক একটি শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য। তারা আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
তখন তারা উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে, বিশেষত, কুনার, নাঙ্গারহার এবং নুরিস্তান প্রদেশে শিকড় গেড়ে বসে। ফলে, পরের বছরে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আইএস-এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের স্বীকৃতি লাভ করে।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকগণ বলেছেন, এটি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কাবুল-সহ অন্যান্য অংশেও স্লিপার সেল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
গত জুলাই মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি রিপোর্টে এদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এদের মাঝে ৫০০ জন থেকে শুরু করে কয়েক হাজার পর্যন্ত যোদ্ধা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
আইএস-কে এর ‘কে’ দ্বারা খোরাসান বুঝায়। পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার কিছু অংশকে ঐতিহাসিকভাবে খোরাসান বলা হতো।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিচালিত ভয়াবহ বেশ কয়েকটি আক্রমণের জন্য আইএস-এর আফগানিস্তান-পাকিস্তান শাখা দায়ী।
বিভিন্ন বোমা হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা বাদ দিয়ে বলা যায়, আইএস-কে সেই অঞ্চলে কোনো ভূখণ্ড দখলে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
তালেবান এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানগুলোতে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শরীয়া আইনের তালেবান সংস্করণকে আইএস-কে এর কাছে অনেক উদার মনে হয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাজাঙ্কট প্রফেসর আমিন সাইকাল বলেন, তালেবানদের চেয়ে আইএস-কে অনেক বেশি নৃশংস।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে বেসামরিক লোকদেরকে মসজিদে, মাজারে, জনসমাগম-স্থলে এমনকি হাসপাতালে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আইএস-কে।
মুসলমানদের বিভিন্ন ফির্কা, যাদেরকে তারা বিপথগামী মনে করে, তাদেরকে বিশেষভাবে লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে এই দলটি। যেমন, শিয়াদেরকে।
গত বছর একটি হামলার জন্য তাদেরকে দায়ী করা হয়েছিল, যে হামলায় পুরো বিশ্ব হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। কাবুলের শিয়া অধ্যুষিত এলাকার একটি হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ঢুকে এক বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ১৬ জন প্রসূতি ও গর্ভধারিনী নিহত হয়।
আইএস-কে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় ২০১৫ সালে। এখন তারা পাকিস্তানী এবং আফগান চরমপন্থীদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকে।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াতে তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য বলে তারা বলছে।
তালেবান ও আইএস-কে, এ দুটি গোষ্ঠীই কট্টর সুন্নী চরমপন্থী। তারপরও, এদের মধ্যে কোনো ভালবাসা অবশিষ্ট নেই।
ধর্মীয় বিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দিক নিয়ে এদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। এরা দু’দলই নিজেদেরকে দাবি করছে যে, তারাই সত্যিকারের ইসলামী জেহাদকারী দল।
ফলে এদের মাঝে রক্তক্ষয়ী লড়াই বেধেছে। ২০১৯ এর পরে এসব লড়াইয়ে তালেবানরাই বেশি জয়ী হয়েছে। আর, আইএস-কে এর উৎস দলটি যেখানে মধ্যপ্রাচ্যে ভূখণ্ড দখল করেছে, সেখানে তারা ভূমি দখলে ব্যর্থ হয়েছে।
এই দল দুটির মধ্যকার বিরোধ পরিলক্ষিত হয় আইএস এর বিবৃতিগুলোতে। এগুলোতে তালেবানদেরকে ধর্মত্যাগী বলে উল্লেখ করা হয়।
নিউলাইন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক রাশা আল আকিদি বলেন, সাম্প্রতিক আক্রমণটিতে আইএস-কে এর সফল হওয়ার পথ একটিই, তারা হয়তো তালেবানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে।
অন্যরা বলছে, এই দল দুটি পরস্পরের শত্রু বলার চেয়ে এ দুটিকে প্রতিদ্বন্দ্বি গ্রুপ বলাই শ্রেয়। আর, মাত্র ২,০০০ যোদ্ধা নিয়ে আইএস-কে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে সত্যিকারের কোনো হুমকিই সৃষ্টি করতে পারে না।
প্রফেসর ম্যালে দেশটিতে আরও আইএস আক্রমণের আশঙ্কা করছেন।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যরা চলে গেলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
২০১৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসকে-কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।