অস্ট্রেলিয়া ডে অনার্স লিস্টে এবার নারী, বহুসাংস্কৃতিক ও বৈচিত্রময় পটভূমির ব্যক্তিদের উপস্থিতি বেশি

Some of this year’s Australia Day Honours recipients (SBS)  02.jpg

Some of this year’s Australia Day Honours recipients Source: SBS

অস্ট্রেলিয়া ডে ২০২৩ অনার্স লিস্টে নারী ও বহুসাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের সংখ্যা এবার বেড়েছে। দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া বিশিষ্ট সেবা ও অসাধারণ অর্জনের জন্য অস্ট্রেলীয়দেরকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এ বছর অস্ট্রেলিয়া জুড়ে সর্বস্তর থেকে উঠে আসা ব্যক্তিদেরকে তাদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।


২০২৩ উপলক্ষে এ বছর ১,০৪৭ জন অস্ট্রেলীয়কে তাদের বিভিন্ন অবদানের জন্য স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

তিনটি শ্রেণীতে তাদেরকে এসব স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এগুলো হলো, অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া অনার্স ইন জেনারেল অ্যান্ড মিলিটারি ডিভিশন্স; মেরিটোরিয়াস অ্যাওয়ার্ডস; এবং মিলিটারিদের জন্য ডিস্টিংগুইশড অ্যান্ড কন্সপিকিউয়াস অ্যাওয়ার্ডস।
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অস্ট্রেলীয়দেরকে অভিনন্দন জানান গভর্নর-জেনারেল ড্যাভিড হারলি।

অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হচ্ছে সেই ১৯৭৫ সাল থেকে। এ বছর অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ৩৫৪ জন নারী, যা স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের ৪৮ শতাংশ। আর, এক্ষেত্রে এ পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ হার।

গভর্নর-জেনারেল বলেন, এই তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে কম প্রতিনিধিত্বকারী জনগোষ্ঠীগুলোর নমিনেশন বাড়ানোর জন্য আরও কাজ চলছে। এসব লোকদের মধ্যে রয়েছেন নারীরা, বহুসাংস্কৃতিক ও বৈচিত্রময় পটভূমির লোকজন এবং অ্যাবোরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগোষ্ঠীগুলো।

এবার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বয়স-সীমা ৩৭ থেকে ১০২ বছর পর্যন্ত লক্ষ করা গেছে।

এই তালিকাটিতে আরও রয়েছেন ৭৭ জন অস্ট্রেলীয়, যাদেরকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে অস্ট্রেলিয়াকে সহায়তা প্রদানের জন্য। আর, কোভিড-১৯ এর চলমান ও স্থায়ী অনার রোলেও তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জেনারেল ডিভিশনে অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া মেডেল পেয়েছেন এলিজাবেথ ড্রজ। পোলিশ ও বহুসাংস্কৃতিক জনগোষ্ঠীতে কয়েক দশক ধরে অবদান রাখার জন্য।

১৯৮২ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আসেন।

৩২ বছর ধরে তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি সার্ভিসের সিইও হিসেবে, ভিক্টোরিয়ান মাল্টিকালচারাল কমিশনের প্রধান হিসেবে, ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অফ মাল্টিকালচারাল এজড অ্যান্ড কমিউনিটি কেয়ার প্রভাইডারস-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এবং পাপুয়া নিউ গিনি অ্যাসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান সিরিয়ান চ্যারিটির পরামর্শদাতা হিসেবে।

আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর মাঝে অবদান রাখার কারণে মেম্বার অফ দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া পদক পেয়েছেন ফ্রেড আলালি।

আফ্রিকান মিউজিক অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার তিনি। আফ্রিকা ডে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ট্রেজারার ভিক্টোরিয়ান আফ্রিকান কমিউনিটিস অ্যাকশন প্লান তৈরি করেছেন। এছাড়া, নাইজেরিয়ান সোসাইটি অফ ভিক্টোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং আফ্রিকান অস্ট্রেলিয়ান মেন্টোরিং প্রোগ্রামের একজন নেতাও তিনি।

আর, ক্রীড়া জগতে নর্থ মেলবোর্ন ফুটবল ক্লাবের হাডল অ্যাডভাইজোরি কমিটির তিনি একজন অন্যতম নেতা। এছাড়া, ভিক্টোরিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের পলিসি ডাইরেক্টর ছিলেন তিনি। আর, ২০২০ সালে ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথের কোভিড রেসপন্স লিডের একজিকিউটিভও ছিলেন তিনি।
মেলবোর্নে L-G-B-T-I-Q+ কমিউনিটির জন্য অবদান রাখায় মেডেল অফ দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া লাভ করেছেন মাইকেল বার্নেট।

অস্ট্রেলিয়ান গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, ইন্টার সেক্স অ্যান্ড কুইয়ার মাল্টিকালচারাল কাউন্সিলের সেক্রেটারি এবং মিডসামা প্রাইড মার্চ-এর কন্টিনজেন্ট কো-অর্ডিনেটর ছিলেন তিনি।

বেশ কয়েক বছর ধরে হোমোফোবিক এবং ট্রান্স-ফোবিক প্রবণতা দেখে এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হন তিনি।

তিনি বলেন, আজকাল অনেক কমিউনিটিতেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসছে এবং উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিগুলোতে অবদান রাখার কারণে মেডেল অফ দ্য অর্ডার লাভ করেন ইনাম বারাকাত।

স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যান্সার নেটওয়ার্ক অস্ট্রেলিয়ায় কালচারাল ডাইভার্সিটি অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। বহু কমিউনিটিতে এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে বিদ্যমান সামাজিক বাধা-বিপত্তিগুলো দূরিকরণে কাজ করেন তিনি।

স্পেকট্রাম মাইগ্রান্ট রিসোর্স সেন্টার, মাইগ্রান্ট অ্যান্ড অ্যাসাইলাম সিকার ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামস এবং অস্ট্রেলিয়ান অ্যারাবিক কাউন্সিলেও তিনি কাজ করেছেন।

আর, ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি এসবিএস অ্যারাবিক রেডিও-তে প্রডিউসার ও প্রেজেন্টার হিসেবেও কাজ করেছেন।

তিন দশক ধরে ফস্টার কেয়ারার হিসেবে অবদান রাখায় মেডেল অফ দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া লাভ করেছেন বারবারা রাগেনডাইক।

বার্নারডম অস্ট্রেলিয়া, এসিটি চাইল্ড প্রটেকশন সার্ভিসেস এবং দ্য নিউ সাউথ ওয়েলস ডিপার্টমেন্ট অফ চাইল্ড প্রটেকশন-এ বারবারা ও তার স্বামী ডেভ ফস্টার কেয়ারার হিসেবে কাজ করেছেন সেই ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে। এই সময়ে তারা চারশ’রও বেশি শিশুর দেখাশোনা করেন।

এ বছর স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আরও রয়েছেন, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস স্মিথ-আলী। স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তিনি।

আর, তামিল-অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটিতে অবদান রাখার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন সেলভারাজাহ মূরালিধরণ। এছাড়া, লেবানিজ কমিউনিটি এবং আরবী-ভাষী কমিউনিটিতে অবদান রাখার জন্য মরণোত্তর স্বীকৃতি পেয়েছেন ইলিয়াস জর্জ নেমার।

গত বছরের জুলাই মাসে মারা গেছেন মিস্টার আর্চি রোচ। তাকে মরণোত্তর মেম্বার অফ দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া বা এএম স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। উদীয়মান ফার্স্ট নেশনস শিল্পীদেরকে সহায়তা করা, গীতিকার ও সুরকার হিসেবে এবং আদিবাসীদের অধিকার ও পুনর্মিত্রতার ক্ষেত্রে অবদান রাখায় তিনি এ স্বীকৃতি লাভ করেন।

অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডের জন্য যে-কোনো অস্ট্রেলিয়ানকে মনোনীত করতে পারেন যে-কেউ। আপনি যদি কাউকে এর জন্য যোগ্য মনে করেন, তাহলে তাকে নমিনেট করার জন্য ভিজিট করুন www.gg.gov.au.

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নন এ রকম ব্যক্তিও অনারারি মেম্বার হিসেবে অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া-তে নিয়োগ পেতে পারেন।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share